মাঝরাতে চূড়ান্ত নাটকের যবনিকাপতন, পাকিস্তানে আস্থা ভোটে হেরে সাড়ে তিন বছর পরে ক্লিন বোল্ড ইমরান খানের সরকার
চূড়ান্ত নাটকের পর মধ্যরাত পেরিয়ে শেষ অবধি আস্থা ভোট হল পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে। এবং প্রত্যাশামতোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় ভোটাভুটিতে হেরে পাকাপাকিভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হল তেহরিক ই ইনসাফ পাকিস্তানের প্রধান ইমরান খানকে। এদিন সরকারের বিপক্ষে ১৭৪টি ভোট পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরাই এবার সরকার গড়বে। এবং সেই সরকার শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে গঠিত হবে বলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এদিন রাত ১২টার মধ্যে আস্থা ভোট করতে হবে বলে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল। তবে সময় এগিয়ে চললেও ইমরান খান সরকার আস্থা ভোট করেনি। যার ফলে ইমরান খান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের গ্রেফতারের দাবি ওঠে। পাকিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সরকার মানছে না বলে আদালতে নালিশও ঠোকে।
সরকার পক্ষের নেতা-মন্ত্রী-আমলারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য পাকিস্তানের সমস্ত বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করে সেদেশের ফেডেরাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি।
আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব থেকে সরে আসেননি ইমরান খান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ রয়েছে। তার প্রমাণ একটি হুমকি চিঠি। সেটি তিনি প্রধান বিচারপতিরা হাতে তুলে দেবেন। এবং কোনওভাবেই বিদেশি ষড়যন্ত্রকে পাকিস্তানের মাটিতে সফল হতে দেবেন না।
এদিন আস্থা ভোট হওয়ার আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার আসাদ কাইসার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরী পদত্যাগ করেন। আস্থা ভোট হলে পরাজিত হল ইমরান খান। আর তারপরই স্পষ্ট হয়ে যায়, বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরিফ হতে চলেছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। রবিবার দুপুর ২টোয় সম্ভবত আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষণা হবে।
পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ সময় অফিসে থাকতে পারেননি। তবে ইমরান খান হলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যাঁকে আস্থা ভোটে হেরে সরকার থেকে সরে যেতে হল।
এর আগে ইমরান খানের সরকার সংসদের নিম্ন কক্ষ ভেঙে দেয়। তারপরই বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে ভোটাভুটির নির্দেশ দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ইমরান খানদের প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল যে নির্বাচিত সরকারকে ফেলতে বিদেশি শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। ফলে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করতে কোনওভাবেই আস্থা ভোট করা যাবে না।
প্রসঙ্গত ২০১৮ সালে সেনার সমর্থনেই ভোটে জিতে সরকার গড়েন ইমরান খান। তবে সম্প্রতি তাঁর জোটসঙ্গীরা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারপরই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ইমরানের জোট। ফলশ্রুতি, আস্থা ভোটে হেরে শেষ অবধি বিদায় নিতে হল ইমরান খানকে।