২০১৯-এ বাণিজ্যিক হচ্ছে মহাকাশ যাত্রা, নাসার প্রথম ফ্লাইটে ক্রু থাকছেন সুনীতা উইলিয়ামস
২০১৯ সালে প্রথম কমার্শিয়াল স্পেস ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত নাসা। সুনীতা উইলিয়ামস সহ ৯ ক্রু সদস্যের নাম ঘোষণা করল তারা। মহাকাশ যাত্রা বানিজ্যিক হলে মহাকাশ গবেষণার দিকটি আরও বেশি করে উন্মুক্ত হবে বলে আশা
২০১৯ সাল থেকে নাসা বেসরকারি সংস্থার তৈরি রকেট ও ক্যাপসুলে স্পেস মিশন চালু করতে চলেছে। এই পরীক্ষামূলক মহাকাশ অভিযানের জন্য তারা ৯ জন মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করেছে, যাঁর মধ্যে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসও। তাদের মহাকাশ অভিযানে জন্য রকেট ও ক্যাপসুলগুলি তৈরি করছে বোয়িং ও স্পেসএক্স সংস্থা।
|
কমার্শিয়াল ক্রু স্পেসক্র্যাফ্ট
এতদিন নাসা নিজেদের তৈরি মহাকাশ যানেই যাবতীয় মহাকাশ অভিযান চালিয়েছে। এই প্রথম বেসরকারি সংস্থার তৈরি মহাকাশ যান ব্যবহার করা হবে। নাসার কর্তা জিম ব্রাইডেনস্টাইন শনিবার জানিয়েছেন, 'ভবিষ্যতে কমার্শিয়াল ক্রু অ্যাস্ট্রোনটরা মহাকাশে যাবেন স্পেস এক্স ও বোয়িং স্পেস এর পার্টনার ভেহিকেলস-এ'
আমেরিকার লক্ষ্য
২০১৯ সালে নাসার বর্তমান ৮ নভশ্চর ও ১ জন প্রাক্তন নভশ্চর যিনি এখন কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত - এই ৯ জন বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ও স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলের মাধ্যমে রওনা দেবেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে। ২০১১ সালে স্পেস শাটল প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছিল আমেরিকা। তারপপর থেকে এই প্রথম আমেরিকার মাটি থেকে মানুষ পাঠানো হবে মহাকাশে। মহাকাশযানগুলির নকশা থেকে নির্মাণের প্রতিটি স্তরে নাসা বোয়িং ও স্পেসএক্স সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।
স্টারলাইনার ও ড্রাগন মিশন
দুই মহাকাশযানই তৈরি হয়েছে মহাকাশচারীদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। স্টারলাইনার মিশনের ফ্লাইট পরিালনার দায়িত্বে রয়েছেন জশ কাসাডা ও সুনিতা উইলিয়ামস। এই মহাকাশযানটিকে মহাকাশে পৌঁছে দেবে ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স অ্যাটলাস ৫ রকেট। অন্যদিকে নাসার নভশ্চর রবার্ট বেহেনকেন ও ডগলাস হার্লির হাতে থাকবে স্পেসএক্স সংস্থার তৈরি ড্রাগন মিশনের দায়িত্ব। যাকে মহাকাশে পৌঁছতে তৈরি হচ্ছে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেট।
নভশ্চরদের অভিজ্ঞতা
স্টারলাইনার মিশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জশ কাসাডার এটিই প্রথম মহাকাশ অভিযান। সুনীতা উইলিয়ামস ২ দফায় মোট ৩২১ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন। বেহেনকেন ও হার্লি-রও দুটি করে মহাকাশ অভিযানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নাসার একাধিক স্পেস শাটল মিশনে কমান্ডিং অফিসার ছিলেন ক্রিস্টোফার ফার্গুসন। বর্তমানে তিনি বোয়িং সংস্থার এক্সিকিউটিভ। স্টার লাইনার মিশনে তিনি যুক্ত হচ্ছেন তিনটি মহাকাশ অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে। তাঁর সঙ্গে থাকবেন এরিক বো ও নিকোল মান। এরিকের দুটি মহাকাশ ্ভিযানের অভিজ্ঞতা থাকলেও এটি মানের প্রথম ব্যোমযাত্রা। এছাড়া থাকছেন ভিক্টর গ্লোভার ও মাইকেল হপকিন্স। গ্লোভারের প্রথম মহাকাশ যাত্রা হলেও হপকিন্সের মহাকাশে ১৬৬ দিন কাটানর অভিজ্ঞতা আছে।
কমার্শিয়াল ক্রু অপারেশনের তাৎপর্য
মহাকাশ অভিযানে অনেক দেশই আগ্রহী হলেও অধিকাংশ দেশের হাতেই মহাকাশ যাত্রার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ বা প্রযুক্তি নেই। এতদিন অবধি মহাকাশ অভিযানের সবটাই ছিল রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। এই প্রথম কোনও বেসরকারি সংস্থা মহাকাশযান তৈরি করছে। ফলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র এখন আরও অনেকের কাছে গবেষণার জন্য উন্মুক্ত হবে। যেসব দেশের হাতে রকেট বা স্পেস ক্যাপসুল নেই, তারা অর্থের বিনিময়ে স্পেস এক্স ও বোয়িং সংস্থার মহাকাশযানগুলিকে কাজে লাগাতে পারবে। এতে মহাকাশ গবেষণাই এগোবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নাসার মহাকাশ গবেষণা
গত ১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে তাদের উপস্থিতি বজায় রেখেছে নাসা। তাদের গবেষণায় বিজ্ঞানের নানা শাখায় যুগান্তকারী দিক উন্মোচিত হয়েছে। এই নয়া সরকারি-বেসরকারি অংশিদারীতে সেই গবেষণার কাজই নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এগোবে বলে আশা করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তারা দাবি করছেন কমার্শিয়াল স্পেস ফ্লাইট চালু হলে নাসার বিজ্ঞানীদের মহাকাশ যাত্রা আগের থেকে অনে বেশি নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও আর্থিক দিক থেকে সাশ্রয়ী হবে।