নাগরিকত্ব বিল উভয় কক্ষে পাশ হলে অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হোক, দাবি মার্কিন কমিশনের
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করল আমেরিকার একটি ফেডারেল কমিশন। আমেরিকার আম্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, ভারত এবং অ্যামেরিকার মূল ভিত্তিই হল ধর্মীয় বহুত্ববাদ৷ এটাই দুই রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ, মূল্যবোধ৷ কমিশনের তরফে বলা হয় যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ 'ভুল দিকে বিপজ্জনক মোড়।' পাশাপাশি সংসদের দুটি কক্ষেই বিলটি পাশ হলে অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশও করা হয়েছে কমিশনের তরফে।
সোমবার লোকসভায় পাশ হয় সিএবি
সোমবার অমিত শাহের পেশ করা নতুন বিলে শর্ত দেওয়া হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। বিলটি সোমবার ৩১১-৮০ ব্যবধানে পাশ হয়।
কী এই সিএবি?
বিলটির পক্ষে যুক্তি দিয়ে সোমবার সংসদে অমিত শাহ প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, 'আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ পড়ে শুনিয়ে বলেন এই দেশগুলিতে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। বিভাজনের সময় শরণার্থীরা দেশ ছেড়ে । ১৯৫০ সালে নেহরু-লিয়াকত চুক্তি সই হয়। তখন নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তবে এত বছরে আমাদের প্রতিবেশী দেশে হিন্দু, শিখ সহ সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার চলেছে। তা হলে কী আমরা তাদের উপর অত্যাচার হতে দেব? এই আইনে শ্রীলঙ্কার তামিল হিন্দু ও মায়ানমারের হিন্দু রোহিঙ্গাদের বাদ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বিলে দেশের কোনও মুসলিমদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি।'
অমুসলিম হলেই নিঃশর্তে নাগরিকত্ব
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেই এই নতুন সংশোধনী আনা হচ্ছে। আগে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে কোনও শরণার্থীকে অন্তত ১১ বছর এদেশে থাকতে হত। গত বছর সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছিল। এবছর তা আরও কমানো হবে। নতুন বিল বলছে মাত্র ৫ বছর ভারতে থাকলেই নিঃশর্তে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে অমুসলিমরা। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র নিজেকে অমুসলিম বলে হলফনামা জমা দিলেই কাজ মিটে যাবে।
এবার পরীক্ষা রাজ্যসভায়
নিয়ম অনুযায়ী এবার বিলটি রাজ্যসভায় যাওয়ার কথা৷ সংসদের উচ্চকক্ষের ২৪৫ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ১২৩ জনের সমর্থন পেতে হবে মোদী সরকারকে।
|
টুইট করা হল অ্যামেরিকার বিদেশ দপ্তরের তরফেও
এদিকে এই বিষয়ে টুইট করা হল অ্যামেরিকার বিদেশ দপ্তরের তরফেও। বিল পাশের পরই টুইট করা হয় অ্যামেরিকার হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির তরফে৷ টুইটে আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে অ্যামেরিকা, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নাগরিকত্ব নিয়ে যে কোনও ধর্মীয় পরীক্ষানিরীক্ষা গণতন্ত্রের মৌলিক ভাবধারাকে ক্ষুণ্ণ করে বলেই ওই টুইটে উল্লেখ করা হয়েছে