For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

ক্রিকেট: আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ করে হারিয়ে যাওয়া ঢাকার দু'টি ক্লাব এবং একজন ক্রিকেটারের গল্প

ক্রিকেট: আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ করে হারিয়ে যাওয়া ঢাকার দু'টি ক্লাব এবং একজন ক্রিকেটারের গল্প

  • By Bbc Bengali

ফিয়ার ফাইটার্স ক্রিকেট ক্লাব - বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব একটা শোনা যায় না এমন একটি ক্লাব। এই ক্লাবটির নাম খবরের কাগজে বড় করে একবারই এসেছে, যেবার এটি চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হলো ঢাকার ক্রিকেট থেকে।

২০১৭ সালের ঘটনা এটি।

আম্পায়ারিং নিয়ে সাকিব আল হাসানের সাম্প্রতিক 'কথিত' প্রতিবাদের পরে এই ক্লাবের কথা আরও একবার উঠে আসে অনেকটা পুরনো ঘটনা মনে করিয়ে দিতে যে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ একেবারে নতুন কোন ঘটনা নয়।

সাকিব নিজে বলেননি যে তিনি আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ করতেই মাঠে মারাত্মক এক কাণ্ড করেছেন। তবে ক্রিকেট নিয়ে যারা খোঁজ-খবর রাখেন, তাদের অনেকেই মনে করেন যে দেশের এই তারকা খেলোয়াড় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েই লাথি মেরে স্ট্যাম্প ভেঙ্গেছিলেন। ওই কাণ্ডের পর মোহামেডানের হয়ে খেলা সাকিব শাস্তি পেয়েছেন তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ও পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা।

কিন্তু এর আগে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ঢাকার ক্রিকেট থেকে চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে দুটি ক্লাব, আর তাদের দুই জন খেলোয়াড় পেয়েছে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা।

ওই দুই ক্লাবের একটি ফিয়ার ফাইটার্স ক্রিকেট ক্লাব।

আম্পায়ারিং নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক ওঠার পর ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা আনিস উদ্দিন চার বছর আগের ঘটনা নিয়ে কথা বলেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে।

"নানা কারণেই আমাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত সিদ্ধান্ত আসতো। আম্পায়ারদের কার্যকলাপ সম্পর্কে একটি বা দুটি লাইন বলা তো মুশকিল, কারণ দেখা গেছে কোন সিদ্ধান্তই আমাদের পক্ষে হোক বা বিপক্ষে হোক, সঠিক হতো না," আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে অভিযোগ করছিলেন তিনি।

বাংলাদেশর ঘরোয়া ক্রিকেট যারা অনুসরণ করেন এবং এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেন, তাদের মতে, ২০১৭ সালের ওই ঘটনা কিংবা সাকিবের এই স্ট্যাম্পে 'অশোভন' লাথি - এসব ঘটনা বাংলাদেশের মাঠের ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের দৈন্যদশাই কেবল তুলে ধরেছে।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের অঙ্গনে আছে ২১ বছর ধরে। কিন্তু এখনও আইসিসি'র এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের কোন আম্পায়ারই জায়গা করে নিতে পারেননি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বাংলাদেশের আম্পায়ার আছেন চারজন - শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ, তানভীর আহমেদ, মাসুদুর রহমান মুকুল ও গাজী সোহেল। কিন্তু তারা এলিট প্যানেলের অংশ নন।

ক্রিকেট সম্পর্কে আরও কিছু খবর:

আম্পায়ারিং নিয়ে একের পর এক অভিযোগ ও প্রশ্ন মাঠেই উঠেছে, এরপর মাঠ থেকে সেটা উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে - ক্রিকেট ভক্ত থেকে শুরু করে বিশ্লেষকদের বয়ানে।

বাংলাদেশে কোন আম্পায়ার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের এলিট প্যানেলে নেই কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে একজন সিনিয়র আম্পায়ার ও আম্পায়ারদের প্রশিক্ষক এনামুল হক মনি বলেন যে আইসিসি'র এলিট প্যানেলে নাম লেখানোর যোগ্যতা বাংলাদেশি আম্পায়ারদের হয়েছে কি-না, সেই বিচার করার মতো ব্যবস্থা নেই।

"আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামোতে সেই সুবিধাগুলো নেই। ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়ায় ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই সুবিধা আছে। কারণ ওখানে ঘরোয়া ক্রিকেট প্রযুক্তিসম্মত টেলিভিশনে দেখানো হয়।"

তবে এনামুল হক মনি মনে করেন যে বাংলাদেশের আম্পায়াররা আন্তর্জাতিক ম্যাচে খুব খারাপ করছেন না। "খুব বেশি ভুল কিন্তু দেখা যায় না।"

তবে প্রশ্ন ওঠে, ঘরোয়া ক্রিকেটে তাহলে আম্পায়ারিংয়ের মান সন্তোষজনক হচ্ছে না কেন?

