রক্তাক্ত মিশর, কিন্তু ফেক ছবি আর ভিডিও-তে কেঁপে উঠল সোশ্যাল মিডিয়া
'ফেক' ছবি কী? 'ফেক' যা একটি ইংরাজি শব্দ বাংলায় যার মানে 'মিথ্যা'। সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে ফেক ছবি ব্যবহার করা হয়, তার প্রমাণ মিলেছিল ৯/১১-র সময়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল-কায়েদার বিমান হামলার সময় বিশ্বখ্যাত একটি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল উচ্ছ্বাসের ভিডিও। কিছু অল্প-বয়সী ছেলে মেয়ে, তাদের পরনে একই ধরনের পোশাক। প্রত্যেকে উল্লাস করছে, আর হাতে হাত মেলাচ্ছে। সেই টেলিভিশন চ্যানেলে বলা হয়েছিল এই ভিডিওটি প্যালেস্টাইনের। সেখানকার জঙ্গি মনোভাবাপন্ন এইসব কিশোর-কিশোরীরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার বিজয়োৎসব পালন করছে। কিন্তু, দিন কয়েকের মধ্যেই জানা যায়, ছবিটা প্যালেস্টাইনের হলেও, তাতে দেখতে পাওয়া কিশোর-কিশোরীরা তাদের পিএলও নেতা ইয়াসের আরাফত-এর বিবাহ অনুষ্ঠানকে সেলিব্রেট করছে। আর ভিডিওটি তোলা হয়েছিল ২০০০ সালের আগে। আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হয়েছিল ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। সেই বিখ্যাত মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে নিন্দায় সরব হয়েছিল বিশ্ব। যেখানে কাতারে কাতারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সন্ত্রাসের ভয়াবহতাকে একদম সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করছে বিশ্ব, সেখানে এমনভাবে একটি পুরনো ছবিকে জুড়ে দেওয়ার মানেটা কী?

২০০১ সালের সেই 'ফেক' ছবি দেখানোর প্রবণতাই যে প্রথম ছিল তা নয়। ওই ঘটনার সূত্রেই সামনে এসেছিল আরও একটি তথ্য। যে ১৯৯০ সালে 'গালফ ওয়ার' বা 'উপসাগরীয় যুদ্ধ'-এও এই মার্কিন টেলিভিশন সংস্থা বহু ফেক ভিডিও তৈরি করে বিশ্বের সামনে হাজির করেছিল। এই 'ফ্যাব্রিকেটেড জার্নালিজম'-যে এখন চলছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ পাওয়া গেল শুক্রবার মিশরের হামলায়।

বহু মানুষই এই ঘটনার বিস্তারিত পেতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানেই দেখা গেল একের পর এক ফেক-ছবি ও ভিডিও-তে মিশরের সিনাই প্রদেশের হামলার বলে দাবি করা হয়েছে। যেমন, এই ছবিটি। বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত একটি বহুতলের সামেন দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে আল-আরাবি নামে একটি সংস্থা। কিন্তু, পরে জানা যায় এই ছবিটি ২০১৫ সালে তোলা হয়েছিল। এই ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। কিন্তু, সেই পুরনো ছবিকেই শুক্রবার সিনাই প্রদেশে আক্রান্ত মসজিদের ছবি বলে চালিয়ে দেয় আল-আরাবি।

এখানেই শেষ নয়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বহু সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন। তারা জানতেন যে এই ভিডিওটি মিশরের সিনাই প্রদেশের হামলার ছবি। কিন্তু, জানা যায় মহম্মদ বোলান্দি নামে এক ব্যক্তি ২০১৫ সালে এই ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন। সৌদি আরবের একটি মসজিদে হামলার ভিডিও ছিল এটি। মনে করা হচ্ছে সৌদি আরবের মসজিদে হামলার ভিডিওটি-র ছবির কোয়ালিটিকে খারাপ করে নতুন করে শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ আপলোড করেছিল। যাতে ভিডিও-টির মূল সূত্র-কে ধরা না যায়।

এমনকী, শুক্রবার আরও একটি ছবি বিপুলভাবে শেয়ার হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যায় জঙ্গিদের হামলায় মসজিদের মিনারটি ভেঙে পড়েছে। কিন্তু, পরে সিনাই প্রদেশের আক্রান্ত মসজিদের ছবি যখন সামনে আসে তখন দেখা যায় তার মিনার এবং গম্বুজ ঠিক-ই আছে।
