লাদাখে চিনা আগ্রাসন আদতে ট্রাম্পের জন্য আশীর্বাদ! দাবার খেলায় ভারত এখন আমেরিকার ঘুঁটি?
ভারত ও চিন সম্মুখ সমরে লিপ্ত হোক, অনেক বছর ধরে এমনটাই চাইছিল আমেরিকা। এমনই মত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের। এর আসল কারণ ভারতকে চিনে বিরুদ্ধে একটি ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ মিলে গেল আমেরিকার। আমেরিকা ও চিনের মধ্যকার যুদ্ধের মধ্যে কোনও পক্ষই সরাসরি একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না। এদিকে আমেরিকার দীর্ঘদিনের বন্ধু পাক্সিতান এখন চিনপন্থী। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের বদলে ভারতের মতো শক্তিশালী দেশকে মিত্র হিসাবে পাওয়ার আশা করছিল আমেরিকা।
ভারত-মার্কিন সামরিক সম্পর্ক
বাণিজ্যিক ভাবে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরেই উন্নতির দিকে এগিয়েছে। তবে সামরিক দিক দিয়ে ভারত এখনও রাশিয়ার বন্ধু। এদিকে বাণিজ্যিক সম্পর্কের জেরে গত কয়েক বছরে চিনের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ভালো হয়েছিল। শি জিনপিংয়ের ভারত সফরে তা আরও দৃঢ় হয়েছিল। তবে সেই সম্পর্কে আবার নিম্নমুখী গ্রাফ লক্ষ্য করা যায় গালওয়ান সংঘর্ষের পর।
চিনের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যেতে চায় না আমেরিকা
এদিকে চিনের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে এক বন্ধু রাষ্ট্রের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করার যে কৌশল আমেরিকা গ্রহণ করেছে তাতে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সামিল। প্রয়োজনে যুদ্ধ হলে আমেরিকা ভারতকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করবে ঠিক, কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে যে ক্ষতির সম্মুখিন যুক্তরাষ্ট্রকে হতে হত, সেটা এবার আর হবে না। তার বদলে আমেরিকার হয়ে সেই ক্ষতি এবা বহন করবে ভারত। পাশাপাশি চিন ভারতের বাজার খোয়ানোয় বাণিজ্যিক ভাবেও তা আমেরিকাকে সাহায্য করবে।
ভারতকে সাহায্য করবে আমেরিকা
কয়েকদিন আগেই মার্কিন চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোজকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, 'চিন বা অন্য কাউকে কোনও এলাকাতেই দাদাগিরি করতে দেব না। এই বার্তা স্পষ্টই। ভারত চিন পরিস্থিতি হোক বা অন্যত্র, আমাদের সেনারও শক্তিশালী অবস্থান হবে।'
ভারতের আড়ালে চিন বিরোধী দেশগুলি
পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘাতের পর থেকেই আন্তর্জাতিক বিশ্বে ক্রামাগত একঘরে করা হয়েছে চিনকে। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলি চিনকে সতর্ক করে। ইউরোপ থেকে এশিয়ায় সেনা সরিয়ে আনে আমেরিকা। দক্ষিণ চিন সাগরে পাঠিয়ে দেয় রণতরীও। তবে এসবই করা হচ্ছে হংকং, তাইওয়ান, ভারতের মতো দেশগুলিকে ঘুঁটি হিসাবে সাজিয়ে। এই বড় বড় শক্তিশালী দেশগুলি চিনের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিতে ভারতের মতো দেশগুলির আড়ালে যাচ্ছে।
চিন-মার্কিন চাপানউতোর
প্রসঙ্গত, এর আগে দক্ষিণ চিন সাগরে ভারত ও আমেরিকার যৌথ টহলদারির খবরে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে এশিয়া মহাদেশের বিশাল জলসীমায়। এই দক্ষিণ চিন সাগরকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে চিন। ভারত ও দক্ষিণ চিন সাগরে আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্রের উপর ক্রমেই আগ্রাসন বেড়েছে চিনের। এছাড়া আগে থেকেই করোনা নিয়ে বেজিংয়ের উপর খেপে ছিল ওয়াশিংটন। এবার এর ফল স্বরূপ, আমেরিকা পাল্টা চিনকে নিজেদের পেশী শক্তি দেখানো স্থির করে। আর এতেই প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিন চিন সাগরে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আমেরিকাকে চিনের উস্কানি
এদিকে সারা বিশেব যখন করোনা সংক্রমণে জর্জরিত তখন সীমান্তে উত্তেজনা তৈরিতে ব্যস্ত চিন। তবে শুধু ভারতের লাদাখ নয়, এই সময়ে প্রায় নিয়মিত ভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমায় নিজেদের যুদ্ধ বিমান পাঠিয়েছে চিন। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে নয়, লাদাখে এই উত্তেজনা সৃষ্টি করার পিছনে আমেরিকাকে বার্তা দেওয়াই মূল লক্ষ্য বেজিংয়ের।
রণং দেহি মেজাজে আমেরিকা
লাদাখে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও রণং দেহি মেজাজে আমেরিকা। প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরেই চিনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সংঘাত চলছিল। এরপর করোনা পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও খানিকটা যুদ্ধের দিকে ঘণীভূত হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে চিনা আগ্রাসনের এই ঘটনাগুলি আমেরিকাকে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে আরও সাহায্য করেছে।
চিন-আমেরিকা ঠান্ডা যুদ্ধ
বিশেষজ্ঞদের মত যে আদতে চিন এই সব দেশের বিরুদ্ধে উত্তেজনা তৈরি করে ওয়াশিংটনে বার্তা পৌঁছাতে চাইছে। এর জবাবে অবশ্য আমেরিকার সাফ বার্তা, মার্কিন সেনা চিনের তরফে আসা চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে উপযুক্ত জায়গায় মোতায়েন থাকবে। যা পরিস্থিতি তাতে যেকোনও পক্ষ থেকে 'ভুল'বশে কোনও গুলি চললে তা আশ্চর্যের হবে না। আসলে ভারত ছাড়া বাকি সব দক্ষিণ এশিয়ার দেশের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে চিন। এবং বাণিজ্য যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নাজেহাল করেছে এই সুপারপাওয়ার। এই আবহে ভারত বা অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি দাবার ঘুঁটি ছাড়া আর কিছুই নয়।
চাবাহার রেল প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়নি ভারতকে! ইরানের নয়া বক্তব্যে চরম ধন্দ