কোরিয়ার ৩১ নম্বর রোগী থেকে তবলিঘি জামাত, যেভাবে বিশ্বে করোনা ছড়িয়েছে লাগামহীন ভাবে
চিনের উহানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বিশ্বের ২১টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয় সহস্রাধিক মানুষ। তবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বে ছড়িয়েছে মানুষের মাধ্যমে। কখনও অসতর্কতা, কখনও বা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভআইরাস ছড়ানোর ইচ্ছা। এভাবেই ধীরে ধীরে বিশ্বের ১৭ লক্ষ মানুষ এই সংক্রমণে আক্রান্ত। এদের মধ্যে মৃত ১ লক্ষেরও বেশি। এই সুপার স্প্রেডার বা করোনা বাহকদের কয়েকজনের বিষয়ে জানুন ...
একা মরতে চান না, তাই ভাইরাস ছড়াতে বেড়িয়েছিলেন
একা মরতে চান না, তাই ভাইরাস ছড়াতে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন জাপানের এক করোনা আক্রান্ত রোগী। জাপানের গামাগোরি জেলার একটি হাসপাতালে ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা ধরা পড়ে। তার মা-বাবা থেকে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হাসপাতালে আসন খালি না হওয়া পর্যন্ত তাকে বাড়িতে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়।
জাপানের বহু মানুষের মধ্যে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায়
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ওই যুবক উপকূলীয় এই শহরটির দুটি বার-এ ঘুরে বেড়ান। বাড়িতে থেকে বের হওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের বলে যান, আমি এই ভাইরাস ছড়াতে যাচ্ছি। ওই ব্যক্তি প্রথমে একটি ট্যাক্সিতে করে ইজাকায়া নামের একটি বারে যান। পরে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে সোজা চলে যান ফিলিপিনো একটি বারে। খাওয়া হয়ে গেলে, সেখানে উপস্থিত অন্য কাস্টমারদের জানান, তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রোগী নম্বর ৩১
পুরো একমাসে কোরিয়ায় মাত্র ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু কাজপাগল জাতি কাজে ব্যস্ত। প্রস্তুতি থাকলেও এটিকে প্রথম থেকে নজর দেয়নি সিউল প্রশাসন। এরপর কোরিয়ার কাহিনী অন্যরকম। রোগী নম্বর ৩১ যেন এক সুপার স্প্রেডার। কোরিয়ার রোগতত্ত্ব বিভাগের মতে, দেশটিতে করোনাভাইরাস রোগী বৃদ্ধির পেছনের নায়িকা হলো রোগী নম্বর ৩১, তিনি সবচেয়ে বেশি এ রোগ ছড়িয়েছেন। অধিক সংখ্যক মানুষের সংসর্গে এসে, পুরো কোরিয়ায় এ রোগ ছড়িয়েছেন। এমনটি জানিয়েছে কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।
কী ভাবে করোনা ছড়ায় কোরিয়াতে
ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে ৬১ বছর বয়সী একজন নারী ট্রাফিক দুর্ঘটনায় পড়ে কোরিয়ার দেগুর এক হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্য ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি তার জ্বর ধরা পড়ে এবং ডাক্তাররা তাকে করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করতে পরমার্শ দেন, একইসঙ্গে সেলফ আইসোলেশনে থাকার জন্যও বলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ওই নারী ১৬ তারিখে গির্জাতে যান, একইসঙ্গে বন্ধুর সঙ্গে এক রেস্তোরাঁয় যান লাঞ্চ বুফে খেতে। এর মাঝে এ নারী উপস্থিত ছিলেন আরও একটি বিয়ের অনুষ্ঠানেও। এতেই সেদেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস।
দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিঘ-ই-জামাতের জমায়েত
দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিনে তবলিঘ-ই-জামাতের মসজিদ থেকে কমপক্ষে ৮৫০ জনকে অন্য একটি জায়গায় কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে বলে খবর। এদের মধ্যে ৪০০ জনেরও বেশি জনের শরীরে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ দেখা গিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া সারা দেশে নিজামউদ্দিন যোগ থাকা ৪ হাজার মানুষের করোনা সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে গত কয়েক দিনে। এছাড়া এই ঘটনার পরই দেশে করোনার জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
কী হয়েছিল দিল্লিতে?
প্রসঙ্গত, গত ১ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে দিল্লির ওই মসজিদে অন্তত ২ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। দিল্লিতে ওই মসজিদে শুধু ভারত নয়, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজিস্তান থেকেও বিভিন্ন মানুষজন এসে ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখান থেকেই ব্যাপক হারে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর। সংক্রমণের ঘটনায় দিল্লির ওই মসজিদের মওলানার বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে কেজরিওয়াল সরকার।
শিখ ধর্মগুরুর জন্য পাঞঅজাবে কোয়ারেন্টাইনে ৪০ হাজার
এদিকে পাঞ্জাবের এক শিখ ধর্মগুরুর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় অন্তত ৪০ হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। ধর্মগুরুর নাম বালদেব সিং। তিনি সম্প্রতি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শহীদ ভগত সিং নগর জেলার এক জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি জার্মানি থেকে ইতালি হয়ে ভারতে ফিরেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরই সিল করা হয় সেই রাজ্যের বহু গ্রাম। আর এরপর সেই রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে পাঞ্জাবে।