প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি কিভাবে দেখছেন ডাক্তাররা
বাংলাদেশে রাজধানীর বাইরে সরকারী হাসপাতালে যেসব ডাক্তার-নার্স তাদের কাজে উপস্থিত থাকেন না, তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার বাইরে সরকারী হাসপাতালে যেসব ডাক্তার-নার্স তাদের কাজে উপস্থিত নিশ্চিত করতে প্রশাসন অর্থ্যাৎ সিভিল সার্জন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের একজন নেতা।
গতকাল ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যে ডাক্তার জেলায় যাবেন না তাকে ওএসডি করে নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে।
ঢাকার বাইরে জেলা উপজেলাগুলোর হাসপাতালে ডাক্তাররা কাজ করতে চান না এবং তাদের সেখানে পাওয়া যায় না এই অভিযোগ বহু পুরনো। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকাসহ দেশের আটটি জেলার এগারোটি হাসপাতালে গিয়ে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকদের অনুপস্থিত পেয়েছেন।
এরই পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী এখন যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছেন, একে ডাক্তাররা কিভাবে দেখছেন?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মোহাম্মদ এহতেশামুল হক চৌধুরী বলছেন, "প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের সাথে কোন দ্বিমত নেই।"
"কিন্তু কেন ডাক্তার গ্রামে যাচ্ছেন না বা ডাক্তাররা কতটুকু ফাঁকি দিচ্ছেন - সেটি কিন্তু প্রশাসন অর্থাৎ জেলার সিভিল সার্জন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তারা কিন্তু ঠিকমতো তদারকি করছেন না।"
বিএমএ এ ধরনের উদ্যোগকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, "এগুলো হল উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে দেয়ার চেষ্টা। যাদের তদারকি করার কথা তারা অন্য কাজে ব্যস্ত।"
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেয়না কেন?
'দেবতুল্য' ডাক্তার নিয়ে কেন এত ক্ষোভ?
বাংলাদেশের ভিআইপিরা বিদেশে চিকিৎসা নেন কেন?
বাংলাদেশে চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস কেন করেন?
তদারকির বিষয় বারবার গুরুত্ব দিলেও, বাংলাদেশে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সীমা নেই।
২০১৫ সালের সরকারি স্বাস্থ্য বুলেটিনের হিসেবেই দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৪টি জেলায় ৪০-৬০ভাগ পর্যন্ত চিকিৎসক পদে শূন্যতা রয়েছে। কয়েকদিন আগে আটটি জেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান নিয়ে এখনো আলাপ চলছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা গড়ে যে সময় দেন সেটি এক মিনিটেরও কম।
যে কারণে গ্রামে যেতে চান না ডাক্তাররা
বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে চিকিৎসক নেতা মি. চৌধুরী বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন।
সুযোগ-সুবিধার অভাব
মি. চৌধুরী বলছেন, "যেমন ধরেন উপজেলা একজন ডাক্তার গেলো, বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে একটি কথা বলেছেন। সেটি হল গ্রাম হবে শহর। অর্থাৎ শহরের সব সুবিধা সেখানে পাওয়া যাবে।"
অথচ "ডাক্তাররা গ্রামে থাকতে চায়না কারণ সেখানে ভাল স্কুল নেই, পরিবহন নেই, এইগুলো কিছু সমস্যা আছে" বলে তিনি মনে করেন।
যন্ত্রপাতি ও লোকবলের ঘাটতি
এছাড়া সরকারী হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতি সহ আরও কিছু জিনিসের ঘাটতির কথ উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলছেন, "যেখানে কাজ করবো, ধরুন সেখানে কোন এক্সরে মেশিন নাই। অথবা মেশিন আছে টেকনিশিয়ান নাই। তাহলে আমি কাজ করবো।"
"ধরেন আমি গাইনোকোলজিস্ট কিন্তু অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার লোক নাই তাহলে সিজারিয়ান করতে পারবো না।"
প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম?
চিকিৎসকেরা সরকারি চাকুরী বহাল রেখে প্রাইভেট প্রাকটিসে বেশি মনোযোগী বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। শহরে ডাক্তারদের একটি বড় আকর্ষণ প্রাইভেট প্র্যাকটিস যেখানে অনেক বেশি উপার্জন করা যায়।
তাই গ্রামের দিকের দায়িত্বে তারা অবহেলা করেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি বলছেন, ডাক্তাররা এত বেশি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন বলে তিনি মনে করেন না।
তার মতে, এটি হয়ত বড় বড় ডাক্তারদের সম্পর্কে বলা যায়।
বাংলাদেশে চিকিৎসকদের ঢাকার বাইরে কাজ না করতে চাওয়ার ব্যাপারে বহুবার সরকারিভাবে সতর্ক করা হলেও সেনিয়ে তেমন কিছু পরিবর্তন দেখা যায়নি।
এখন দুদকের কর্মকাণ্ড ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সরকার আগের থেকে কিছুটা কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
অন্যান্য খবর:
বেওয়ারিশ লাশের কেন পরিচয় মেলে না
বিশ্বের সবচেয়ে হালকা উপগ্রহ নির্মাণের নেতৃত্বে ১৯বছরের তরুণ
সুন্দরবনে স্যাটেলাইটযুক্ত কচ্ছপগুলো কিভাবে এলো?