আর্থিক সঙ্কটের আশঙ্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই চিন সফরে জার্মান চ্যান্সেলর
আর্থিক সঙ্কটের আশঙ্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই চিন সফরে জার্মান চ্যান্সেলর
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ শুক্রবার একাধিক সংস্থার শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকদের চিন সফরে এলেন। চিন সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে এই সফরের মাধ্যমে ওলাফ স্কোলজ চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী।
জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক
বেজিংয়ে একদিনের সফরে এসেছিলেন জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ। বাইরে থেকে চিনে প্রবেশ করতে গেলে মূলত ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক। তবে জার্মানির চ্যান্সেলরের জন্য সেই ধরনের কোনও নিয়ম প্রযোজন্য ছিল না। বেজিং বিমানবন্দরে নামার পরেই জার্মানির চ্যান্সেলর ও সঙ্গীদের করোনা পরীক্ষা করেন উপস্থিত চিকিৎসক। এরপরেই তিনি বেজিংয়ের হল অফ দ্য পিপলে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। শুক্রবার বিকেলে তিনি চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
চিনে ব্যবসায়ে আগ্রহী জার্মান সংস্থা
শুক্রবার জার্মানি চ্যান্সেলরের বেজিং সফরে সঙ্গী ছিলেন ১২ টি জার্মান সংস্থার প্রধান আধিকারিকেরা। ওলাফ স্কোলজের সঙ্গী ছিলেন ভক্সওয়াগেন (VLKAF) , ডয়েচে ব্যাঙ্ক (DB) , Siemens (SIEGY) এবং রাসায়নিক জায়ান্ট BASF (BASFY) এর মতো সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারিকেরা। চিনে বিদেশি সংস্থার ব্যবসা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা করতে, চিনে জার্মান সংস্থাগুলোর ব্যবসায়ে প্রতিকূল পরিবেশ নিয়ে আসতে বিভিন্ন সংস্থার কার্য নির্বাহী আধিকারিকারে জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গী হয়েছিলেন। চিনের শূন্য কোভিড নীতির সমালোচনা করেছে বিভিন্ন দেশ। ইতিমধ্যে অনেক দেশ চিন থেকে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতি চিনে জার্মানির সংস্থাগুলোর ব্যবসা বৃদ্ধির আগ্রহ যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ।
কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জার্মানি
বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জার্মানি কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। ইউরোপে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ইউরোপে শীতকালে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। অর্থনীতির দিক থেকেও জার্মানি বেশ চাপে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জার্মানির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ইফো সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের ডিরেক্টর লিসান্দ্রা ফ্ল্যাচ জানান যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জার্মানির সঙ্গে চিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে জার্মান অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে পারে। পাশাপাশি জার্মানির জিডিপি নেমে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন তিনি। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, চিনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি না হলে, জিডিপি এক শতাংশ কমে যেতে পারে।
জার্মানির ওপর চাপ
চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে পশ্চিমি দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার জেরে জার্মানিকে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে চিন নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। চিন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। এই পরিস্থিতি জার্মানির চ্যান্সেলরের চিন সফর যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ দেশের অভ্যন্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। দেশের একাধিক সংগঠন চ্যান্সেলরকে চিন সফর পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে। ইউঘুর সম্প্রদায়ের ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের জন্য চিনকে দায়ী করে পশ্চিমি দেশগুলো। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এই বিষয়ে বৈঠকের প্রস্তাবেও স্বাক্ষর করেছিল জার্মানি। কিন্তু দেশের অর্থনীতির কথা মাথায় রেখেই চিন সফর করেন জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ।
৫০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করবেন মাস্ক! ঘোষণার আগেই ডাউন Twitter