আন্তর্জাতিক চাপে অবস্থান বদল! রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারে জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট ভারতের
আন্তর্জাতিক চাপে অবস্থান বদল! রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারে জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট ভারতের
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের জন্য ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের রুশ অভিযানের বিরোধিতা করে একাধিকবার রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটগ্রহণ করা হয়। কিন্তু প্রতিক্ষেত্রে ভারত ভোটদান থেকে বিরত ছিল। যা আমেরিকা, ইউরোপ সহ পশ্চিমি দেশগুলোর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে পশ্চিমি দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক
বুধবার ইউক্রেনের ৩১ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কিকে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখার আবেদন করা হয়। পাশাপাশি গত ছয় মাস ধরে চলা ইউক্রেনের পর রুশ অভিযান নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠক শুরুর সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি এ নেবেনজিয়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির বক্তব্য রাখার বিরোধিতা করেন। তিনি এই বিষয়ে একটি ভোটের দাবি জানান। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই ভোটে রুশ প্রতিনিধি একমাত্র ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রনের বিরোধিতা করেন। চিন এই ভোটদান থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিল।
রাশিয়ার বিরোধিতায় ভারত!
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিল ভারত। সেখানে ভারতের প্রতিনিধি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরপর পর ভারত প্রথম কোনও ভোটে অংশগ্রহণ করেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ভারত রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই বছরের জন্য অস্থায়ী সদস্য। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটে অংশগ্রহণ না করার জন্য আমেরিকা সহ ইউরোপের একাধিক দেশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল নয়াদিল্লিকে।
নিপাপত্তা পরিষদে রুশ প্রতিনিধির বিরোধিতা
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি এ নেবেনজিয়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বক্তব্য জানানোর তীব্র বিরোধিতা করেন। রাষ্ট্রসংঘের রুশ প্রতিনিধি বিরোধিতা করে বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ জানানোর বিরোধী রাশিয়া নয়। তবে করোনা মহামারীর সময় টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মহামারী অতিক্রম করার পরেও এই টেলিকনফারেন্স বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখার বিরোধী রাশিয়া। রুশ দূত নিরাপত্তা পরিষদে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, পশ্চিমি দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন করে। সেই কারণে নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অন্যান্য সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বিবৃতি
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে টেলি কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, বর্তমানে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কার্যত একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। যার জেরে মস্কো বিশ্বকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের সামনে দাঁড় করিয়েছে। এই বিষয়ে বিশ্বকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেন। রাশিয়া ইউক্রেনকে ক্রমাগত পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শুধু ইউক্রেন নয়, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক সদস্য রাশিয়ার বিরোধিতা করেছেন। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।