ইসলামি উদ্বাস্তু বিতর্কে প্রতিবাদে উত্তাল জে এফ কেনেডি বিমানবন্দর, সমালোচনা বিশ্বজুড়ে
নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১১ জন 'বিদেশী নাগরিক'-কে উদ্বাস্তু হিসাবে আখ্যা দিয়ে আটক ঘিরে বিক্ষোভ। যদিও জারুরীকালীন পর্যায়ে আপাতত তাঁদের থাকবার নির্দেশ দেয় আদালত।
নিউ ইয়র্ক, ২৯ জানুয়ারি : মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, উদ্বাস্তুদের ৪ মাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কয়েকদিন আগেই। আর এ নিয়ে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ দেখালেন প্রায় শতাধিক মার্কিনি। ঘটনার সূত্রপাত বিমান বন্দরের ৪ নং টার্মিনালে ১১ জন 'বিদেশী নাগরিক'-কে উদ্বাস্তু হিসাবে আখ্যা দিয়ে আটক করাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। আটকে দেওয়া হয় মার্কিন গ্রিন কার্ড হোল্ডারদের। [ইসলামি মৌলবাদী ও জঙ্গিদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়াতে নির্দেশনামায় সই ট্রাম্পের]
জানা গিয়েছে ওই ১১ জন 'বিদেশী নাগরিক' যখন বিমানবন্দরের ' ট্রানজিট'-এ ছিলেন অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছিলেন, তখন তাঁদের আচমকা আটক করা হয় 'উদ্বাস্তু ' হওয়ার অভিযোগে । এই ঘটনায়, স্বভাবতই জনরোষ উপচে পড়ে। শুরু হয় রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৪ নং টার্মিনালেই প্রতিবাদ শুরু হয়। সময় যত এগোতে থাকে , ততই বেড়ে যায় প্রতিবাদীদের সংখ্যা। ক্রমাগত আমেরিকা জুড়ে ছড়াতে থাকে প্রতিবাদ আন্দোলন।
বিমানবন্দরের সামনে অনেক রকমের প্লাকার্ড, পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ চলতে থাকে। প্লাকার্ডে লেখা থাকে, ' আমরা সবাই উদ্বাস্তু', কারও হাতে ' তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হোক' লেখা প্লাকার্ড দেখা যায়। কেউবা 'উদ্বাস্তুরা স্বাগত' এমন প্লাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন।[মেক্সিকো সীমান্তে ৩২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর তৈরি করবে ট্রাম্পের আমেরিকা]
এদিকে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচারপতি অ্যান ডোন্নেলি ওই আটক করা ওই 'বিদেশী নাগরিকদের ' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরুরীকালীন পর্যায়ে 'সাময়িক' থাকবার অনুমতি দিয়েছেন । উল্লেখ্য এক্ষেত্রে তাঁদের কাছে থাকতে হবে বৈধ ' ভিসা'। বিচারপতির এই সিদ্ধান্তের সাপেক্ষে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জন মানুষ যাঁদের বিমানবন্দরের ' ট্রানজিট'-এ ধরা হয় এই ক'দিনে, তাঁরাও এই জরুরীকালীন পর্যায়ে থাকবার অনুমতি পাবেন। তবে তাঁদের সংখ্যাটা নির্দ্দিষ্টভাবে ঠিক কত সেবিষয়ে এখনও ধন্দে রয়েছে প্রশাসন।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি দেশের প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করল ফ্রান্স । সিদ্ধান্তে ট্রাম্পের পাশে নেই তাঁরা বলে জানিয়ে দিল ব্রিটেনও ।পাশপাশি এই নিষেধাজ্ঞার জবাব দিয়েছে ইরান। মার্কিন নাগরিকদের ইরানে ঢুকতে দেওয়া হবেনা বলে জানিয়েছে সেদেশের সরকার। ঘটনায় বিক্ষোভ সিরিয়া সহ বিশ্বের বহু জায়গায়। এদিকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াল ইজরায়েল।
এর আগে , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি দেশের প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে একযোগে হতাশা প্রকাশ করেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জ়ুকারবার্গ, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই ও নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজ়াই। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে তাঁর মন ভারাক্রান্ত বলে জানিয়েছেন মালালা। গুগলের সিইও জানিয়েছেন গুগলের ১৮৭ জন কর্মীর ওপর এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর এদিন গুগলের অন্তত ১০০ জন কর্মীকে বিদেশসফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থা।
খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, যে ৭ টি দেশের উদ্বাস্তুদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ট্রাম্প তার কোনওটির সঙ্গেই বাণিজ্যের সম্পর্ক নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। বরং মিশরের মতো মুসলিম প্রধান দেশগুলি, যেখানে সম্পদ ও অর্থের প্রাচুর্য রয়েছে তাদের এই নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকে বাদ রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।