For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

মরণোত্তর অঙ্গ ও দেহদান করতে চাইলে যেসব তথ্য জেনে রাখতে পারেন

যে রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে যায়, তারা দান করা এসব প্রত্যঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

  • By Bbc Bengali

চোখ
BBC
চোখ

বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফকে শনিবার ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

হাসান আরিফের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মৃতদেহ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করা হবে।

বাংলাদেশে এর আগেও অনেকে মৃত্যুর আগে তার মৃতদেহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে দান করে গেছেন। অনেকে শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন।

বাংলাদেশে শরীর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানের বিস্তারিত এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে।

শরীর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান

মানব শরীরের পুরোটা অথবা বিভিন্ন অংশ দান করা যায়। যে রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে যায়, তারা দান করা এসব প্রত্যঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

মানবদেহ দান করা হলে সেটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষা ও গবেষণা কাজে লাগে।

কী কী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা যায়?

পুরো মানবদেহই দান করা যায়।

এছাড়া হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, লিভার, প্যাংক্রিয়াস, অস্থি, অস্থিমজ্জা দান করা যায়।

এর বাইরে চোখ বা কর্নিয়া, হাড়, ত্বক, ত্বক, হার্ট ভালভ, ব্লাড ভেসেল, নার্ভ ও টেন্ডনও দান করা যায়।

কীভাবে দান করতে হয়?

বাংলাদেশের জীবিত কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি (১৮ বছরের বেশি) হতে হবে, তবে ৬৫ বছরের বেশি নয়।

তবে জীবিত অবস্থায় কেউ শুধুমাত্র নিকট আত্মীয়কে কিডনি, লিভারের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। কিন্তু চোখ, চর্ম, টিস্যু-ইত্যাদি যে কেউকে দান করা যাবে, সেখানে নিকট আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা বাধ্যতামূলক নয়।

কিন্তু ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, এইডস বা কোন জীবাণু সংক্রমণ কোন ব্যাধিতে মারা গেলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা যাবে না।

যিনি মরণোত্তর দেহদান বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে চান, তিনি স্ট্যাম্প পেপারে সজ্ঞানে স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ বা বা হাসপাতালে অনুমতি দিয়ে যাবেন।

সেখানে অন্তত দুইজন নিকট আত্মীয়কে সাক্ষী হিসাবে থাকতে হবে।

মরণোত্তর দান করা দেহ নিয়ে কী করে হাসপাতাল

চোখ, কিডনি, লিভার, চামড়া- এরকম যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা হয়, তা অন্য কোন অসুস্থ রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ দান করা সবচেয়ে বেশি অঙ্গ-প্রত্যক্ষ হলো চোখ।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জয়নুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ১৯৮৪ সালে কার্যক্রম শুরুর পর এ পর্যন্ত তারা প্রায় চার হাজারের মতো কর্নিয়া বা চোখ দান পেয়েছেন। কিন্তু জনসংখ্যা বা বাংলাদেশের মৃত্যুর বিচারে এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।

বছরে তারা এখন পাচ্ছেন প্রায় ২৫/২৬ জোড়া চক্ষু।

মরণোত্তর দান করা দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।

কোন অংশ কতক্ষণের মধ্যে ব্যবহার করতে হয়

মৃত্যুর পর হার্ট প্রতিস্থাপন করতে হয় চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে। ফুসফুস ৪-৮ ঘণ্টা, লিভার ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে, প্যাংক্রিয়াস ১২-১৪ ঘণ্টা এবং কিডনি ২৪-৪৬ ঘণ্টার মধ্যে করতে হয়।

চোখ প্রতিস্থাপন করতে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।

যেভাবে দেহদান করতে হয়

বাংলাদেশের যেকোনো মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালের অধ্যক্ষ বা পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হয়। যেখানে স্ট্যাম্প কাগজে হলফনামা, দুই কপি সত্যায়িত পাসপোর্ট ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিয়ে আবেদন করতে হবে।

সেখানে পরিবারের দুইজন সদস্যের সাক্ষী হিসাবে সম্মতি থাকতে হবে।

মারা যাওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহ ওই মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। সে সময় ডেথ সার্টিফিকেটের কপি লাগবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দেহদান করেছেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও লেখিকা ফারহানা আনন্দময়ী তিনি বলছেন।

