ফেসবুকে ইসলামের নবীকে হেয় করার করার জের: ভোলায় হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ও মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছিল
ফেসবুকে ইসলামের নবীকে হেয় করার করার জের: ভোলায় হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ও মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছিল
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামের নবীকে হেয় করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংস বিক্ষোভ ও পুলিশের গুলির ঘটনার কিছু পরই সেখানকার হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং বাড়িঘরে হামলা চালায় অজ্ঞাত সংখ্যক বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি।
এসব হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এ সময় মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বোরহাউদ্দিনে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আবুল কালাম আজাদের সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব তথ্য।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামের নবীকে হেয় করার অভিযোগকে ঘিরে বোরহানউদ্দিনে রোববার সকালে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে 'তৌহিদী জনতা'র ব্যানারে একটি সমাবেশে আসা লোকজনের সাথে এক পর্যায়ে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
এ সময় পুলিশ গুলি চালালে চার জন নিহত ও পুলিশসহ বহুলোক আহত হয়। এর আগে তিন দিন ধরে বোরহানউদ্দিনে বিক্ষোভ চলছিল।
এই বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে গত কয়েকদিন অনেক আলোচনা চললেও, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা, উপাসনালয়ে হামলার এসব খবর মূলধারার গণমাধ্যমে খুব একটা উঠে আসেনি।
- ধর্ম অবমাননার গুজব তুলে হামলা, কৌশল একই
- 'এসপি সাহেব বললেন, স্যার আমাদের বাঁচান'
- ভোলার ঘটনায় মামলা, হাজার হাজার আসামী
- ভোলায় বিজিবি মোতায়েন, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রবীন্দ্রপল্লী ভাওয়ালবাড়ি নামক এলাকায় এখনো সেদিনকার হামলার চিহ্ন রয়েছে।
বিবিসিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঐ সংঘর্ষে আহতদের হাসপাতালে নেবার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানকার হাসপাতাল পাড়া বলে পরিচিত একটি এলাকায় হামলা চালায়।
শুরুতে বাজারে একজন হিন্দু ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে।
এরপর সেখানকার একটি মন্দির ভাঙচুর হয়।
মন্দিরে হামলা চালিয়ে সবগুলো প্রতিমার মাথা ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা।
তছনছ করে মন্দিরের প্রধান মণ্ডপ, মন্দির চত্বরেই ভিন্ন মণ্ডপে কালী প্রতিমা ভাঙচুর করে।
এছাড়া মন্দিরের ভেতরের আসবাবপত্র, এবং মন্দিরের ভেতরের রান্নাঘরেও ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।
এরপর একই এলাকার আটটি বাড়িতে হামলা চালায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এর মধ্যে দুইটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তারা।
পুড়িয়ে দেয় একটি মোটরসাইকেল।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের একজন লক্ষ্মী রানী দে বলছিলেন, "আমার বাড়িতে যখন হামলা চালায়, তারা আমার ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, ঘরের ভেতরে খাটসহ অন্যান্য আসবাবপত্রেও আগুন দেয় তারা। খালি আগুনই দেয়নি, তারা লুটপাটও চালিয়েছে ঘরে।"
মিসেস দে অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা তার ঘরে লুটপাট চালিয়ে নগদ ১০-১৫ টাকা হাজার নিয়ে যায়।
বোরহানউদ্দিন বাজারে শ্রীশ্রী গৌর নিতাই আশ্রম নামক মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
সেখানে গত শনিবার কার্তিক-ব্রত নামে মাসব্যাপী এক উৎসব শুরু হয়। এখন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সে উৎসব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আশ্রমের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দাস বিবিসিকে বলেন, সকাল ১১টার পর সেই হামলা যখন শুরু হয়, অনেকেই 'বিস্মিত এবং ভীত' হয়ে পড়েন।
"বোরহানউদ্দিনে এমন হামলার ঘটনা খুবই বিরল। সেই ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল যে বছর, সে সময় এখানে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা হয়েছিল। এরপর এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।"
মিঃ দাস অভিযোগ করেছেন, মন্দিরের কাছেই অবস্থিত তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তার পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করে।
"যদিও হামলায় কেউ মারা যায় নাই, কিন্তু আমাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা নিরাপত্তাহীন বোধ করছি।"
তবে মিঃ দাস জানিয়েছেন, এসব হামলার ঘটনা নিয়ৈ মামলা করা হয়নি।
মঙ্গলবার পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে লিখিত তাদের অভিযোগ জানানোর কথা রয়েছে।
এদিকে, পুলিশ বলছে হিন্দুদের ওপর এরপরে যাতে আর কোন হামলা না হয়, সেজন্য তারা বিশেষ সতর্ক রয়েছে।
বোরহানউদ্দিন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেছেন, "এ ধরণের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুরো এলাকায় পুলিশের সঙ্গে র্যাব এবং বিজিবি টহল চলছে।"