ব্রিটিশ রানীর সজ্জাশিল্পী প্রকাশ করেছেন পাঁচটি রাজকীয় রহস্য
ব্রিটেনের রানীকে সেবা দিতে গিয়ে কয়েকটি রাজকীয় রহস্য প্রকাশিত হয়েছে, তার নিকটতম সহযোগীর লেখা একটি বইয়ে। অ্যাঞ্জেলা কেলি, রানির পোশাক প্রস্ততকারকের পাশাপাশি রানীর একজন বন্ধুও ছিলেন।
রানীর জন্য কাজ করার সময়গুলোর কথা নেপথ্যে বর্ণনা করেছেন তিনি।
রানির সজ্জাশিল্পী এবং তার পোশাক- রাজতন্ত্রের দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়।
বইটির সারমর্মতে বলা হয়েছে: "রানী ব্যক্তিগতভাবে অ্যাঞ্জেলাকে তাদের অতুলনীয় বন্ধন বিশ্বের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আশীর্বাদ দিয়েছেন"।
বইটির আকর্ষণীয় শিরোনামগুলো এই সপ্তাহে সেলেব্রিটি ম্যাগাজিন হ্যালোতে যুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে কী জানার আছে?
১. রানিকে জুতা পরিয়ে দেয়ার আলাদা লোক আছে
মিজ কেলি, যিনি ২০০২ সাল থেকে রানিকে পোশাক পরিয়ে আসছেন, তিনি তার বইতে নিশ্চিত করেছেন যে রানী তার জুতা পরার জন্য একজন রাজকর্মী নিযুক্ত করেছেন।- এবং তিনি এই কাজটি করে থাকেন।
মেস কেলি লিখেছেন: "রানির নিজের জন্য খুব কম সময় থাকে এবং নিজের জুতা পরার মতো সময় তার নেই, এবং আমাদের জুতার মাপ যেহেতু একই তাই এখান থেকেই ধারণা করা যায়।"
আরও পড়তে পারেন:
প্রধানমন্ত্রী জনসন কি রানিকে বিভ্রান্ত করেছেন
সরে দাঁড়াচ্ছেন রানি এলিজাবেথের স্বামী
রানি এলিজাবেথের স্বামীর বেফাঁস কিছু উক্তি
এক নম্বর নিয়ম: 'রানিকে চুমু খাবেন না'
২. জেমস বন্ডের আইকনিক বাক্যটি বলতে চেয়েছেন রানি
মিজ কেলি বলেছেন যে, জেমস বন্ড খ্যাত অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেইগের সাথে ছোট একটি দৃশ্যে অভিনয় করার প্রস্তাবটি রানী গ্রহণ করতে মাত্র "পাঁচ মিনিট" সময় নিয়েছেন।
"তিনি এই ধারণাটি দেখে খুব আনন্দিত হয়েছিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। আমি তখনই জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কোন সংলাপ বলতে চান কিনা। বিনা দ্বিধায় রানি জবাব দিয়েছিলেন: 'অবশ্যই আমাকে কিছু বলতে হবে। আর যাই হোক তিনি (জেমস বন্ড) তো আমাকে উদ্ধার করতে আসছেন'," মিজ কেলি রানীর এই মন্তব্যের কথা স্মরণ করেন।
"আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে মি. ক্রেইগের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর শুরুতে তিনি কী বলতে চাইবেন: 'শুভ সন্ধ্যা, জেমস,' নাকি 'শুভ সন্ধ্যা, মিঃ বন্ড', এবং তিনি বন্ডের চলচ্চিত্র নিয়ে ভালো ধারণা রাখেন। এজন্য তিনি দ্বিতীয় অপশনটা বেছে নেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমি… সুসংবাদটি পরিচালক ড্যানি বয়েলের কাছে পৌঁছে দেই। আমি তাকে গিয়ে বললাম যে রানির একমাত্র শর্ত হল যে তিনি বন্ডের সেই প্রচলিত লাইনটি বলবেন যে: "শুভ সন্ধ্যা, মিঃ বন্ড"। এ কথা শুনে মনে হচ্ছিল মি. বয়েল যেন তার চেয়ার থেকেই পড়ে যাবেন।
৩. রাজকীয় ঘোড়দৌড়ে রানির উপস্থিতি শুধু ঘোড়া দেখার জন্য নয়
রয়্যাল অ্যাসকোট বা রাজকীয় ঘোড়দৌড়ে রানির বার্ষিক উপস্থিতি বহুল দর্শনীয় একটি উপলক্ষ।