তিনি বলছেন, ''মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে তো মানুষের জন্য তেমন কিছু করতে পারলাম না। এখন মরে গিয়ে দেহটা পোকামাকড়ের খাবার না হয়ে যদি মানুষের কোন কাজে লাগে, সেটাও তো মানুষের কল্যাণে কিছু করা হবে। এই চিন্তা থেকে আমি মরণোত্তর দেহদান করে অঙ্গীকার নামা দিয়েছি।''

বাংলাদেশে মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গ দান

বাংলাদেশে প্রথম মরণোত্তর দেহদান শুরু হয় ১৯৮৪ সালে আরজ আলী মাতুব্বরের মাধ্যমে। স্বশিক্ষিত এই দার্শনিক তার মৃতদেহ বরিশাল মেডিকেল কলেজে দান করে গিয়েছিলেন।

তারপর গত ৩৮ বছরে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সেগুপ্তা কিশওয়ারা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আমাদের কাছে অনেকেই মরণোত্তর দেহদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এরকম সব দেহ শেষ পর্যন্ত আমাদের আসে না।

তিনি জানান, তাদের নিয়ম অনুযায়ী এরকম প্রতিশ্রুতি দেয়া কোন ব্যক্তি মারা গেলে মৃতদেহ হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার জন্য তার স্বজনদের দায়িত্ব থাকে।

কিন্তু ধর্মীয় ও সামাজিক নানা কারণে মারা যাওয়ার পর স্বজনদের অনেকেই তখন আর দেহ হাসপাতালে দিতে চান না।

হাসপাতালের চিত্র
BBC
হাসপাতালের চিত্র

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত দেহদানের অঙ্গীকার জমা পড়েছে ৬৫টি। হাসপাতাল ১২ জনের মরদেহ পেয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, সংগীত শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী, ব্লগার অভিজিৎ রায়, সীমা রায়, অধ্যাপক নরেণ বিশ্বাস, মৈত্রীয় চট্টোপাধ্যায়ের দেহ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রয়েছে ১৫ জনের মরদেহ। সেখানে রয়েছে ভাষা সৈনিক বেলাল মোহাম্মদ, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পঙ্কজ ব্যানার্জি, সাংবাদিক ওয়াহিদুল হকের মরদেহ।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারহানা হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন, এখন আমরা বছরে দুই বা তিনবার মৃতদেহ পাই।''

একসময় বাংলাদেশে বেওয়ারিশ মৃতদেহের ওপর নির্ভর করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসা শিক্ষা চলতো। তবে এখন প্রযুক্তির উন্নয়নে বেওয়ারিশ মৃতদেহের সংখ্যা কমে গেছে।

বাংলাদেশে মরণোত্তর দেহদানে গত আট বছর ধরে উৎসাহিত করে আসছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মৃত্যুঞ্জয়, মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গ দান ফোরাম।

সংগঠনটির সমন্বয়ক সাগর লোহানী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''যখন কেউ মারা যায়, তখন সেখানে এমন একটা বেদনাবিধুর পরিবেশ তৈরি হয় যে, সেখানে গিয়ে দেহদান বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের কথা তোলা যায় না।''

''আবার দেখা যায়, যারা দেহদানের সম্মতিপত্রে সাক্ষী হয়েছেন, তখন তারাও আর কথা বলতে চান না। এসব কারণে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে অনেকে দেহদান বা অঙ্গ দানে আগ্রহী হলেও মৃত্যুর পরে সেটা আর কার্যকর হয় না।''

তিনি জানান, এমনকি তাদের সংগঠনের একজন সদস্যের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে।

ওই সদস্য মরণোত্তর দেহদান করে গেলেও পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর পর আর তাতে রাজি হয়নি।

সাগর লোহানী নিজেও মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন।

এই সংগঠনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১২০ জন মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন।

তবে চোখ ও অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত তারা ৩৮ হাজারের বেশি অঙ্গীকার পেয়েছে। এদের বড় অংশটি তরুণ।

সন্ধানীর মহাসচিব মোঃ জয়নুল ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশে বছরে হাসপাতালগুলোতে ১০ লাখ মানুষ মারা যান। এদের মধ্যে যদি ২০ হাজার কর্নিয়াও পাওয়া যেতো, বাংলাদেশের কর্নিয়ার সঙ্কট মিটে যেতো।

বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচ লক্ষ ২৬ হাজার কর্নিয়ার চাহিদা রয়েছে।

English summary
If you want to donate organs and bodies after death, you can know the information
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X