মহাকাশে সাতটি পৃথিবী-সদৃশ গ্রহে কি বাস ভিনগ্রহীদের! খোঁজ দেবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
মহাকাশে সাতটি পৃথিবী-সদৃশ গ্রহে কি বাস ভিনগ্রহীদের! খোঁজ দেবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
আর মাত্র পাঁচ মাস। তারপরই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশে তাদের কাজ শুরু দেবে। তারা মহাবিশ্বের কাছে ছুড়ে দেবে অবধারিত সেই প্রশ্ন, আমরা কি মহাবিশ্বে একা? সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ পর্যবেক্ষণে প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় থাকবেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নতুন চোখ দিয়ে মহাবিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ভিনগ্রহীদের সাড়া পাওয়ার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুণবে।
সাতটি পৃথিবীর আকারের গ্রহে আবাসস্থল!
টেলিস্কোপটি একটি অনন্য গ্রহ ব্যবস্থার দিকে পরিচালিত হবে। তা পাঁচ বছর আগেই বিশ্বব্যাপী শিরোনাম হয়েছিল। ২০১৭ সালে নাসার ঘোষিত ট্র্যাপিস্ট-১ সিস্টেম গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠবে বলে মনে করা হয়েছিল। কারণ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ইনফ্রারেডে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করা শুরু করবে৷ তাঁরা পর্যবেক্ষণ শুরু করে ট্রাপিস্ট ১ নামক লাল বামন তারকার সংসারে, যা সাতটি পৃথিবীর আকারের গ্রহের একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারের আবাসস্থল।
ভিনগ্রহীদের সন্ধান মিলতে পারে ওই গ্রহে
নাসা খোঁজ চালাচ্ছে, "কোন ধরনের গ্রহে থাকতে পারে এলিয়েনরা। ভিনগ্রহীদের জীবন থাকতে পারে এমন গ্রহের খোঁজেই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে তারা পাঠিয়েছে মহাকাশে। ট্র্যাপিস্ট ১ তেমনই এক নক্ষত্র, যাকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে সাতটি পাথুরে গ্রহ। এই সিস্টেম দেখে নাসার মনে হয়েছিল ভিনগ্রহীদের সন্ধান মিলতে পারে এখানে। নাসা মহাকাশে টেলিস্কোপ ব্যবহারেই সিস্টেমটি আবিষ্কার করে বলে জানায়।
ট্র্যাপিস্ট-১ সিস্টেম কী?
নাসা জানায়, ট্র্যাপিস্ট ১ সিস্টেম হল আমাদের নিজস্ব সৌরজগতের পরে সবথেকে বেশি গবেষণা করা গ্রহ ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতমষ এটি পৃথিবী থেকে মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সাতটি পাথুরে এক্সোপ্ল্যানেট ওই বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। নাসা জানিয়েছিল, ওই সাতটির মধ্যে তিনটি গ্রহে বাসযোগ্য হওয়ার সমস্ত গুণাবলী রয়েছে। মূল নক্ষত্রের পরিমণ্ডলে একটি পাথুরে গ্রহে জল থাকার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।
পৃথিবীর মহাসাগরের থেকে অনেক বেশি জল!
নাসা জানিয়েছে, পৃথিবী থেকে প্রায় ২৩৫ ট্রিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত সাতটি গ্রহের সবকটিতেই তাদের পৃষ্ঠে জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সাতটি গ্রহ নিয়ে গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, ওই বামন নক্ষত্রের সবথেকে কাছের গ্রহে বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প, অন্য গ্রহে তরল জল এবং সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহে বরফ আকারে পৃথিবীর মহাসাগরের থেকে অনেক বেশি জল রাখতে পারে।
একই ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি সাত গ্রহ
২০২১ সালের একটি সমীক্ষা আরও প্রকাশ করেছে যে, ট্র্যাপিস্ট ১-এর গ্রহগুলি সম্ভবত একই ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি। কিন্তু তারা পৃথিবীর থেকে আলাদা। এর অর্থ হতে পারে যে, ওইসব গ্রহ লোহা, অক্সিজেন, ম্যাগনেসিয়াম এবং সিলিকনের মতো বেশিরভাগ উপাদানগুলি একই অনুপাত ধারণ করতে পারে। গ্রহগুলি সৃষ্টিতেই একইরকম বৈশিষ্ট্যযুক্ত বলে মনে করছে নাসা।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কী খুঁজবে?
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ট্র্যাপিস্ট ১ নামক সিস্টেমের উপর ফোকাস করে এই গ্রহগুলিতে বায়ুমণ্ডলের লক্ষণগুলি সন্ধান করবে। নাসা বলেছে, মাঝের গ্রহটিকে অর্থাৎ চার নম্বর গ্রহটিকে টার্গেট করা হবে। কারণ এটি ঠিক ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। ওই গ্রহটিকেই বিজ্ঞানীরা বাসযোগ্য অঞ্চল বলে প্রাধান্য দিচ্ছে। ওই গ্রহটির অবস্থানকে গোল্ডিলক্স জোন হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। এটি এমন একটি গ্রহ যে, নক্ষত্র থেকে কক্ষপথের দূরত্বে গ্রহের পৃষ্ঠে তরল জলের জন্য উত্তাপের পরিমাণ সঠিক।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের বাসযোগ্যতা বিষয়ক তথ্য
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের পরিমাপ ওই গ্রহের বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আরও তথ্য যোগ করেছে বলে জানিয়েছে নাসা। যদিও হাবলের কাছে গ্রহগুলির সম্ভাব্য বাসযোগ্য বায়ুমণ্ডল রয়েছে কি না তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা নেই। তবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এটি আবিষ্কার করেছে যে, গ্রহগুলির মধ্যে অন্তত তিনটি ডি, ই এবং এফ গ্যাস এবং হাইড্রোজেন-প্রধান বায়ুমণ্ডল রয়েছে।
ওই গ্রহে প্রাণ নিয়ে গবেষক-গ্রহ বিজ্ঞানীর মত
কোরনেল ইউনিভার্সিটির গ্রহবিজ্ঞানী নিকোল লুইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, "ওই গ্রহে যে প্রাণ রয়েছে, আমরা সেই অনুধাবন করেছি। কারণ আমরা কার্বন ডাই অক্সাইড দেখতে পাচ্ছি, যা একটি সত্যিই শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওয়েবে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমরা ওই এলাকায় অনেক বেশি রেজোলিউশন দেখতে পেয়েছি। তাই ওই গ্রহে যে প্রাণ থাকতে পারে, তা অনুমনা করা হচ্ছে। এবার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কী ছবি দেখাতে পারে, তার দিকেই তাকিয়ে আমরা।
মহাশূন্য সবুজ গাছ গজিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে নাসা, টুইট-ভিডিও-য় নতুন আশা