ফরেনসিক পরীক্ষা: চীনে মশার সূত্র ধরে চোর ধরা হলো যেভাবে
চীনে সম্প্রতি এমন অভিনব এক উপায়ে চোর ধরা হয়েছে যা কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। বলা হচ্ছে এই চোর ধরায় ভূমিকা রেখেছে মশা।
ক্ষুদ্র এই কীট সাধারণত বিরক্তির উদ্রেক করে এবং নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু এই মশার সূত্র ধরেই চীনের পুলিশ রহস্যময় এক চুরির সমাধান করেছে এবং এর সাথে জড়িত চোরকে পাকড়াও করেছে।
চীনের পুলিশ জানিয়েছে মৃত দুটো মশার রক্ত থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সূত্রে তারা ওই চোরকে আটক করেছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে জুন মাসে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশের ফুজো শহরে এক চোর একটি এপার্টমেন্টের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মূল্যবান কিছু দ্রব্য নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে চুরির অভিযোগ পেয়ে তারা যখন বহুতল ভবনের ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে পৌঁছায় তখন ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করা ছিল।
এ থেকে তারা ধারণা করেন যে চোর ব্যালকনি দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।
পুলিশ বলছে চোরটি ওই বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়ে যায়।
চোরের রাত্রি যাপন
কিন্তু পালানোর আগে চোর সেখানে আরাম আয়েশের সঙ্গে রাত্রি যাপন করে। শুধু তাই নয় ওই বাড়িতে নুডলস রান্না করে সে রাতের খাওয়া দাওয়াও সেরে নেয়।
পুলিশ দেখতে পায় যে রান্না ঘরে সদ্য-ভাঙা কিছু ডিমের খোসা এবং নুডলসের প্যাকেট পড়ে রয়েছে।
চোর এপার্টমেন্টের শোবার ঘরে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর সময় একটি মশার কয়েলও জ্বালিয়েছিল। পুলিশ ওই কয়েলটিও উদ্ধার করেছে।
ফুজো শহরের পুলিশ বলছে, তারা যখন চুরির আলামত এবং ক্লু সন্ধান করছিল তখন তারা সেখানে দুটো মৃত মশাও খুঁজে পায়।
দেখতে পায় যে শোবার ঘরের দেয়ালে মশার সঙ্গে তাজা রক্তের দাগও লেগে রয়েছে।
তখন পুলিশের মনে সন্দেহ দেখা দেয় যে এই রক্ত হয়তো চোরের। কেননা বাড়ির মালিক ঘরের দেয়ালে এরকম রক্তের দাগ দেখলে সেটা নিশ্চয়ই পরিষ্কার করে ফেলতেন।
পুলিশ বলছে, তাদের ধারণা হয় চোর যখন চুরি করছিল -তখন হয়তো এই দুটো মশা তাকে কামড়েছিল এবং তার রক্ত পান করেছিল।
তারা ধারণা করে যে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার যাওয়ার আগে চোরই হয়তো মশা দুটোকে দেয়ালে চেপ্টে মেরে ফেলেছে।
মশার রক্ত সংগ্রহ
পরে পুলিশ দেওয়াল থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মশার রক্ত সংগ্রহ করে তার ডিএনএ নমুনা বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়।
পরীক্ষায় ঐ নমুনার সাথে তালিকাভুক্ত এক অপরাধীর ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া যায়।
বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:
ইউক্রেনের শস্যবাহী প্রথম জাহাজটি বন্দর ছেড়েছে
নদীতে পড়ে যাওয়া শিশুকে ফেলে চলে গেল লঞ্চ, উদ্ধার করলেন জেলেরা
তুরস্কের বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন কী, কেন কিনছে বাংলাদেশ
সন্দেহভাজন ওই চোরের নাম চাই। ঘটনার ১৯ দিন পর তাকে গ্রেপ্তার করে জেরার করার সময় সে চুরির কথা স্বীকার করে। সে পুলিশকে জানায়, এই ঘটনা ছাড়াও সে ওই এলাকার আরো তিনটি বাড়িতে চুরির সাথে জড়িত ছিল।
সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। খুব শীঘ্রই তার বিচার শুরু হবে।
অভিনব উপায়ে চোর ধরার এই খবরটি প্রকাশিত হলে চীনে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এনিয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন এবং তারা মজার মজার মন্তব্য করেন - যা হাস্যরসের সৃষ্টি করে।
চীনের সোশাল মিডিয়া উইচ্যাট ব্যবহারকারী একজন মন্তব্য করেন, "চোরের কী সাহস! চুরি করার পরেও ওই বাড়িতে সে রাত কাটিয়েছে। তার বড় ধরনের মানসিক সমস্যা থাকতে পারে।"
আরেকজন লিখেছেন, "এ হচ্ছে মশার প্রতিশোধ। আমি ভেবেছিলাম মশা কোনো কাজের না। কিন্তু এখন দেখছি আমি ভুল।"
অপরাধীদের জন্য বার্তা
