রুশ সামরিক সাহায্য নিলে পড়তে হবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায়, কোন কূল বাঁচাবে ভারত
রুশ সামরিক সাহায্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। আর এর জেরেই ফাঁপরে পড়েছে ভারত। রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানীর জন্য ২০১৬ সালে ৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল নয়াদিল্লি।
রুশ সামরিক সাহায্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। আর এর জেরেই ফাঁপরে পড়েছে ভারত। রাশিয়া থেকে অস্ত্র আমদানীর জন্য ২০১৬ সালে ৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল নয়াদিল্লি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে সেই চুক্তির ভবিষ্যত আপাতত বিশ বাঁও জলে। একদিকে শক্তিশালী রুশ অস্ত্র হাতছাড়া হতে চলেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে শক্তিসাম্যে ওয়াশিংটনের দিকেই ঝুঁকে আছে। তাদেরকেও চটানো যাবে না। সব মিলিয়ে ভারতের এখন একূল-ওকূল দুকূল যাওয়ার দশা।
গত আগস্ট মাসেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ বিরোধী একটি আইন পাস করেছেন। সেই আইন মোতাবেক রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, কোন দেশ রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক বা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করলে তাকেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হবে বলে জানানো হয়। ২০১৪ সালে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনের ক্রিমিয়াকে দখল করেছিল ক্রেমলিন সেই থেকেই তাদের পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে দ্বন্দ্বের শুরু। তারপর ২০১৬-য় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ, সর্বোপরি সম্প্রতি সিরিয়ায় আধিপত্য কায়েম করা নিয়ে রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। এসব কারণে পুতিনকে প্যাঁচে ফেলতেই ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন।
কিন্তু এতে ভারতের মতো একঝাঁক আমেরিকার মিত্র দেশও প্রবল সমস্যায় পড়েছে। বিশ্বে অস্ত্র রফতানিকারী দেশের তালিকায় রাশিয়ার দ্বিতীয় স্থানে। সমস্যায় পড়া দেশগুলির প্রত্যেকটিই রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্রচুক্তিতে আছে। ভারত যেমন রাশিয়ার থেকে পাঁচটি দূরপাল্লার এস-৪০০ মিসাইল কিনেছে। এই অস্ত্রচুক্তি নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীও অত্যন্ত আহ্লাদিত। এই স্থল থেকে বায়ুতে আঘাতে স ক্ষম এই মিসাইল সিস্টেম ব্য়ালিস্টিক মিসাইল ও গোপন বিমানহানা রুখতে সক্ষম।
মনে করা হচ্ছিল, এস-৪০০ হাতে এলে পকিস্তান বা চিনের মতো আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে ভারত অনেকটাই এগিয়ে যাবে। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞান রাজের মতে, 'রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকা তথা পশ্চিমী শক্তিগুলির সম্পর্ক একন সবচেয়ে খারাপ। পাশপাশি ভারত এখন কৌশলগতভাবে পশ্চিম তথা আমেরিকার দিকেই ঝুঁকে। তাই রাশিয়ার সঙ্গে প্রচুর অর্থের অস্ত্রচুক্তি থাকলেও সে চুক্তি এখন প্রশ্নের মুখে।' কী বলছে রাশিয়া?এস-৪০০ চুক্তির সঙ্গে জড়িত এক রুশ সূত্র জানাচ্ছে, 'ভারতের আত্মবিশ্বাস ও বিবেচনার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে'।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় একটা সমাধানের পথ খুঁজছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে ও প্রতিরক্ষা সচিব সঞ্জয় মিত্র গতমাসেই ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। তারা আমেরিকার কূটনীতিকদের বলেছেন, রুশ সাহায্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত রুশ যন্ত্রাংশের ওপর ভারতীয় সামরিক জাহাজ থেকে বিমান সবই নিরভরশীল। কাজেই আমেরিকা ভারতকে যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সঙ্গী হিসেবে পেতে চাইছে, তা রুশ সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। তবে ওয়াশিংটনের বিশ্লষকরা বলছেন, ভারত ধীরে ধীরে রুশ নিরভরতা কাটিয়ে উঠছে, দেখে আমেরিকা ভারতকে এক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে ভারতের মোট অস্ত্র আমদানির ৬২ শতাংশ ছিল রাশিয়ার। তার আগের পাঁচ বছরের ৭৯ শতাংশের পাশে যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।
তবে আরেকটি পথও আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তাদের জাতীয় নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটবে বলে উল্লেখ করতে পারে। সেভাবেও ভারতকে ছাড় দিতে পারে তারা।