এনামুল হক মনি বলছেন যে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোন "টেলিভাইসড প্রমাণ" না থাকায় একজন আম্পায়ার ঠিক কাজ করছেন, না কি ভুল করছেন, তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়।

ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন ওঠার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ারস কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম স্বপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে তিনি এ বিষয়ে এখন কোন মন্তব্য করতে চাইছেন না।

তবে একজন আম্পায়ার নাম না জানানোর শর্তে বলেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা থাকছেই। তার মতে, বাংলাদেশে কখনও কখনও "আম্পায়ারিং হয় আবদারের ভিত্তিতে"। ওই আম্পায়ার বলেন, কখনও কখনও আম্পায়ারিং হয় নির্দিষ্ট কোনও দলকে জয় পাইয়ে দিতে কিংবা কোনও দলকে জয় থেকে দূরে রাখতে।

এক্ষেত্রে "ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীন রাজনীতি" বড় ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচনের কাউন্সিলরশিপ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিবি'র নির্বাচন হয় কাউন্সিলরশিপের ভিত্তিতে। আর এই কাউন্সিলরশিপ নির্ধারিত হয় লিগে ক্লাবগুলোর নিজেদের অবস্থানের ভিত্তিতে।

তাই এই রাজনীতিতে টিকে থাকতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেট লিগে ক্লাবগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে টিকে থাকা জরুরি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই "টিকে থাকার ক্ষেত্রে" আম্পায়াররা একটা বড় ভূমিকা পালন করেন।

একটি লিগের শীর্ষে থাকা ছয়টি ক্লাব ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে দুটো ভোট দেয়ার অধিকার লাভ করে, অর্থাৎ এসব ক্লাব দু'জন কাউন্সিলর পাওয়ার অধিকারী হয়।

এক কথায় বলা যায়, সুপার সিক্স পর্যায়ে উত্তীর্ণ ক্লাবগুলোই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সার মনে করেন যে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায়শই-প্রশ্ন-ওঠা-আম্পায়ারিংয়ের পেছনে রয়েছে ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষ্যা।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগে অনেকটা নিয়মিত ঘটনা এমন আম্পায়ারিং, যদিও প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ হয় না। "আম্পায়ারিং এখন একটা করুণ অবস্থায় আছে। অনেক সময় এমন সিদ্ধান্ত আছে যাতে একজন ক্রিকেটারের মোরালই নষ্ট হয়ে যায়।"

আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে কাউন্সিরশিপের সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন তিনি এভাবে: "ক্লাবগুলোর সাথে যেসব কর্মকর্তারা জড়িত, তারা কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার জন্যই ক্লাবগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। এরপর তারা বিসিবিতে বিভিন্ন পদে বসেন।"

এম এম কায়সার বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের এসব ঘটনা এমনভাবে আসে যেন এগুলো একেকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিন্তু তা নয়। এটা হয়েই আসছে, হঠাৎ কেউ প্রতিবাদ করলে দু্-একটা কথা হয়, নতুবা হয় না।

সুজন মাহমুদ কেমন আছেন?

ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে আনন্দেই আছেন বলে জানালেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিভাগে এক সময় ক্রিকেট খেলা সুজন মাহমুদের।

ক্রিকেট তিনি ছেড়েছেন, না-কি তাকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে - এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ ২০১৭ সালে যে দু'জন খেলোয়াড় ১০ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে, তিনি তাদেরই একজন।

তরুণ কোন ক্রিকেটারের জন্য এক দশকের নিষেধাজ্ঞা মানে এটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া যে তিনি আর মাঠে ফিরছেন না। কোন কারণে ফিরলেও পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে তার ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।

