করোনাভাইরাস: ভারতে লকডাউনের মধ্যে কী করছেন ঘরবন্দি মানুষ
করোনাভাইরাস: ভারতে লকডাউনের মধ্যে কী করছেন ঘরবন্দি মানুষ
দেশব্যাপী 'জনতা কারফিউয়ে'র দিন থেকে ধরলে প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছেন - বাকি ভারতের মানুষের মতোই।
খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বেরুনো নিষেধ। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বেরলেই পুলিশ লাটিপেটা করছে।
তাই বেশিরভাগ মানুষই গৃহবন্দি হয়ে আছেন সপরিবারে।
কীভাবে সময়টা কাটছে ঘরের চারদেয়ালের মধ্যে ২৪ ঘন্টা?
কলকাতার বাসিন্দা সুজাতা ঘোষ তার স্বামী আর কন্যা নিয়ে কী করছেন সারাদিন?
"চারদিকে এত নেতিবাচক খবর, তার মধ্যেই পজিটিভ ব্যাপারটা হলো বহুকাল পরে স্বামী, কন্যার সঙ্গে টানা একসঙ্গে থাকা হচ্ছে। সব পরিবারেই সবাই এক সঙ্গে থাকতে হচ্ছে, অন্য সময়ে তো শুধু দৌড়ে বেড়াতে হয় আমাদের" - বলছিলেন সুজাতা ঘোষ।
"গৃহকর্মীরা তো আসতে পারছেন না, তাই ঘরের কাজগুলোও করতে হচ্ছে। এরমধ্যে মেয়ে খুব বই পড়তে পছন্দ করে, বই পড়ছে, খুব সুন্দর ছবি আঁকছে দেখলাম, নাচ করছে। এইভাবেই সময় কাটছে," বলছিলেন মিসেস ঘোষ।
বড়রা মেনে নিয়েছেন যে কেন লকডাউন প্রয়োজন। কিন্তু শিশুদের মন মানতে চাইছে না। তারা চায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেতে।
কিন্তু বাবা মায়ের কথায় মনমরা হয়ে বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে তাদের - কোনও উপায় নেই।
উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার এক গৃহবধূ অনসূয়া মুখার্জীর ছোট পুত্রের বয়স নয় বছর। কীভাবে সামলিয়ে রাখছেন তাকে?
মিসেস মুখার্জীর কথায়, "প্রথম দিকে বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল ওকে সামলানো। বিশেষ করে বিকেল বা সন্ধ্যেবেলাটা - যখন ওর খেলার সময়। সামনেই বড় মাঠ, কিন্তু ও যেতে পারছে না - এটাই ওর মন খারাপের কারণ ছিল।"
"তবে এখন দেখছে ওর কোনও বন্ধুই বেরুচ্ছে না। তাই কিছুটা মেনে নিয়েছে। আর আমরাও ওকে বাড়িতেই কিছু ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করাচ্ছি, বা ক্যারম, লুডোর মতো ইন্ডোর গেমস নিয়ে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করছি।"
মনোবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, চারদিকে করোনা সংক্রান্ত নেতিবাচক খবর আর ঘরবন্দি দশার মধ্যে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে অন্য সময়ে যে সব করা হয়ে ওঠে না নানা কাজের চাপে, সেগুলোই করা উচিত।
কলকাতার মনোবিদ ডা. জয়রঞ্জন রাম পরামর্শ দিচ্ছেন এই পরিস্থিতিটাকে কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
"এটা তো খুবই কঠিন সময় আমাদের সামনে। এই পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি সবাইকে বলছি এই সময়টা সকলে একসঙ্গে থাকার সুযোগ হিসাবে দেখা উচিত - সম্পর্কগুলো আরও গাঢ় করে তোলার একটা চেষ্টা আমরা করতে পারি।"
তার কথায়, "সময়টা কাটানোর জন্য একটা স্ট্রাকচার করে নিতে হবে - কখন কী করবেন আপনি। ঘরবন্দি জীবনে একটা বৈচিত্র আনতেই হবে। শারীরিক এক্সারসাইজ একটা অত্যন্ত জরুরী - ছোট আর বড় - দুজনদের ক্ষেত্রেই। বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্যও একটা নির্দিষ্ট সময় রাখতে হবে।
"পুরোনো ছবির অ্যালবাম খুঁজে বার করে বাচ্চাদের সঙ্গে বসে দেখুন - তাতে ওরা আপনাদের জীবনের অনেক নতুন ঘটনা জানতে পারবে, আত্মীয় স্বজন - যাদের সচরাচর দেখে না, তাদের চিনতে শিখবে। আর এখন যেহেতু বাড়ির অনেক কাজ আমাদের নিজেদেরই করে নিতে হচ্ছে, সেই কাজে বাচ্চাদেরও সামিল করুন। এরফলে ওদের কিছুটা সময়ও কাটবে আর নিজের কাজ নিজে করে নিতে শিখবে।"
কলকাতার বাসিন্দা, এক বহুজাতিক সংস্থার বিপণন বিভাগের দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মরত গোরা মুখার্জী সপ্তাহের তিন-চারদিনই বাইরে থাকতেন। হঠাৎ করেই গৃহবন্দি ২৪ ঘন্টার জন্য।
বলছিলেন, বহু দিনের ইচ্ছা ছিল কবিতা পাঠ করার। ঘরে বসে তা নিয়েই পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন তিনি।
"টিভি, ইন্টারনেটে এত খারাপ খবর করোনা নিয়ে। শুধু ওগুলোই দেখতে থাকলে করোনায় মরি না মরি ডিপ্রেশানেই তো মরে যাব। তাই কাজের চাপে এতদিন যেসব করা হয়ে ওঠে নি যেমন গান গাওয়া, কবিতা পড়া - সেগুলোই করছি।
"বাংলা , উর্দু, হিন্দি কবিতা রেকর্ড করছি। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ট্র্যাক লাগিয়ে এডিটিং করে বন্ধুদের পাঠিয়ে জানতে চাইছি কেমন লাগল বল। ছেলে, স্ত্রীকেও বলছি যে ওরাও যেন নিজেদের মতো করে ক্রিয়েটিভ কিছু করে।"