যশোরে প্রসূতির মৃত সন্তান প্রসবের চেষ্টা করতে গিয়ে যা ঘটালেন আয়া
যশোরে প্রসূতির মৃত সন্তান প্রসবের চেষ্টা করতে গিয়ে যা ঘটালেন আয়া
পেটে ব্যথা নিয়ে যশোরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক প্রসূতি। পরীক্ষায় ধরা পড়ে গর্ভের শিশুটি মারা গেছে। প্রসূতিকে ঔষধ দিয়ে অপেক্ষা করা হচ্ছিল মৃত সন্তানটি প্রসবের জন্য। এক পর্যায়ে শিশুটির শরীরের কিছুটা অংশ বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু সেই অংশ ধরে টানাটানি করে দেহটি ছিড়ে ফেলেন হাসপাতালের এক আয়া। মৃত শিশুটির বিচ্ছিন্ন মস্তক রয়ে যায় প্রসূতির জরায়ুর ভেতর।
শনিবার যশোরের সরকারি আড়াইশো শয্যা হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটানোর পর সোমবার ওই আয়াকে অব্যহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে একটি বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।
প্রসূতি নারীর গর্ভ থেকে মৃতদেহের খণ্ডিত অংশ অবশ্য রবিবার বের করে এনেছেন চিকিৎসকেরা। তিনি এখন সুস্থ আছেন বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এক পর্যায়ে প্রসূতির জরায়ু থেকে মৃত সন্তানটির পা বেরিয়ে এসেছিল এবং ওই আয়া সেই পা ধরে টানাটানি করতে গিয়েই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
কিন্তু সরকারি হাসপাতালের আয়া কেন একজন রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন?
হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলছেন, তারাও একই প্রশ্ন করেছিলেন ওই আয়াকে। জবাবে আয়া তাদেরকে বলেছেন, "আমি দেখার চেষ্টা করছিলাম যে কি অবস্থা। তখন দেহটি পচা থাকার কারণে ছুটে পড়ে যায়।"
"যারা ক্রাইম করে বা কোন অঘটন ঘটায় তারা তো তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনে নানা কথা বলবেই। সে তোর আর বলবে না যে আমি টানাটানি করছিলাম।"
বক্তব্য জানার জন্য অভিযুক্ত আয়ার সাথে অবশ্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা যাচ্ছে, অভিযুক্ত আয়া মূলত একজন স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন, সরকারি নথিভূক্ত কোন আয়া ছিলেন না।
পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এই স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকেন বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মি. রায়।
এই ঘটনা ঘটার পর হাসপাতালটির সব স্বেচ্ছাসেবক আয়াকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্ত আয়ার বিরুদ্ধে আর কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিক করা হবে।
আরো পড়ুন:
- বাংলাদেশে নবজাতককে ফেলে দেয়ার ঘটনা বাড়ছে
- দাফনের আগে নড়ে উঠলো নবজাতক, এখন এনআইসিইউতে
- সন্তান পালনের ১৩টি টিপস
- 'বেবি নাম্বার টু-টু-সিক্স যেভাবে আমার হলো'
অবশ্য এ ব্যাপারে কোন পুলিশী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।
মি. রায় বলেন, "এটা পুলিশকে জানানোর মতো কোন ঘটনা না। কারণ এখানে কোন জীবন্ত শিশু মারা যায়নি। মৃত শিশু।"
কী ঘটেছিল?
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, পেটা ব্যথা হওয়ার কারণে গত শুক্রবার এক নারীকে চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করে।
পরে শনিবার হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান তাকে পরীক্ষা করে দেখেন এবং তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেন।
এতে দেখা যায় যে, তিনি সাড়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার সন্তান গর্ভেই মারা গেছে।
পরে তাকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য চিকিৎসা দেয়া হয়। শনিবার দুপুর নাগাদ ব্যথা বেড়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তার সন্তানের পা বের হয়ে এলে ওই আয়া কাউকে কিছু না জানিয়ে তাকে প্রসব করানোর ব্যবস্থা করে।
তিনি বেরিয়ে আসা মৃত শিশুটির পা ধরে টান দিলে পুরো দেহটি মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বের হয়ে আসে।
মি. রায় জানান, ওই শিশুটি এরইমধ্যে মৃত এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার চিকিৎসকরা ডিএমসির মাধ্যমে ওই নারীর জরায়ু থেকে মৃত শিশুটির বিচ্ছিন্ন মাথা বের করে আনেন চিকিৎসকেরা।
মি. রায় জানান, বর্তমানে ওই নারী সুস্থ রয়েছেন।