সারা বিশ্বেই অপরাধীর ধরা পড়া এবং অপরাধের রহস্য ভেদ করার পেছনে ডিএনএ পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢাকায় সিআইডি পুলিশের এক কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, যিনি কয়েক বছর পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি বলছেন ফরেনসিক পরীক্ষার দিক থেকে চীনে চোর ধরার এই ঘটনা স্বাভাবিক একটি বিষয়।
"বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে এসব ফরেনসিক পরীক্ষাগুলো করা হয় - যার মাধ্যমে অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে," বলেন তিনি।
তিনি জানান, বাংলাদেশেও এধরনের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বহু অপরাধীকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশেষ করে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে এই ডিএনএ বিশ্লেষণের প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রুমানা আক্তার বলেন, "বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে অপরাধীদের এখন আর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত তারা বুঝে উঠতে পারে না যে এতো এতো সূক্ষ্ম জিনিসের মধ্য থেকেও তদন্তের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব।"
আরো পড়তে পারেন:
মর্গে ধর্ষণের আরো এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, ঠেকানোর কোন উপায় নেই
ধর্ষণ নিয়ে মামলা করতে দেরি হলে সমস্যা কোথায়?
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ 'টু ফিঙ্গার টেস্ট’ আসলে কী?
মৃত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে ডোম গ্রেফতার হন যেভাবে
বছর তিনেক আগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রাখা বেশ কয়েকজন মৃত নারীকে ধর্ষণের ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে।
কিন্তু কে বা কারা ধর্ষণ করছিল তার কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না।
রুমানা আক্তার বলেন, "নির্জন মর্গে সাধারণ লোকজনের প্রবেশাধিকার ছিল না। ভুলেও কেউ সেখানে উঁকি মেরেও দেখে না। আর এই সুযোগে মর্গের মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো মুন্না ভগত নামের এক ডোম।"
পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালে ঢাকায় বেশ কিছু অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানা থেকে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে যেসব নমুনা পাঠানো হয় - তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়।
এসব অপমৃত্যুর ঘটনায় নিহতরা সবাই নারী ও কিশোরী।
তাদের মধ্যে সাতজনের কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনায় বীর্যের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এবং বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, এসব নমুনার ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায় - সাতজন নারীর আলামতেই একজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
রুমানা আক্তার বলেন, "এসব নমুনা বারবার পরীক্ষা করে একই ফলাফলের বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। তাহলে কি একজন সিরিয়াল কিলার টার্গেট করে বিশেষ কোনো নারীকে বাছাই করছে এবং জ্যাক দ্য রিপারের মতো আগে ধর্ষণ করে পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করছে?"
তিনি বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান যে প্রতিটি ভিকটিমের ময়নাতদন্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গে।
পুলিশ তখন সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তদন্ত শুরু করলে মুন্না ভগত নামের একজন ডোম হঠাৎ করেই গা ঢাকা দেন।
পরে তাকে গ্রেফতার করে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে দেখা যায় যে ভিকটিমদের দেহে যে বীর্য পাওয়া গিয়েছিল - তা মুন্না ভগতেরই।
পুলিশ বলছে, পরে তিনি মৃত নারীদের ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মৃত মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক দোষের কিছু নয়।
(ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনতে পাবেন বিজ্ঞানের আসরে। প্রচারিত হবে ৩রা অগাস্ট বুধবার, রাতের অনুষ্ঠান পরিক্রমায়)