করোনা পরবর্তীতে মনসংযোগের অভাব, মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যায় ভুগছে শিশুরাও, দাবি ল্যানসেটের
করোনা পরবর্তীতে মনসংযোগের অভাব, মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যায় ভুগছে শিশুরাও, দাবি ল্যানসেটের
করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেলেও এর প্রভাব দীর্ঘদিন পর্যন্ত থেকে যায়। করোনা পরবর্তী সমস্যা বার বার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণটাই প্রাপ্ত বয়স্কদের। কিশোরদের করোনা পরবর্তী প্রভাব নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে আলোচিত হলেও শিশুদের ক্ষেত্রটা একেবারে অন্ধকারে রয়েছে। শিশুদের ওপরেও করোনা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এই বিষয়ে সেভাবে কোনও আলোচনা হয়নি। শিশুদের আক্রান্তের হার কম। করোনা পরবর্তী কালে পেটে ব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। শিশুদের স্মৃতি শক্তির ওপর করোনা প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
কীভাবে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল
২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত যে সমস্ত শিশু করোনা আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের একাংশের মা বা অভিভাবকদের কাছে এই বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। ল্যানসেট এক বিবৃতিতে জানায়, প্রায় ১১ হাজার শিশুর পরিবারের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়াও প্রায় ৩৩ হাজার শিশুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। এই শিশুদের করোনা পরীক্ষা করা হয়নি অথবা পরীক্ষা হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। কিন্তু শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ দীর্ঘদিন ছিল।
শিশুদের করোনা পরবর্তী প্রভাব
শিশুদের ক্ষেত্রে করোনা পরবর্তী প্রভাব মারাত্মক। দ্য ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেলফ পত্রিকায় এই বিষয়ে গবেষণা প্রকাশ পায়। মূলত ০-১৪ বছরের শিশু-কিশোরদের ওপর কোভিড পরবর্তী সমস্যা নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসমস্ত শিশুদের করোনা পরীক্ষা হয়নি কিন্তু করোনার উপসর্গ ছিল, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভুগেছে। অনেক সময় করোনা নেগেটিভ হলেও শিশুদের মধ্যে উপসর্গ প্রায় দুই মাসের বেশি পর্যন্ত ছিল। মূলত যেমস্ত শিশুরা করোনা বিধি পালন করেনি, তাদের মধ্যেই আক্রান্তের হার বেশি ছিল।
করোনা পরবর্তীকালে শিশুদের মধ্যে একাধিক সমস্যা দেখতে পাওয়া গেছে। যেমন মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, মেজাজ পরিবর্তন, ফুসকুড়ি ধরনের উপসর্গ। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ০-৪ বছরের শিশুদের মধ্যে মেজাজ পরিবর্তন, ফুসকুড়ি বা পেটে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা গিয়েছে। আবার ৪-১১ বছর বয়সীদের মধ্যে সব থেকে বেশি মেজাজ পরিবর্তন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এই বয়সের ব্যবধানের শিশু কিশোরদের মধ্যে করোনা পরবর্তী সময়ে সহজে রেগে যাওয়া, ধৈর্যের অভাব, মনোসংযোগের অভাব, মনে রাখতে না পারার মতো সমস্যাগুলো দেখতে পাওয়া যায়। ১২-১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ক্লান্তি, মেজাজ পরিবর্তন, মাথা ব্যথা, মনে রাখতে না পারা ও মনসংযোগের মতো সমস্যা করোনা পরবর্তীতে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেলেও শিশুদের মধ্যে অন্তত একটা উপসর্গ দীর্ঘ দুই মাস বা তার থেকে বেশি সময় দেখতে পাওয়া যায়।
সমীক্ষার সীমাবদ্ধতা
এই সমীক্ষার একধিক প্রতিকূলতা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। যেমন রোগ নির্নয় ও উপসর্গের সময়কাল। অনেকক্ষেত্রেই এই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য আক্রান্ত শিশুর পরিবার দিতে পারেনি। এছাড়াও করোনা পরবর্তী শিশু ও কিশোরদের মধ্যে যে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি বলেই গবেষকরা মনে করছেন।
এই বিষয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক, শিশুরা কতটা গুছিয়ে তাদের অভিভাবকদের বলতে পারবে সেই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া শিশুদের অনেক ক্ষেত্রে মেজাজ পরিবর্তনের মতো মনসংযোগের অভাব বা মনে রাখতে না পারার সমস্যাগুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু শিশুর মা বা বাড়ির অন্যান্য অভিভাবকরা সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। তাঁরা অনেকক্ষেত্রে মনে করছেন এই ধরনের পরিবর্তন করোনা পরবর্তী প্রভাবের জন্য আসেনি। এসেছে শিশুটির চঞ্চলতার জন্য। যার জেরে সঠিক তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে করোনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাসিম্পটোমেটিক ছিল। যার জেরে তথ্য সম্পূর্ণ হয়নি এই গবেষণায় মনে করা হচ্ছে।
ব্যান্ডকে টাকা মেটানো নিয়ে কনেপক্ষের সঙ্গে অশান্তি, রাগে নিজের বিয়ে ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বর