সুজন মাহমুদ বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে সুপরিচিত কোন নাম না, তবুও অনেক সমালোচকের মতে তিনি একটা চিহ্ন রেখে গেছেন বা রাখতে চেয়েছিলেন।

ঘটনার আকষ্মিকতায় হোক কিংবা প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই হোক - ২০১৭ সালে তিনি এবং তাসনিম হাসান নামের আরেক সেকেন্ড ডিভিশনে খেলা ক্রিকেটার ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যান।

চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হয় তাদের ক্লাব - লালমাটিয়া ক্লাব এবং ফিয়ার ফাইটার্স ক্রিকেট ক্লাব। নিষিদ্ধ হন কোচেরাও।

ঘটনা ছিল এমন - দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটের একটি ম্যাচে চার বলে ৯২ রান দেন সুজন মাহমুদ, আর তাসনিম হাসান দেন ৭ বলে ৭৯ রান। সুজন এদিন ৬৫টি ওয়াইড বল করেন।

পরে ক্লাব দুটো বিবৃতি দিয়ে জানায় যে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই ওই কাণ্ড ঘটান দুই ক্লাবের দুই বোলার।

চার বছরেরও বেশি সময় আগের ওই ঘটনা নিয়ে আর বলতে চান না সুজন মাহমুদ। অনেকটা অভিমানের সুরে সুজন বলেন, "যখনই আম্পায়ারদের নিয়ে কোন ঘটনা হয়, তখনই আমি এমন ফোন পাই। আমার আসলে ভালো লাগে না এসব নিয়ে কথা বলতে, আমি এখন ভালো আছি।"

ঢাকার বাইরে একটি বেসরকারি চাকরি করেন এখন সুজন। কিন্তু যে "কারণে" ক্রিকেট ছাড়তে হলো, সেই ঘরোয়া আম্পায়ারিংয়ের ক্ষেত্রে কোন উন্নতি কি তিনি দেখছেন?

বিবিসি বাংলার সাথে ফোনালাপে সুজন বললেন যে তার এখন খুব একটা ক্রিকেট দেখা হয় না। তবে পরিস্থিতি সহসাই বদলাবে না বলেই তিনি মনে করেন।

"আপনারা তো দেখছেনই কী হয় বা না হয়। সবই একই রকম চলবে," বেশ হতাশার সুর শোনা গেল তার কণ্ঠে।

যখন একটা ইস্যু এসে পড়ে, কেবল তখনই সেই ব্যাপার নিয়ে সাংবাদিকরা কাজ করেন বলে আক্ষেপ করেন সুজন মাহমুদ।

আম্পায়ার (প্রতীকী ছবি)
Getty Images
আম্পায়ার (প্রতীকী ছবি)

যা ঘটেছিল

২০১৭ সালের ১১ই এপ্রিল দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগের একটি ম্যাচে এক ওভারের প্রথম চার বলে ৯২ রান হওয়ার সেই ঘটনা ঘটেছিল। আর এরপর সেই খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সাইটে ছড়িয়ে পড়েছিল।

লালমাটিয়া ক্লাবের বোলার সুজন মাহমুদ প্রতিপক্ষ 'এক্সিওম ক্রিকেটারস'-এর বিরুদ্ধে বল করতে গিয়ে নজীরবিহীনভাবে একের পর এক নো-বল এবং ওয়াইড বল দেন। চার বলে ওয়াইড করেন ৬৫ বার। ফলে ওই চার বলে তার দেয়া রান দাঁড়ায় ৯২।

লালমাটিয়া ক্লাবের পক্ষ থেকে পরে বলা হয় যে আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বোলার এই কাণ্ড করেছেন।

ওই ঘটনার পরপরই জানা যায়, আগের দিনও একটি ম্যাচে একই রকম ঘটনা ঘটেছে।

ফিয়ার ফাইটার্স ক্লাবের বোলার তাসনিম হাসান আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে ১ ওভার ১ বলে ওয়াইড আর নো বল করে ৬৯ রান দেন।

পরে কর্তৃপক্ষ বোলার সুজন মাহমুদ এবং তাসনিমকে ক্রিকেট থেকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। আর চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করে লালমাটিয়া ক্লাব এবং ফিয়ার ফাইটার্সকে।

এসব ঘটনা "বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে" বলে জানানো হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে।

English summary
How Dhaka clubs has gone away after as a result of umpiring fault
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X