চিনা আগ্রাসনের প্রতিবাদে টাইমস স্কোয়ারে ইন্দো-মার্কিনীদের বিক্ষোভ, বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ডাক
ইতিমধ্যেই চিনের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার ডাক উঠেছে গোটা বিশ্বেই। এদিন সেই আগুনে ঘি পড়ল টাইমস স্কোয়ারে। ভারতে ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই খবর পাওয়া যায় ভারতীয় রেলের চিনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্তের কথা। ফলে একদিকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর দায় ও অন্যদিকে বাণিজ্যে কোণঠাসা হওয়ার সম্ভাবনা, দুইয়ে মিলে চিন্তায় চৈনিক কূটনীতিকরা।
চিন-লাদাখ সীমান্তে ১৫ই জুন চিনা সেনার আক্রমণে গালওয়ান উপত্যকায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হন। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই চিনা বাণিজ্যকে ভারতে বয়কট করার ঝড় উঠেছে। নিউইয়র্কে করোনার বাড়াবাড়ির মাঝেই বেশ কিছু ভারতীয়, তাইওয়ান, ও তিব্বত বংশোদ্ভূত আমেরিকানকে হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায়। 'বয়কট চিন' ও 'চিনা অত্যাচার বন্ধ হোক'-এর মত স্লোগানও উঠতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে চিনের সঙ্গে সমস্ত চুক্তি বাতিল করে চিনা বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। এছাড়া তাঁরা তিব্বতের পূর্ণ স্বাধীনতা ও এই কাজে তাইওয়ানের সম্পূর্ণ সহযোগিতার দাবিও করেন।
আমেরিকান ইন্ডিয়া পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির সম্পাদক জগদীশ সিউহানিই চিনের এই আগ্রাসী মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেন। এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, "গত ছ'মাস ধরে যেখানে বিশ্ব করোনার সাথে এই অসমলড়াইয়ে ব্যস্ত, সেখানে প্রতিবেশী দেশের উপর চিনের এই খবরদারি মেনে নেওয়া যায় না। চিরকাল ধরে চিন, আমেরিকা ও ভারত তথা সারা বিশ্বকে দমন করতে চাইলেও এইবারে চিনকে এর ক্ষতিপূরণ মেটাতে হবে।" সিউহানির মতে, "চিন নিজদেশে কি করছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। তারা হংকংকে দাবিয়ে রাখছে। দেশ থেকে তিব্বতি ও মুসলিমদের বিতাড়িত করছে। ফলে এটা অন্য স্পষ্ট যে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার দিক থেকে চিন সবার থেকে এগিয়ে।"
১৫ই জুন চিনের সেনাবাহিনীর হাতে ২০ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মার্কিন মুলুকের ভিন্ন ভিন্ন শহরে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বিক্ষোভসভা চলছে বলে জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন হোমে বসবাসকারী তাইওয়ান ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতরাও এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছেন। মার্কিন মুলুকে নির্বাসিত তিব্বতি সংসদের এক সদস্য ডরজি সেতেন জানিয়েছেন, "এই মুহূর্তে বিশ্বনেতাদের উচিত বেজিংয়ের উপর চাপ বাড়িয়ে 'এক চিন নীতি'-কে বাতিল করা।" স্বাধীন তিব্বতের জন্য সংগঠিত ছাত্রসভার প্রধান ডরজি ভারতীয় মাটিতে চিনা সৈনিকদের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করেন।
এদিকে জগদীশ সিউহানি জানিয়েছেন, "চিনা সরকার যেভাবে দেশ থেকে তিব্বতি, মুসলিম ও জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে উইঘুর জনজাতির মানুষদের বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র করছে, তাতে চিনের আসল মনোভাব স্পষ্ট হচ্ছে।" বিক্ষোভকারীদের মতে, চিনে যেভাবে গুগল বা ফেসবুকের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা নিষিদ্ধ, সেই একইভাবে এই মুহূর্তে বিশ্বের সমস্ত দেশে চিনা পণ্য ও চিনা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই বছরের মার্চে চিনা সরকারের বিরুদ্ধে করোনা সম্বন্ধিত তথ্য বিকৃতির অভিযোগ আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনিতেই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ভয়ে রয়েছে চিন, আবার এই বিপত্তিতে শিয়রে সংক্রান্তি বেজিংয়ের।