জানেন কার্ল মার্ক্সের ২০০তম জন্মদিন ঘিরে জার্মানিতে কী চলছে
৫ মে ছিল প্রবাদপ্রতীম জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স-এর ২০০তম জন্মদিন। এনিয়ে জার্মানীতে একদিকে যেমন উৎসবের আবহ, অপরদিকে ছিল ক্ষোভের আঁচ।
৫ মে ছিল প্রবাদপ্রতীম জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স-এর ২০০তম জন্মদিন। এনিয়ে জার্মানিতে একদিকে যেমন উৎসবের আবহ, অপরদিকে ছিল ক্ষোভের আঁচও। আসলে বার্লিন প্রাচীরের পতনের তিন দশক পরেও মার্ক্সকে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত জার্মানি।
মার্ক্স জন্মেছিলেন পূর্ব জার্মানির ত্রিয়ের শহরে। সেই শহরের প্রশাসন তাঁকে স্মরণ করেছে 'শহরের মহান পুত্র' হিসেবে। বলে হয়েছে ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি সেই আঠার শতকেই পুঁজিবাদের কলুষিত দিকগুলির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর স্মরণে শহর জুড়ে প্রায় ৬০০টির মতো অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়। তবে এইসব-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে আছে মার্ক্সের একটি ১৮ ফুট উচ্চ মূর্তি উন্মোচন। এই মূর্তিটি শহরকে উপহার দিয়েছে কমিউনিস্ট চিন। অনুষ্ঠানে চিনের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত থেকেছে। ছিলেন জার্মানির সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধানসহ আরও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
China marks 200 years of #KarlMarx's birth as Xi leads in new era. Karl Marx Statue: #China's gift to Germany for Marx's 200th Birthday https://t.co/dkODev43Tk pic.twitter.com/lOiOafoBUS
— BaliPromotionCenter (@translatorbali) May 4, 2018
সেই মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানের সামনেও ছিল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জমায়েত। এদের বেশিরভাগই কমিউনিস্ট আমলে পূর্ব জার্মানীতে অত্য়াচারের, হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। এঁরা মনে করেন সেই স্ট্যালিনবাদী কমিউনিস্ট শাসকদের অনুপ্রেরণা ছিলেন এই দার্শনিক। তাই তাঁর মূর্তি স্থাপনার বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভের ডাক দেন। ইউনিয়ন অব ভিক্টিম গ্রুপস অব কমিউনিস্ট টায়রানি নামে এদের একটি সংগঠন আছে। সেই সংগঠনের প্রধান দিতার দমব্রোস্কি বলেন, 'আমরা মার্ক্সের মূর্তিটির উন্মোচনের জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মার্ক্সবাদের যেকোনও রকম গুণগানের আমরা বিরোধিতা করবো। দমব্রোস্কির মতে, চিনের এই উপহার গ্রহণ করা ত্রিয়ের প্রশাসনের উচিত হয়নি। এটা কমিউনিস্ট শাসনের অত্যাচারিতদের প্রতি 'অসম্মানজনক এবং অমানবিক'।
বর্তমানে ইস্ট জার্মানীতে অতি ডানপন্থী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানী বা এএফডি পার্টি যথেষ্ট শক্তিশালি। ইস্ট জার্মানীর ভোটের জোরেই তারা রাইখস্টাগে পা রাখতে পেরেছে। তারা ত্রিয়ের শহরের কেন্দ্রে একটি মৌন মিছিল করেছে। মিছিলের থিম ছিল, 'মার্ক্সকে স্তম্ভচ্যুত করো'।
Germany unveils statue of Karl Marx in his hometown https://t.co/8mUo6T1v0s pic.twitter.com/YtSA9YLYh0
— euronews (@euronews) May 5, 2018
শুক্রবার চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন চিনের কমিউনিস্ট পার্টি চিরকাল মার্ক্সবাদের 'ধারক ও বাহক' থাকবে। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং-ও মার্ক্সকে শ্রদ্ধা জানান। কোল্ড ওয়ারের সময় পুঁজিবাদী পশ্চিম জার্মানিতে মার্ক্স ছিলেন উপহাসের পাত্র। কিন্তু বার্লিন প্রাচীর পতনের পর বিশেষ করে গত এক দশকে পুঁজিবাদের খারাপ দিকগুলি যত উন্মোচিত হয়েছে ততই মার্ক্স এসেছেন আলোচনায়। শ্রমিকশ্রেণির বৈষম্য ও নিপীড়ন নিয়ে তাঁর তত্ত্ব আজকে সমাজে আবার নতুন করে কদর পাচ্ছে। মার্ক্সের জীবন, কাজ এবং উত্তরাধিকার নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রদর্শনী। তার তত্ত্বাবধায়ক রেনার অটস বলেন, 'জার্মানির পুনর্বিন্যাসের পর প্রায় তিন দশক পার হয়ে গিয়েছে। এখন সেই দার্শনিকের পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে যার জন্য জার্মানি দুভাগ হয়ে গিয়েছিল। আমরা কোনওভাবেই তাঁকে মহিমান্বিত বা তাঁর পরিহাস করতে চাই না। আমরা তাকে তার সময়ের বিচারে দেখাতে চাই, পাশাপাশি দেখতে হবে কোথায় তাঁর ভুল ছিল। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জাঁ ক্লদ জুকার্স-এর মতে 'অত্যাচারের জন্য মার্ক্সকে দায়ী করা উচিত নয়, সেই দায় তাঁর উত্তরাধিকারীদের'।
বেইজিং থেকে পাঠানো মার্ক্সের বিশাল মূর্তিটি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। অনেকে বলছেন, চিনা পর্যটকদের টাকায় ও চিনা বিনিয়োগের সামনে শহরের প্রশাসকরা বাধ্য হয়েছেন মূর্তি স্থাপনে। সেই অভিযোগ উড়িয়ে ত্রিয়েরের মেয়র উলফ্রাম লিবে বলেছেন যে এটি কেবলই 'বন্ধুত্বের স্মারক'। তিনি বলেন, ত্রিয়েরের একটিও চিনা কোম্পানি নেই। চিনের সঙ্গে আমাদের কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্কও নেই। এই সিদ্ধান্তটা একেবারেই আমাদের নিজস্ব। এখানে ব্ল্যাকমেইল করার কোনো গল্পই নেই'। জন্য সন্দিহান নই, "তিনি এএফপিকে বলেন। তিনি মেনে নিয়েছেন পরিস্থিতি যা তাতে মূর্তি ভাংচুর করা হতে পারে। কিন্তু তাতে তাঁর রাতের ঘুম চলে যাচ্ছে না। কারণ তিনি বলেন, এভাবে মার্ক্সকে কলুষিত করা যায় না।