For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

ইরান-আমেরিকা: যে পাঁচ কারণে সংকট সমাধান হচ্ছে না

ইরান ও আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা কমলেও যেসব কারণে দুইটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, সেসব কারণের পরিবর্তন হয়নি।

  • By Bbc Bengali

কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর তেহরানে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী বিক্ষোভ
EPA
কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর তেহরানে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী বিক্ষোভ

ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যার ঘটনা পুরাদস্তুর একটি যুদ্ধে রূপ নেয়নি।

সে হিসাবে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে বলা যেতে পারে।

কিন্তু দুইটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাবার মত যেসব কারণ রয়েছে, সেসব কারণের কোনটিই পরিবর্তন হয়নি। কেন এই সংকটের এখনো সমাধান হয়নি, তাই এখানে বর্ণনা করা হলো-

১) সাময়িক উত্তেজনা প্রশমন

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই উত্তেজনার প্রশমনকে পুরোপুরি হ্রাস বা কমে যাওয়া বলা যাবে না।

ইরানের নেতারা- যারা জেনারেল সোলেইমানি হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছিলেন, তারা পাল্টা হামলা করার জন্য যা করার সেটা করেছেন। ইরান চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে জবাব দিতে। সুতরাং নিজেদের ভূখণ্ড থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করে সেই জবাব দিয়েছে।

কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপের বাস্তব এবং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা খুব দ্রুত কিছু একটা করতে চেয়েছিল, পুরাদস্তুর একটি যুদ্ধ শুরু করতে চায়নি।

সুতরাং এই অধ্যায় এখনো সমাপ্ত হয়নি বলেই ইরানের বিশ্লেষকরা বলছেন।

তারা আরো বলছেন যে, ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত করার ঘটনাটি নিজে থেকে স্বীকার করে নেয়াকে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ইরানের আরেকটি পদক্ষেপ বলে যে মনে করা হয়, সেটাও ভুল।

ইরানের প্রথমে এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে।

কিন্তু যখন আমেরিকানরা দাবি করে যে, তাদের কাছে বিপরীত গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, ইউক্রেনের তদন্তকারীরা মিসাইল হামলার নমুনা দেখতে পান, যখন স্বাধীন তদন্তকারীরা বেশ কিছু ভিডিও দেখতে পান যে, বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে, তখন ইরানের সামনে বিষয়টি স্বীকার করে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

আরো পড়ুন:

ইরান হামলা: সঙ্কটে কে জিতলো কে হারলো

যুক্তরাষ্ট্রের চারটি দূতাবাস টার্গেট করেছিল ইরান, ট্রাম্প

বিমান ভূপাতিত করার অভিযোগ স্বীকার করেছে ইরান

ভূপাতিত বিমান নিয়ে 'মিথ্যে' বলায় ইরানে বিক্ষোভ

মিসাইলের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, যাতে ১৭৬জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হয়।
AFP
মিসাইলের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, যাতে ১৭৬জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হয়।

ইরান যখন খুব তাড়াতাড়ি বুলডোজার দিয়ে বিধ্বস্ত বিমানের টুকরোগুলোকে পরিষ্কার করতে শুরু করে, তখনি পরিষ্কার হয়ে যে, ইরান জানতো যে আসলে কি ঘটেছে। সেটা না হলে দুর্ঘটনাস্থলের কোন কিছুই ইরান স্পর্শ করতো না।

ইরানের এই স্বীকার করে নেয়ার পেছনে দেশটির অভ্যন্তরীণ সমস্যারও অবদান রয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগেই দেশটিতে দুর্নীতি আর ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির কারণে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।

এরপরে দেখা যাচ্ছে, কত দ্রুত আবার বিক্ষোভ দানা বেধে উঠেছে। সুতরাং এটা আসলে আমেরিকানদের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমন নয়, বরং ঘরে বিক্ষোভ হ্রাসের একটা চেষ্টা।

২) যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পাল্টাচ্ছে না

যুক্তরাষ্ট্র কেন কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করলো এবং ইরানের আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ইয়েমেনে হত্যার চেষ্টা চালালো? দেশটি দাবি করেছে- হয়তো আইনি কারণে- অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে হামলা ঠেকাতে আত্মরক্ষা হিসাবে তারা ওই হামলা করেছে।

তবে এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নন অনেক বিশ্লেষক অথবা ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের অনেক সমালোচক।

ইরান যাতে বাড়াবাড়ি না করে, সেজন্য একটি পরিষ্কার সীমা বেধে দেয়ার জন্যই সম্ভবত এই হামলা।

সাময়িকভাবে এটি কাজ করতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড চালানোর সময় ইরান খুব সতর্কভাবে এগোবে।

তবে একই সময়ে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী পদক্ষেপ নেয়ারও হুমকি দিচ্ছেন। আবার তিনি এই ইঙ্গিতও দিচ্ছেন যে, তিনি এখনো মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনতে চান।

তিনি এটাকে অন্য কারো সমস্যা হিসাবে মনে করেন। এর ফলে শক্ত বার্তা দেয়ার বিষয়টি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

ইরানের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তা তেহরানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারেনি। বরং উল্টো ইরান নিজস্ব ধরণের একটি চাপ প্রয়োগ কৌশল বেছে নিয়েছে।

একদিকে তেহরানের ওপর দ্বিগুণ চাপ দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, আবার ওই এলাকা থেকে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনতে চাইছে।

কিন্তু এই দুইটি জিনিস একই সঙ্গে পাওয়া সম্ভব নয়।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:

ফিলিপিন্সের আগ্নেয়গিরিতে 'বিপজ্জনক অগ্নুৎপাতের' আশঙ্কা

এক টেস্টে মুশফিকরা পাবেন ছয় লাখ, কোহলিরা কতো?