সেখানে আসা দর্শকেরা কেবল ঘোড়াগুলোর দিকে নজর রাখে, তা নয় - তাদের দৃষ্টি থাকে রানীর পরা হ্যাট বা টুপির দিকেও। অনেকে রানীর এই টুপির রঙ কী হবে তা নিয়ে বাজি ধরে থাকেন।
মিজ কেলি বলেন, যখন রানি জানতে পারলেন এ ধরণের বাজি গত এক বছর ধরে চলে আসছে। তখন তিনি খেলার শেষ পর্যায়ে বুকমেকার প্রধানের সঙ্গে একটি বিষয়ে সম্মত হন। তার হ্যাটের প্রকৃত রঙটি যেন শীঘ্রই সনাক্ত করা না যায় সেজন্য বিভ্রান্ত তিনি প্রাসাদে অন্য ধরণের টুপি ফেলে রাখতেন।
মিজ কেলি লিখেছেন: "প্যাডি পাওয়ারের মালিকের সাথে আমার একটি বৈঠক হয়েছিল যাতে আমরা একমত হয়েছি যে কোন ধরণের প্রতারণা এড়াতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে রানির টুপির রঙের উপর বাজি দেওয়া বন্ধ করা হবে, তবে রানির টুপি রঙ অনুমান করা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং সম্ভবত কেউ কিছুটা অর্থ জিততে পারে।
৪. মিশেল ওবামাকে আলিঙ্গনের সাথে অভিবাদন জানানো ছিল 'প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি'
মিজ কেলি বলেন, "২০০৯ সালে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাকে আলিঙ্গন করার মাধ্যমে রানী রাজকীয় প্রোটোকল ভঙ্গ করেছিলেন, এমন খবরও সত্যি।
"বাস্তবে রানির জন্য সেটা ছিল এক নারীর প্রতি আরেক নারীর স্নেহ ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তির মতো এবং সত্যিই এমন কোনও প্রোটোকল নেই যা মেনে চলতেই হবে," তিনি বলেন।
"যখন কেউ মমতা অনুভব করেন বা কোন রাষ্ট্রীয় সফরে স্বাগতিক দেশের প্রতিনিধি যখন রানিকে এগিয়ে আসার পথ দেখান, তখন এটি সত্যি মানবিক উদারতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং রানী সব সময় তা উষ্ণভাবে স্বাগত জানান। কেউ যদি রানীর ঘনিষ্ঠ হন, তাহলে তাতে হুমকির কিছু নেই। এটা পুরোটাই বিশ্বাস। "
মিসেস ওবামা তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন, তারা দুজন দীর্ঘ সময় ধরে হিল পরে চলার জন্য রাজী হওয়ার কারণে দিন শেষে তাদের পা ব্যথা হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধুমাত্র "দুজন ক্লান্ত নারী ছিলাম যারা তাদের জুতার কারণে যন্ত্রণা ভোগ করছিল।"
৫. রয়েল ক্রিসটেনিং গাউনটির পেছনে রয়েছে একটি অস্বাভাবিক রহস্য
মিসেস কেলি প্রকাশ করেছেন যে "কড়া" ইয়র্কশায়ার চা কীভাবে রয়্যাল ক্রাইস্টেনিং গাউনটির একটি প্রতিরূপ বা রেপ্লিকা তৈরি করতে সাহায্য করেছিল যেটা কিনা ২০০৮ সালে জেমস, ভিসকাউন্ট সেভার্নের ক্রাইস্টেনিং-এর জন্য প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল।
"এই পোশাকটিকে যেন আসল পোশাকটির মতো দেখায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সেটাকে ইয়র্কশায়ার চায়ে ডু্বিয়ে রঙ করেছি (যে চা অনেক কড়া)," মিস কেলি সেখানে বলেন।
"আমরা লেইসের প্রতিটি টুকরো ড্রেসারের রান্নাঘর থেকে আনা একটি ছোট বাটিতে রেখেছিলাম। সেই বাটিতে ঠাণ্ডা পানি এবং একটি চায়ের ব্যাগ ভরা ছিল। ওই পানিতে লেইসগুলো পাঁচ মিনিট রেখে দেয়া হয়। এবং নিখুঁত রঙ আসা পর্যন্ত নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।"