আমেরিকাকে টক্কর! মঙ্গল মিশনে চিন, কি বিশেষত্ব রয়েছে বেজিংয়ের মার্স রোভার ও মার্স ল্যান্ডারের
আমেরিকাকে টক্কর! মঙ্গল মিশনে চিন, কি বিশেষত্ব রয়েছে বেজিংয়ের মার্স রোভার ও মার্স ল্যান্ডারের
আগামী শনিবারের মধ্যে চিনের মঙ্গল অভিযান তিয়ানওয়েন-১-এর শুরু হওয়ার খবর ছিলই চিনের সংবাদমাধ্যমের সূত্রে। কিন্তু বর্তমান খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় অনুসারে সকাল ১০.১২-এ তিয়ানওয়েন-১-এর আওতায় মঙ্গলের পথে একটি অর্বিটার, একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভারকে নিয়ে মঙ্গলের পথে পাড়ি দিয়েছে চিনের সর্ববৃহৎ মহাকাশ রকেট 'লং মার্চ ৫'। ইতিমধ্যে জনসাধারণের কৌতূহল নিরসনের লক্ষ্যে চিন প্রশাসন বুধবার ওই ল্যান্ডার এবং রোভার-এর সম্পূর্ণ প্রকাশ করেছে।
রোভারের চালচিত্র
সূত্রের খবর, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ মঙ্গলে পোঁছাবে চিনের এই মহাকাশযান। মঙ্গলে অবতরণের পর থেকে প্রায় ৯০ দিন যাবৎ মঙ্গলভূমির পাথর ও মাটি পরীক্ষা করবে এই রোভার। রোভারটি পৃথিবীতে সমস্ত তথ্য পাঠাবে রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে। রোভারটিতে ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু একটি মাস্ট রয়েছে যাতে নির্ধারক যন্ত্র লাগানো রয়েছে। রোভারের মাথার উপরে দুটি প্যানারমা ক্যামেরা রয়েছে ধাক্কা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে। তাছাড়া একটি মাল্টিস্পেকট্রাল ক্যামেরা রয়েছে খনিজ দ্রব্য পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে।
সৌরশক্তির সাহায্যে কাজ চালাবে রোভার
সূত্রের খবর, রোভারটির উপরিস্থিত চারটি বৃহদাকার ডানায় সোলার প্যানেল বসানো রয়েছে, যা যন্ত্রটিকে শক্তি সরবরাহ করবে। চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন(সিএনএসএ)-এর চন্দ্র গবেষণা ও মহাকাশবিদ্যা কেন্দ্রের সহ-কর্ণধার লিউ টঙ্গজিই জানিয়েছেন, "পৃথিবী ও চন্দ্রের তুলনায় মঙ্গলগ্রহে অপেক্ষাকৃত কম সৌরআলোক পৌঁছায়। তাই রোভারটিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে এটি সুবিধামত ডানাগুলি এদিক ওদিক করে সৌরশক্তি সংগ্রহ করে নিতে পারে।"
মাটির ১০ মিটার গভীরের খবরাখবর তুলে আনতে সক্ষম রোভার
গবেষকরা জানিয়েছেন, রাডার, ম্যাগনেটোমিটার এবং অন্যান্য ভূতাত্বিক যন্ত্রপাতি থাকার দরুণ রোভারটি মঙ্গলভূমির ১০ মিটার গভীরের খনিজ পদার্থ নির্ধারণে এবং মাটির ১০০ মিটার গভীরে বরফের সন্ধানে সক্ষম। রোভারটির দেহ হালকা অথচ শক্ত শংকর-ধাতু দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে, মঙ্গলের দুরূহ পরিবেশেও এটি প্রায় ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার বেগে চলতে সক্ষম।
ল্যান্ডারের হাল-হকিকত
মানবসভ্যতার ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ১৭ বারের মধ্যে মাত্র ৮ বার মঙ্গলে পদার্পণ করতে পেরেছে মানবচালিত যন্ত্র। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লিউ জানিয়েছেন, "পৃথিবীর স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলের ঘনত্বের মাত্র ১%-এর সমান মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের ঘনত্ব। ফলত ল্যান্ডিংয়ের প্ল্যাটফর্মকে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে মঙ্গলপৃষ্ঠে নামাতে হয়, তাছাড়া মঙ্গলের ভুমিরূপ সংক্রান্ত সমস্যা তো আছেই।" ল্যান্ডারের কাজ হচ্ছে মূলত রোভারকে সুস্থ অবস্থায় মঙ্গলের ভূমিতে অবতরণ করানো। এক্ষেত্রে মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে ল্যান্ডারকে তার গতিবেগ ২০,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা থেকে শূন্যে নামিয়ে আনতে হয়, এই ৭ মিনিট তাই 'সেভেন মিনিটস অফ টেরর'(আতঙ্কের সাত মিনিট) নামে পরিচিত।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অবতরণ করবে ল্যান্ডার
লিউ জানিয়েছেন, "অবতরণের সময়ে তড়িৎ-চুম্বকীয় সিগন্যাল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকায় নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই)-এর প্রয়োগে ল্যান্ডার নিচে নামে।" একবার নেমে গেলে মঙ্গলের ভূমিতে রোভারের ঘুরে বেড়ানোর জন্যে র্যাম্প ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার চিনের হাইনান প্রদেশের ওয়েনচ্যাং স্পেস লঞ্চ সেন্টার থেকে লং মার্চ ৫ রকেট উৎক্ষেপিত হয়ে এগিয়ে চলেছে মঙ্গলের পথে এবং বিজ্ঞানীরা এর সফলতার বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। যদিও উৎক্ষেপণের আকস্মিকতায় হতবাক গোটা বিশ্ব।
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়ে জল মাপতে শুরু করল চিন! দিল্লির বিদেশনীতি নিয়ে বেজিং বার্তা