রং ফর্সাকারী ক্রিম এড়িয়ে চলুন: যুক্তরাজ্যে সতর্কতা
যুক্তরাজ্যের ভোক্তাদেরকে রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারে সতকর্তা জারি করে বলা হচ্ছে 'যেকোনো মূল্যে' এ ধরণ্যের পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে।
লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (এলজিএ) এই সতর্কবার্তায় বলা হচ্ছে, রং ফর্সাকারী ক্রিমে থাকা উপাদান ত্বকের উপরিভাগের একটি স্তরকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
সম্প্রতি দেশটিতে বাণিজ্য মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের হাতে এ ধরণের কিছু পণ্য জব্দ হওয়ার পর এই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, অনেক পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান হাইড্রোকুইনোন থাকে। এছাড়া অনেক ক্রিমে মার্কারি বা পারদ থাকার কথাও জানা গেছে।
এলজিএ বলছে, কিছু খুচরা ব্যবসায়ী, অনলাইন, বাজারের কিছু দোকানীসহ এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ধরণের পণ্য বিক্রি করছে।
তারা সবসময় পণ্যের সঠিক মাত্রা উল্লেখ করেনা, যার কারণে ভোক্তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন।
- রং ফর্সা করার মূল্য কীভাবে দিচ্ছেন লাখ লাখ নারী
- রং ফর্সাকারী ক্রিম কি আসলেই ফর্সা করে?
- গায়ের রং ফর্সা করার 'বর্ণবাদী' অ্যাপ নিয়ে বিতর্ক
এলজিএ'র মতে হাইড্রোকুইনোন এমন এক রাসায়নিক যা জৈবিক রং পরিবর্তনের এক ধরণের উপাদান বা 'পেইন্ট স্ট্রিপার'।
এই রাসায়নিক মানুষের ত্বকের একটি স্তরকে অপসারণ করে দিতে পারে।
এর ফলে ত্বকের ক্যান্সার, যকৃত এবং কিডনির মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। পারদ থেকেও একই ধরণের প্রাণঘাতী স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা থাকে।
চিকিৎসকের অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাজ্যে হাইড্রোকুইনোন, স্টেরিয়ড বা পারদ রয়েছে এমন ক্রিম তাদের মারাত্মক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যেকোনো মূল্যে এড়িয়ে চলুন:
এলজিএ জানায়, সম্প্রতি এসব পণ্যের বেশ কয়েকটি চালান জব্দ করা হয়েছে। এগুলো হল-
•ডাগেনহ্যামে একটি দোকান থেকে ৩৬০ পণ্য জব্দ করা হয়, যেগুলোর বেশ কয়েকটির মধ্যে হাইড্রোকুইনোন ছিল। এগুলোতে উপাদানের সঠিক মাত্রা উল্লেখ করা হয়নি এবং এগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত মান নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে।
•২০১৮ সালে এক অভিযান চালিয়ে সাউথওয়ার্ক কাউন্সিল ২৯০০ রং ফর্সাকারী পণ্য জব্দ করে, যেগুলোর বেশিরভাগই নাইজেরিয়া থেকে সরাসরি আমদানি করা হয়েছিল। এর জের ধরেই হয়তো যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো বিপজ্জনক রং ফর্সাকারী পণ্য বিক্রির দায়ে কারাদণ্ডের রায় আসতে যাচ্ছে।
•ক্যামেরুন থেকে আসার পর গ্যাটউইক বিমানবন্দর থেকে ২৫০ কেজি রং ফর্সাকারী পণ্য জব্দ করা হয়। এসব পণ্যের নমুনায় হাইড্রোকুইনোন পাওয়া গেছে।
কিন্তু এলজিএ বলছে, কাউন্সিল বাজেট কমে যাওয়ায়, বাণিজ্য মান নির্ধারণ কর্মকর্তারা এই সমস্যার বিষয়ে সর্বোচ্চ নজরদারি করতে পারছে না।
এলজিএ'র নিরাপদ ও শক্তিশালী কমিউনিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিমন ব্ল্যাকবার্ন বলেন, "নিষিদ্ধ পণ্যসমৃদ্ধ ত্বকের ক্রিম খুবই বিপজ্জনক এবং এগুলো স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, সারা জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে, তাই এগুলোকে যেকোনো মূল্যে এড়িয়ে চলা উচিত।"
"ভোক্তাদের সব সময় তাদের ক্রিমে কি উপাদান রয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। খুব কম দাম হলে আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত কারণ সেগুলো নকল এবং ক্ষতিকর হতে পারে। সেইসাথে হাইড্রোকুইনোন রয়েছে এমন পণ্য ব্যবহার না করা উচিত।"
"পণ্যে যদি কোন ধরণের উপাদানের উল্লেখ না থাকে তাহলে সেটি ব্যবহার করা উচিত নয়।"
তিনি আরো বলেন, "যেসব অসাধু ব্যবসায়ী এসব নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করে তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে কাউন্সিল। এছাড়া এসব ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য দিতে জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে করে টাউন হল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। যাতে করে মানুষ এ ধরণের পণ্য কেনা থেকে বিরত রাখা যায় যা তাদের চেহারায় স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে।"
ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র লিসা বিকারস্টাফে বলেন, বছরের পর বছর ধরে অবৈধ রং ফর্সাকারী ক্রিমের ইস্যুটি চলেই আসছে।
তিনি বলেন, "কাউন্টার কিংবা অনলাইনে অবৈধ উপায়ে এসব ক্রিম বিক্রির কারণেই এই সমস্যা বেড়ে চলেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন।"
"এসব কসমেটিকসের উপাদান মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশন এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে থাকে।"
"নিজের ত্বকের রং নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে ব্যক্তিগত ত্বক বিশেষজ্ঞ বা জিপি'র সাথে যোগাযোগ করুন এবং তারাই আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবেন," তিনি বলেন।
আরো পড়ুন:
নতুন শর্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ করবে: মিয়ানমারের মন্ত্রী
চাঁদে পাঠানো ভারতীয় যান বিক্রমের ভাগ্যে যা ঘটেছিল
বহু সৌদি সৈন্য আটকের দাবি হুতি বিদ্রোহীদের