শেখ হাসিনা: মেগাপ্রকল্পে দেশি বিদেশি ঋণ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে- বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে মেগাপ্রকল্প নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। মেগাপ্রকল্পগুলোতে সরকারের নেয়া দেশি বিদেশি ঋণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, দেশি বিদেশি ঋণ যাতে বোঝা না হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ।
বাংলা নববর্ষের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, "শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে। আমরা দেশি-বিদেশি ঋণ নিচ্ছি। তবে তা যাতে বোঝা হয়ে না ওঠে সে দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।"
পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে- কোন ঋণ নেয়া হয়নি, তিনি সেটি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের ঋণ নিয়ে কথা বললেন শেখ হাসিনা। বিদেশি ঋণ নিয়ে ব্যাপক বিপাকে থাকা শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে ৬ই এপ্রিল জাতীয় সংসদে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।
সে ব্যাপারে তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। বাংলাদেশ যত ঋণ নিয়েছে তা সব সময় শোধ করা হয়েছে বলে সংসদকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এমন সময়ে নতুন করে ঋণ নিয়ে তার এই বক্তব্য এলো, যখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সাময়িকভাবে খেলাপি হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু ছাড়াও বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে চলমান রয়েছে বিদেশি ঋণ ভিত্তিক বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প। রাশিয়ার দেয়া ঋণ সহায়তায় তৈরি হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।
এক লাখ তের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় বাজেটের প্রকল্প। এছাড়া জাপানের ঋণে ঢাকায় তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি কতটা হলো
বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প ঘিরে জনদুর্ভোগের অবসান কবে হবে?
বাংলাদেশে সরকার প্রধানেরা যেভাবে ক্ষমতায় এলেন ও গেলেন
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়েক মাস পরে চালু হবে পদ্মা সেতু, এ বছরের শেষ নাগাদ মেট্রোরেল আংশিক চালু হবে। ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত এটি শুরুতে চালু করা হবে।
বারো হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করছে সরকার।
দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে যা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, "কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে দেশে চা-সহ কোন পণ্যের ঘাটতি নেই।"
করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ভাষণে বলেছেন শেখ হাসিনা।
'ফকিন্নির বাজার' আর টিসিবির ট্রাকের লাইনে কম রোজগেরেদের ভিড়
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি কি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে
বাংলাদেশ চিনি, তেল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যে কবে স্বনির্ভর হবে
"আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার," বলেন তিনি।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি'র মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেয়া, ঢাকায় ফ্রিজার ভ্যানে করে মাংস, ডিম, দুধ বিক্রি, ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে চাল বরাদ্দ এরকম কয়েকটি সরকারি উদ্যোগের কথা তিনি তুলে ধরেছেন তার ভাষণে।
"সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবি'র দোকানে মানুষ ভিড় করবে-এটা স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?" প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং কিছু অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েই চলেছে, যা রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দিলেন।
এর বাইরে বাংলাদেশের জিডিপি'র প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বৃদ্ধি বিষয়গুলোও তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।