For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

ঘুম ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব, কিন্তু ভালো ঘুমের রহস্য কী?

আমাদের জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় কাটে ঘুমিয়ে। ঘুম ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। একই সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠা মানুষের একটি অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

  • By Bbc Bengali

ঘুম ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব
Getty Images
ঘুম ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব

আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক তখন স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণ করে।শরীর ক্ষতিকারক উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলে সব ঠিকঠাক করে যাতে জাগার পরে শরীর আবার ঠিকমত কাজ করতে পারে।

একটুখানি ঘুমের অভাবও আমাদের ভালো থাকা না থাকাকে অনেকখানি প্রভাবিত করে।অনেকেই আছেন যারা এক রাত না ঘুমালেই একদম ভেঙে পড়েন। তিন রাত না ঘুমালে আমাদের কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়।

এক গবেষণা বলছে, কেউ টানা ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা জেগে থাকলে যে ধরনের প্রভাব পড়ে, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেও মস্তিষ্কে একই ধরনের প্রভাব পড়ে।

সময়ের সাথে সাথে এ ক্ষতির মাত্রা বাড়তে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ১১ দিন না ঘুমানোর ফলে আচরণ ও কাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। মনোযোগ ও শর্ট টাইম মেমোরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হেলুসিনেশন হয়, এমনকি মস্তিষ্ক বিকৃতিও হয়।

বিজ্ঞানীরা বরাবরই যথেষ্ট ঘুমের ওপরে জোর দিয়ে আসছে। ঘুমের ক্ষেত্রে আলোর প্রভাব কতটা জরুরী তা হয়ত কিছুটা আড়ালেই রয়ে গেছে।

শরীর-মন-ঘুম: কেন দিনের আলো এত গুরুত্বপূর্ণ

ঘুম নিয়ে যেসব ধারণা আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে

কম ঘুমে আয়ু কমে: রাতের ভালো ঘুম যেভাবে পাবেন

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো

আলোর ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হল, এটি আমাদের চোখের বিশেষ আলোক সেন্সরের সাহায্যে আমাদের দেহঘড়ি বা বডি ক্লক নির্ধারণ করে।

মানুষের চোখ যে কোনো পরিবেশে আলো এবং অন্ধকার চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী শরীরে সারকাডিয়ান ছন্দ বা ২৪ ঘণ্টা পর পর শারীরিক কার্যক্রম চালু ও বন্ধ হওয়া নির্ধারণ করে।

কারো চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার বডি ক্লকও নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ঘুমাতে সমস্যা হয়।

২৪ ঘণ্টা অন্ধকারে থাকলে বা আলোর সংস্পর্শে না আসলেও মানুষের বডি ক্লকে সামান্যই পরিবর্তন হয়। গবেষণা বলছে, সেক্ষেত্রে আধ বা এক ঘণ্টা এদিক-ওদিক হতে পারে।

ঘুমের ক্ষেত্রে আলোর প্রভাবের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ জেট লেগ। আপনি প্লেনে চড়ে ভিন্ন টাইম জোনের কোনো দেশে যাওয়ার পরে দেখবেন আপনার শরীর ধীরে ধীরে ওই দেশের টাইম জোনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। কয়েকদিন যাবার পরেই দেখবেন রাতের বেলা আপনি ঘুমাতে পারছেন, দিনে জেগে থাকতে পারছেন।

১৮০০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই বাইরে কাজ করত। ফলে সরাসরি আলোর সংস্পর্শে থাকত।

এখনকার অফিসগুলোতে মানুষ বুঝতেই পারে না কোনদিকে বেলা গড়াল আর কখন সূর্য ডুবল। কারণ বেশিরভাগ মানুষের কর্মক্ষেত্রই এখন দালানের ভেতরে। বাইরের কাজ, যেমন মাছ ধরা বা কৃষিকাজ, আমেরিকার মোট চাকরির মোটে ১ শতাংশ।

যেহেতু আমরা দীর্ঘসময় ধরে সূর্যের আলো বঞ্চিত হচ্ছি, এর প্রভাব পড়ছে আমাদের ঘুমের ওপরে তথাপি আমাদের ভালো থাকার ওপরে। সূর্যের আলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। কার, কী মাত্রায় আলো দরকার তা হয়ত ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কোনো সংশয় নেই যে অধিকাংশ দালানের ভেতরে আলোর যে ব্যবস্থা আছে তা আমাদের শরীরের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর অভাবে ইউরোপের ২-৮ শতাংশ মানুষ এক ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছে যার নাম সিজনাল ইফেক্টিভ ডিসঅর্ডার।

এমন আরো অনেক এলাকা আছে যেখানে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে। সবচেয়ে ভয়ানক হল এর ফলে ছয় বছর পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে।
Getty Images
রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে। সবচেয়ে ভয়ানক হল এর ফলে ছয় বছর পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে।

