হোয়াইট হাউজের দৌড়ের নিয়মাবলী কী? একনজরে মার্কিন নির্বাচনের খুঁটিনাটি
আর মাত্র একদিন, এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে ৪৬তম রাষ্ট্রপতি বেছে নেওয়ার নির্বাচন। ইতিমধ্যেই সেদেশের নথিভুক্ত ভোটারদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ভোটার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন আগাম ভোট বা ডাক যোগে। মার্কিন মুলুকে আগাম নির্বাচনের সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙেছে বড় ব্যবধানে। এই পরিস্থিতিতে কোন দিকে ঝুঁকেছে আমেরিকার নির্বাচনী পাল্লা? একই প্রশ্ন সবার মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল আসার আগে এক নজরে জেনে নিন এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি।
বাইডেন না ট্রাম্প, হোয়াইট হাউজের দৌড়ে প্রভাবশালী মার্কিন-ভারতীয়রা ঝুঁকে কার দিকে?

প্রার্থী : ডোনাল্ড ট্রাম্প, রিপাবলিকান
১৯৪৬ সালের ১৪ জুন জন্ম নিয়েছেন এই রিপাবলিকান নেতা। ২০১৬ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে পেশায় ব্যবসায়ী এবং টিভি শো খ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলেন মাই পেন্স। বর্তমানে তিনিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে ৬ বার মার্কিন হাউজ ইফ রিপ্রেজেন্টেটিভে নির্বাচিত হয়েছেন পেন্স। তাছাড়া ইন্ডিয়ানার গভর্নরও থেকেছেন তিনি।

প্রার্থী : জো বাইডেন, ডেমোক্র্যাট
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম নিয়েছে ডেমোক্র্যাটদের তরফে মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জো বাইডেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ওবামা প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকেছেন জো বাইডেন। ১৯৭২ সালে ডেলাওয়্যার থেকে ২৯ বছর বয়সে প্রথম বার সেনেটর হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাইডেন। এরপর তিনি টানা ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন সেনেটে। সাম্প্রতিককালে রিপাবলিকান পার্টির নীতি হল, করের হার কমানো, বন্দুক রাখার অধিকার এবং অভিবাসনের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে। নাগরিক অধিকার, অভিবাসন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে তাদের উদারপন্থার জন্যে দলটি পরিচিত। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গিয়েছে যে, আমেরিকার শহরাঞ্চলে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন তুলনামূলক ভাবে বেশি।

কীভাবে ভোট গ্রহণ হয় আমেরিকায়
মার্কিন সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের নিরিখে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে গেলে অন্তত ২৭০টি কলেজ জিততে হবে। এই ক্ষেত্রে পপুলার ভোটে জিতেও ইলেক্টোরাল কলেজে পিছিয়ে গদি হাতছাড়া হতে পারে।

দিততে হবে 'ইলেক্টোরাল কলেজ'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে প্রার্থীকে আসলে 'ইলেক্টোরাল কলেজ' ভোট জিততে হয়। ইলেক্টোরাল কলেজ 'পপুলার' ভোট বা সাধারণ ভোটারদের ভোটের উপর সেটা নির্ভর করে। যদিও পপুলার ভোটে জিতেও ইলেক্টোরাল কলেজে জয় অধরা থাকতে পারে। যেমন, হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ পপুলার ভোট বেশি পেলেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।

ইলেক্টোরাল কলেজ কীভাবে নির্ধারিত হয়?
যুক্তরাষ্ট্রে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা নির্ধারিত হয়ে থাকে রাজ্যগুলোর জনসংখ্যার ভিত্তিতে। যে রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, তার ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যাও ততটা বেশি। প্রতিটি রাজ্যে বরাদ্দ থাকা ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা সেই রাজ্যে জনপ্রতিনিধি ও সেনেটরের সংখ্যার সমান থাকে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ। তাছাড়া টেক্সাসে ৩৮টি এবং ফ্লরিডায় ২৯টি করে কলেজ ভোট রয়েছে।

এগিয়ে কোন প্রার্থী?
যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যই চিরাচরিতভাবে 'রিপাবলিকান' বা 'ডেমোক্র্যাট' বলে চিহ্নিত হয়ে এসেছে। তবে যে রাজ্যগুলিতে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভোট হয়, সেগুলিকে ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বলে উল্লেখ করা হয়। এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট হিসাবে চিহ্নিত ২০৩টি কলেজ ভোট যেতে চলেছে বাইডেনের পক্ষে। অপরদিকে ১২৫টি রিপাবলিকান কলেজ ভোট পেয়ে যাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে আসল লড়াই হবে ২১০টি ব্যাটলগ্রাউন্ড কলেজ আসনের জন্য। এর মধ্যে সব থেকে বড় রাজ্যগুলি হল টেক্সাস এবং ফ্লরিডা। টেক্সাসে ৩৮টি এবং ফ্লরিডায় ২৯টি করে কলেজ ভোট রয়েছে।

এই নির্বাচনে আরও যাঁরা নির্বাচিত হবেন
তবে ট্রাম্প-বাইডেন লড়াইয়ের উপর মূল ফোকাস থাকলেও ভোটাররা মার্কিন কংগ্রেসের নতুন সদস্য নির্বাচনের জন্যও ভোট দেবেন এই নির্বাচনে। এবছর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫টি আসনের সবগুলোতেই নির্বাচন হচ্ছে, আর সেনেট নির্বাচন হচ্ছে ৩৩টি আসনে। বর্তমানে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা, আর সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেন রিপাবলিকানরা।
