বাঁচার তাগিদ, টানা ৪৯ দিন মাঝসমুদ্রে একা ভেসে! পর্দার কাহিনি নয়, খাঁটি বাস্তব
উথাল-পাথাল সমুদ্র, সামুদ্রিক ঝড়ের সঙ্গে টানা লড়াই চালিয়ে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন ইন্দোনেশিয়ার যুবক। পর্দার কাহিনি নয়, খাঁটি বাস্তব।
চারিদিকে জল শুধু জল। মাঝ দরিয়ায় একা ভেসে রয়েছেন ১৯ বছরের তরুণ। এক-আধ দিন নয়, ৪৯ দিন। খাওয়া নেই দাওয়া নেই, মাথায় উপর ছাদ নেই। আছে ঝড়-ঝঞ্ঝা, তুফান। উথাল-পাথাল সমুদ্র, সামুদ্রিক ঝড়ের সঙ্গে টানা লড়াই চালিয়ে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন ইন্দোনেশিয়ার যুবক। পর্দার কাহিনি নয়, খাঁটি বাস্তব।
আলদি নভেল আদিলাঙ্গ। ইন্দোনেশিয়ার মানাদোর বাসিন্দা। তিনি তাঁর ১৯ বছরের জীবনেই ঘটিয়ে ফেললেন এমন এক অসম্ভব। সেই অসম্ভবের দুয়ার থেকে মুত্যুর হাতছানি উপেক্ষা করে যে এভাবেও ফিরে আসা যায়, তা প্রমাণ করলেন তিনি। নিদর্শন রাখলেন এক অসম সাহসের কাহিনির।
কিন্তু কী করে এতদিন তিনি লড়াই চালালেন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে? কীই-বা ঘটেছিল সমুদ্রের বক্ষে তাঁর একা হয়ে পড়ার পিছনে? ইন্দোনেশিয়ার তরুণ জানালেন, পেশার টানেই তাঁর সমুদ্র যাওয়া। সমুদ্র তাঁর কাছে নেশাও। দিনের পর দিন আগেও সমুদ্রে কাটিয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি থাকতেন গভীর সমুদ্রে ভাসমান এক ছোট্ট কুটিরে। এবারও তা-ই ছিলেন। জেলেদের সহযোগী হয়ে রামপঙ্গ নামে বোটে বাসা বেঁধেছিলেন তিনি।
তিনি ওই কুটিরে থেকে এক বিশেষ ধরনের বাতি দেখাতেন, যা দেখে মাছেরা আকর্ষিত হত। আর সেই মাছ জালবন্দি করতেন জেলেরা। মাসের পর মাস, সমুদ্রের মাঝেই স্নান-খাওয়া, ঘুম-নিত্যকর্ম। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। গোল বাধল জুলাই মাসের মাঝামাঝি। প্রবল সামুদ্রিক ঝড় উঠল। অমনি ছিড়ে গেল রামপঙ্গের রশি, যা সমুদ্রতল থেকে নোঙ্গর করে আটকানো ছিল। ব্যস, ছিন্নমূল হয়ে গেলেন আলদি। মাঝসমুদ্রে একেবারে একা।
খাবার নেই, জল নেই, মাঝ সমুদ্রে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন ছিন্নমূল হয়ে যাওয়া রামপঙ্গকে নিয়ে। কিন্তু হাল ছাড়েননি আলদি। সমুদ্র থেকে মাঝ ধরতেন, আর সেই মাছ ধরে পুড়িয়ে খেতেন। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন রামপঙ্গের কাঠ। সমুদ্রের জলই পান করতেন। পাস দিয়ে কত জাহাজ চলে গিয়েছে। কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও সফল হননি আলদি।
নয় নয় করে ১০টি জাহাজ চলে গিয়েছে, কিন্তু কেউ তাঁকে খেয়ালও করেনি। তবু আশায় ছিলেন আলদি, কারও চোখে তিনি পড়বেনই। তবে মাঝে-মধ্যে তাঁর আত্মহত্যার কথাও যে মনে হয়নি তা নয়, কিন্তু বাবা-মা'র মুখটা ভেসে উঠতেই আবার জেগে উঠেছে লড়াই করার অদম্য বাসনা।
বিপদে পড়ে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন বাবা-মা। তা-ই করতাম। আলদি বলেন, সেই প্রার্থনা আমার বিফলে যায়নি। পানামার একটি ভেসেল দেখতে পেয়েই নজর কাড়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়ে বিপদ সংকেত পাঠাই রেডিওয়। তা ধরা পড়ে ওই ভেসেল এমভি অ্যাপ্রেগ্গিয়োর রেডিও-য়। তারাই উদ্ধার করে আলদিকে। বাড়ি ফিরে এখন আলদি ভাবে, ৪৯টা দিন কীভাবে কেটে গিয়েছে সমুদ্র বক্ষে। শুধু বাঁচার তাগিদে। এখন তাঁরও মনে হচ্ছে এভাবেও ফিরে আসা যায়। ফিরে আসা যায় অসম্ভবকে সম্ভব করে।