রাতের শিফটে কাজ করা

যারা রাতের বেলা কাজ করেন তাদের জন্য আলোর বিষয়টি আরো গুরুতর।

তাদেরকে এমন সময় কাজ করতে হয় যখন তাদের শরীর চায় ঘুমাতে। ওই সময় শরীর কোনো ধরনের মাথা খাটাতে বা সতর্ক থাকতে চায় না অথচ সেটাই করতে হয়। যারা রাতে কাজ করে তারা হয়ত দিনে একটু ঘুমিয়ে রাতের ঘুমের অভাব পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ সাধারণত তারা দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ঘুমায় আর ঘুম তত গভীরও হয় না।

তাদের যখন জেগে থাকার কথা তারা তখন ঘুমায়, যখন ঘুমানোর কথা তখন জেগে থাকে আর এ কারণে তাদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাতে কাজ করার সাময়িক প্রভাব হল, তথ্য-উপাত্ত ঠিকভাবে বুঝতে না পারা, মনে রাখতে না পারা আর কিছু আচরণিক অস্বাভাবিকতা।

রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে। সবচেয়ে ভয়ানক হল এর ফলে ছয় বছর পর্যন্ত আয়ু কমে যেতে পারে।

নাইট শিফটে কাজ করা ৯৭ শতাংশ লোক কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। যত বছর ধরেই তারা কাজ করুক না কেন।

তারা তাদের শারীরবৃত্ত পরিবর্তন করতে পারে না। অফিসে যত আলোই থাকুক না কেন তা কখনোই দিনের আলোর সমকক্ষ নয়।অফিসের কৃত্রিম আলোর চেয়ে দিনের স্বাভাবিক আলো ২৫০ গুণ প্রখর।

রাতের শিফট শেষ করে তারা যখন বাসায় যায় তখন তাদের শরীর সকালের আলোর সংস্পর্শে আসে। এই আলো তাদের শরীরে এই সংকেত পৌঁছায় যে এখন জাগার সময় হয়েছে।

হার্ভাডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের শিফটে কাজ করা লোকজনের অনেকে নিশাচর হয়ে যান। তারা কিছুতেই দিনের আলোয় বের হতে চান না। তবে অধিকাংশ মানুষের জন্য এটি কোনো বাস্তব সমাধান নয়।

রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে
Getty Images
রাতে কাজ করার বেশ মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে

সূর্যের আলো জরুরী

অধিকাংশ নার্সিং হোমে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছায় না।

বেশিরভাগ হোমের ভেতরেই হালকা আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বাসিন্দারা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হন। এসব নার্সিং হোমের বাসিন্দাদের ঘুমের সমস্যা হওয়াটা খুবই সাধারণ ঘটনা।

এক ডাচ গবেষণায় নার্সিং হোমগুলোর বেডরুম অন্ধকার রেখে বাকি জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এর ফলে, সেখানকার বাসিন্দাদের দিনের বেলা ঝিমানোর সময় কমে, রাতের বেলা ঘুমানোর সময় বেড়ে যায়। তাদের মানসিক সামর্থ্য ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

আলোর অভাবের বিষয়টি শুধু আলোর পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না। এর সাথে সময়ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সন্ধ্যার মৃদু আলো আমাদের বডি ক্লকের বিলম্ব ঘটায় ফলে পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। সকালে আলো বডি ক্লক এগিয়ে আনে, এর ফলে সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা যায়।

যখন মানুষ বাইরে কাজ করত তখন এটা কোনো সমস্যা ছিল না। সন্ধ্যার আলো ঘুমের যে দেরি ঘটাতো, সকালের আলো সে সময়টা এগিয়ে নিতো।

দিনের আলো আমাদের দেহঘড়ির অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে
Getty Images
দিনের আলো আমাদের দেহঘড়ির অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে

কিন্তু এখন খুব কম লোকই সকাল ও সন্ধ্যার আলো দুটোরই সংস্পর্শে আসে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি ভালো উদাহরণ যারা সকালে একটু দেরিতে দিন শুরু করে আর সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে থাকে।

সন্ধ্যার আলো তাদের বডি ক্লক পিছিয়ে দেয়।মানে তারা দেরিতে ঘুমায় এবং দেরিতে ওঠে।

বয়ঃসন্ধিকাল ও প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে এ বিষয়টি সংহত হয় যার ফলে বডি ক্লক প্রায় দুই ঘণ্টা পিছিয়ে যায়।

ধূমপান, মদ্যপান কিংবা অরক্ষিত যৌন মিলনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে যত আলোচনা করা হয়, ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তা এবং এক্ষেত্রে আলোর ভূমিকা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না।

ঘুম নিয়ে পর্যাপ্ত আলাপ আলোচনা হলে মানুষ এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে পারত। পর্যাপ্ত আলো পাওয়া, দিনের আলো ও সন্ধ্যার আলোর সংস্পর্শে আসার বিষয়ে সতর্ক হত। নীতিনির্ধারকরাও বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজের সময়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার সময় নির্ধারণ করতে পারতেন।

ঘুমাতে যাওয়ার আগে যতটা কম পারা যায় আলোর সংস্পর্শে আসা আর সকালের আলোতে যত বেশি থাকা যায় ততই আপনার ভালো ঘুম হবে। এবং একই সময়ে ঘুমাতে পারবেন।

English summary
It is impossible to survive without sleep, but what is the secret of good sleep?
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X