না ইমরান খান সাহেব, মোদী ক্ষমতায় ফিরলে শান্তি প্রক্রিয়া এগোবে এমন ভাবার এখনই কারণ নেই
কয়েকদিন আগেও তিনি একহাত নিয়েছিলেন ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে| তাঁর শান্তির আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় কড়া আক্রমণ করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও|
কয়েকদিন আগেও তিনি একহাত নিয়েছিলেন ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। তাঁর শান্তির আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় কড়া আক্রমণ করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। কিন্তু পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবারে আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদী জিতলেই বরং ভারত-পাক শান্তির আলোচনার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিকদের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন যে যদি কংগ্রেস এই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে, তবে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা কম কারণ দক্ষিণপন্থী প্রতিপক্ষের আক্রমণের ভয়ে তারা হয়তো পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়াতে খুব আগ্রহ দেখাবে না।
"বিজেপির মতো একটি দক্ষিণপন্থী দল জিতলেই হয়তো কাশ্মীর প্রসঙ্গে কোনও রফাতে পৌঁছনো সম্ভব," মন্তব্য করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের শীর্ষ নেতা।
অবশ্য ভারত সম্পর্কে নিজের হতাশাও ঢেকে রাখেননি প্রাক্তন এই ক্রিকেটার। "কোনওদিন ভাবিনি এইরকম ভারত একদিন দেখব। মুসলমান সত্ত্বাকেই আক্রমণ করা হচ্ছে ওদেশে," বলেন তিনি।
এ বিষয়ে মোদীকে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনিইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তুলনা করে বলেন যে নেতানিয়াহুর মতোই ভয় এবং জাতীয়তাবাদী অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে ভোট প্রক্রিয়া সারতে চাইছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
পাঁচ বছর আগেও আশা দেখিয়েছিলেন মোদী ও শরিফ
ইমরান খানের বক্তব্য পুরোপুরি ফেলনা না হলেও এটাও ঠিক যে পাঁচ বছর আগেও ঠিক এই আশাতে চলতে শুরু করেছিলেন তাঁর পূর্বসূরি নওয়াজ শরিফ এবং মোদী, দু'জনেই। ২০১৪ সালে নির্বাচনে জিতে আসার পরে মোদী তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ডাকেন শরিফ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতা এবং প্রতিনিধিদের। মনে করা হয়েছিল, এই নতুন সূচনা ঘটতে চলেছে এই দুই দেশের সম্পর্কে। পরবর্তীকালে মোদী আচমকা লাহোরে শরিফের সঙ্গে দেখা করতে চলে যান তাঁর পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্যিখানে। শান্তির পথে যখন একটু একটু করে হাঁটছে দুই দেশ, তখনই ঘটে যায় পাঠানকোট, উরি ইত্যাদির মতো ঘটনা এবং গত ফেব্রুযারিতে দুই দেশের মধ্যে প্রায় লেগে যায় সংঘাত, পুলওয়ামায় ভারতীয় আধাসেনার কনভয়ে আক্রমণ হওয়ার পরে। ভারতের যুদ্ধবিমান চালক অভিনন্দন বর্তমানকে পাকিস্তান আটক করলেও পরে তাঁকে নিঃশর্তে ছেড়ে দিয়ে প্রশংসা কুড়োন ইমরান খান।
মোদী ফের জিতলে কতটা নরমপন্থী হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থাকে
এইবারে মোদী জিতলেও যে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী সেই একই পথে চলবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। মোদী প্রশাসন যেই পর্যায়ে এবারে জাতীয়তাবাদী সুর চড়িয়েছে, তাতে সেখান থেকে অবরোহণ করা সময়সাপেক্ষ। আর বিশেষ করে, বিজেপি যদি এবারে ফের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে, তাহলে মোদী সরকারের ভাবগতিক কী হবে তা আগাম বলা মুশকিল। তবে, এবারের মেয়াদে মোদীর মুখে নরমপন্থী সুর খুব একটা শোনা যাবে বলে মনে হয় না, যদি না অবশ্য কেন্দ্রে একটি মিলিজুলি সরকার আসে।
দক্ষিণপন্থীদের ভয় মোদী সরকারেরও থাকবে
দক্ষিণপন্থীদের সমালোচনার ভয় মোদী সরকারেরও কম থাকবে না ক্ষমতায় এলে। পাকিস্তানের প্রতি সুর নরম করলে তা সঙ্ঘ পরিবারের মনপসন্দ নাও হতে পারে। আর অতীতে পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলী জিন্নাহর স্তুতি গেয়ে লালকৃষ্ণ আদবানির কী অবস্থা হয়েছিল, তা সবাই জানে। আর তাছাড়া, মোদী ক্ষমতায় এসে যদি কাশ্মীর নিয়ে তাঁর আগের অবস্থানেই অটল থাকেন, তবে তো কথাই নেই।
তাই মোদী সরকারে ফের এলেই যে শান্তি প্রক্রিয়া তরতরিয়ে এগোবার সম্ভাবনা দেখা দেবে, এমন ভাবার কোনও কারণ এখনও পর্যন্ত নেই। কট্টরপন্থীরা সচরাচর সুর নরম করেন না; বিশেষ করে একবার চড়ালে তো আরওই নয়।