ইরানের পদকজয়ী নারী অলিম্পিয়ান কেন নিজ দেশের বিপক্ষে?

দাবানলের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রাণ

মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

৩) ইরানের কৌশলগত লক্ষ্য একই রয়েছে

ইরানের অর্থনীতি হয়তো ভেঙ্গে পড়ছে এবং দেশটির অনেক বাসিন্দা অখুশি, কিন্তু সেখানে রয়েছে এক 'বিপ্লবী শাসন ব্যবস্থা'।

তারা হঠাৎ করেই ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডের মতো বাহিনী অনেক শক্তিশালী। তাদের জবাব হচ্ছে, শক্ত হাতে দেশের ভেতর নিয়ন্ত্রণ রাখা আর যুক্তরাষ্ট্রের চাপের জবাবে পাল্টা চাপ দেয়া। সেটা অব্যাহতই থাকবে।

ইরানের কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা, অন্তত পক্ষে ইরাক থেকে।

অন্তত ইরানের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, তেহরানের নীতি অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা পেয়েছে। তারা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে পেরেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে তৈরি করতে পেরেছে। ইরাকে তাদের বেশ ভালো প্রভাব রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বৈপরীত্যের কারণে ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা নিজেদের এখন অনেক বেশি একা বলে মনে করছে।

তেহরানের সঙ্গে নিম্ন পর্যায়ে আলোচনার পথ খতিয়ে দেখছে সৌদি আরব, তুরস্ক নিজেদের পথে হাঁটছে আর রাশিয়ার সঙ্গে নতুন বন্ধুত্ব তৈরি করছে।

শুধুমাত্র ইসরায়েল মনে করে যে, সোলেইমানি হত্যাকাণ্ড ওই এলাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে সম্পৃক্ততার পথ তৈরি করেছে।

কিন্তু হয়তো তাদের হতাশ হতে হবে।

অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং অবনতি হতে থাকা অর্থনীতি ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডকে কোণঠাসা করে ফেলতে পারে। তারা দুইটি বড় ধরণের হামলার শিকার হয়েছে, ফলে তারা প্রতিশোধের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠতে পারে।

৪) ইরাকের অবস্থান নিয়ে বৈপরীত্য

ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

ইরাকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভে ভুগছে। দেশটির অনেক বাসিন্দাই সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আর তাদের ওপর ইরানের প্রভাব নিয়ে অসন্তুষ্ট।

দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, যেখানে দেশটি থেকে মার্কিন সৈন্যদের চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স কালকেই তাদের বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু তাদের সেখানে রাখতে হলে বেশ কৌশলী কূটনীতির দরকার হবে।

তার বদলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে থাকা ইরাকের সরকারের তহবিল জব্দ করা হবে।

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত থাকা না থাকার গুরুত্ব রয়েছে। যখন তাদের বাহিনী এবং মিত্ররা ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের বিতাড়িত করেছিল, তখন তারা দীর্ঘদিন সেখানে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। আইএস খেলাফত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী সেখানে দীর্ঘদিন থাকবে বলেই ধরে নেয়া হয়।

যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে চলেই যেতে হয়, তখন কথিত ইসলামিক স্টেটকে ঠেকিয়ে রাখা অনেক কঠিন হবে। পাশাপাশি সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অবশিষ্ট থাকা সেনাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। কারণ এই সৈন্যরা প্রধানত ইরাকের মার্কিন ঘাটিগুলো থেকে সহায়তা পেয়ে থাকে।

কিন্তু সেনা উপস্থিতির এই বিতর্কে যদি যুক্তরাষ্ট্র হারে, তাহলে হয়তো জয় হবে ইরানেরই।

বিমান বিধ্বংসের ঘটনায় ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ
BBC
বিমান বিধ্বংসের ঘটনায় ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ

৫) পরমাণু শান্তি চুক্তি সত্যিকারের বিপদে

বর্তমান এই সংকটের গোঁড়ায় যেতে হলে ফিরে যেতে হবে ২০১৮ সালের মে মাসে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়।

এরপর থেকে ইরানের অর্থনীতির ওপর সর্বোচ্চ চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেটা চাপ এড়াতে পরমাণু চুক্তির বেশ কিছু শর্ত লঙ্ঘনের মাধ্যমে নিজেদের মতো করে পাল্টা চাপের কৌশল নিয়েছে ইরান।

চুক্তিটি যদি পুরোপুরি বাতিল না হয়েও যায়, তখন এটা টিকে থাকবে শুধু এই কারণে যে, মি. ট্রাম্প ছাড়া আর কেউ চুক্তিটাকে বাতিল হয়েছে বলে দেখতে চান না।

অন্য কোন পরিবর্তন না হলে চুক্তিটি শেষ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই চুক্তিটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তি হওয়ার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কারণ ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর হামলার সম্ভাবনা ছিল ইসরায়েলের।

চুক্তির অন্য পক্ষগুলোকে যতদিন সম্ভব নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করবে ইরান। কিন্তু যে পচন ধরেছে তা শুরু বাড়তেই থাকবে।

ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে ইউরোপীয় উদ্যোগ ছাড়া সমাধানের কোন পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

পর্যায়ক্রমে চুক্তিটি যদি ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে ইরান হয়তো ক্রমেই বোমা তৈরির দিকে এগিয়ে যাবে।

কিন্তু চুক্তিটির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে আরো সম্পৃক্ত করছে, যখন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা নীতি সেখান থেকে নিজেদের বের করে আনার কথা বলছে।

{image- bengali.oneindia.com}

English summary
Iran-America: Those five reasons for which crisis are not resolving
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X