চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধের ফলে বিপুল ক্ষতির মুখে রপ্তানিকারকরা
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য মহা নির্দেশনালয়ের জারি করা এক নির্দেশে ভাঙা চাল রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের চালের ওপরে আরোপ করা হয়েছে ২০% শুল্ক।
মিলের চাল আর ঢেঁকিছাঁটা চালের ওপরে ২০% শুল্ক চাপানো হয়েছে। তবে মিলের সিদ্ধ চাল আর বাসমতী রপ্তানির জন্য এই শুল্ক দিতে হবে না বলে জানিয়েছে সরকার।
তবে যে চাল রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যেই জাহাজে উঠে গেছে, তার ওপরে এই বিধিনিষেধ আরোপিত হবে না।
বিবিসি বাংলায় সম্পর্কিত খবর :
- বাংলাদেশকে চাল আমদানি করতে হচ্ছে কেন?
- চালের ঘাটতি কাটাতে কি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার
- নরেন্দ্র মোদীর অধীনে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে ভারতের অর্থনীতি
'ভারতে প্রচুর চাল মজুত আছে'
শিল্প-বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ প্রতীম রঞ্জন বসু ব্যাখ্যা করছিলেন, অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর সঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরীণ চালের মজুতের কোনও সম্পর্ক নেই এবং সেই মজুত প্রচুর পরিমাণেই আছে।
"এখন চালের মরসুম শেষের দিকে, মাস খানেক পরে নতুন ফসল উঠতে শুরু করবে। এই সময়ে বাজার কিছুটা তেজী থাকে প্রতিবছরই। এবার সেটা একটু বেশিই তেজী হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে যেমন আছে ইউরোপে রেকর্ড গরম, চীনের তাপপ্রবাহ - তেমনই আছে পাকিস্তানের বন্যার মতো বৈশ্বিক কারণগুলো," - বলছিলেন মি. বসু।
মূল্যবৃদ্ধি আটকাতেই কী রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা?
মি. বসু বলছিলেন এসব কারণেই বাজারে চালের দাম বেড়েই চলছিল আর মূল্যও কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল গত মাসে।
মি. প্রতীম রঞ্জন বসুর ব্যাখ্যা, "চিন্তাটা ছিল মূল্যবৃদ্ধি কী করে কমানো যায়। জুলাইতে যেখানে ৬.৭% মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল, তবে অগাস্টে তা ৭% তে চলে যায়। দেশের প্রবৃদ্ধির কারণে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে, সেজন্যই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বাজারে চালের দাম কমানোর চেষ্টা করল সরকার।"
চালের দাম কি কমেছে ভারতে?
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম কম করাই যদি রপ্তানি বন্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে বিধিনিষেধ আরোপের পরে কি ভারতের বাজারে চালের দাম কি কমেছে?
পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায় সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়, সেই পূর্ব বর্ধমানের এক চাল ব্যবসায়ী শেখ ইমতিয়াজ আহমেদ বলছিলেন, চালের দাম যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছিল তা সামান্য হলেও কমেছে।
তার কথায়, "মিনিকিট বা বাঁশকাঠির মতো সরু দানার চালের পাইকারি দাম বৈশাখ মাসে ৩৬ টাকা ৩৮ টাকা কেজি থেকে শুরু হয়েছিল। সেটাই পৌঁছিয়ে গিয়েছিল ৫০ টাকা কেজিতে। এখন রপ্তানি বন্ধের পরে দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়াটা বন্ধ হয়েছে। এখন ওই চালের কেজি প্রতি দাম ৪৮-৪৯ টাকা। দাম একেবারে পড়ে নি, কিন্তু আর বাড়েও নি।"
তবে ভাঙ্গা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করা আর কয়েক ধরণের চালে শুল্ক চাপানোর এই সিদ্ধান্তে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ভারতীয় চাল রপ্তানিকারকরা।
বিপুল ক্ষতির মুখে রপ্তানিকারকরা
শুধুমাত্র ভাঙ্গা চাল রপ্তানির ওপরে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি বন্ধ হওয়াতেই ২০ লাখ টন চাল বিদেশে পাঠাতে পারবেন না রপ্তানিকারকরা, যার ফলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে - জানাচ্ছিলেন অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়ার নির্বাহী পরিচালক ভিনোদ কুমার কল।
মি. কলের কথায়,"কুড়ি শতাংশ শুল্ক চাপানো হলে ভারতীয় চাল অন্যান্য দেশের চালের সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে। আজকাল রপ্তানিকারকরা ২-৩% মার্জিনে ব্যবসা করেন। এই বাড়তি শুল্কের বোঝা তো আর আমদানিকারক দেশ বা তাদের কোম্পানিগুলি দেবে না, তাই ভারতীয় রপ্তানিকারকদেরই ক্ষতিটা হবে।"
আমদানিকারকরাবাড়তি শুল্ক দিতে রাজী নয়
"চালের একেকটা রপ্তানির অর্ডার বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই তৈরি হয়ে যায়। একটা নির্দিষ্ট দামের চুক্তি হয়। তাই হঠাৎ করে এই শুল্ক কোনও দেশের আমদানিকারকরাই দিতে রাজী হচ্ছেন না," জানাচ্ছিলেন ভিনোদ কুমার কল।
চাল রপ্তানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা আর বিধি নিষেধ জারি হলেও ভারত অন্য দেশের সরকারের কাছে সরাসরি যে চাল রপ্তানি করত, তা আগের মতোই চালু থাকছে।
এদিকে বিধিনিষেধ আরোপ হওয়ার পরে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে সবথেকে বড় স্থল বন্দর পেট্রাপোল দিয়ে চালবাহী ট্রাক কিছুটা কম যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে সীমান্তের সূত্রগুলি।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন:
চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন কতটা সহজ হবে বাংলাদেশের জন্য?
সুইডেনে কীভাবে 'কিংমেকার' হয়ে উঠলো সাবেক নব্যনাৎসী দল
বাংলাদেশে টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে