
ফের বিস্ফোরণ আফগানিস্তানে, মৃত পাঁচ , আহত ৫০
ফের বিস্ফোরণ হল আফগানিস্তানে। সম্প্রতি একটি স্কুলের সামনে তিনটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। বৃহস্পতিবার উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরের একটি শিয়া মসজিদে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন, বেসরকারি মতে নিহতের সংখ্যা ২০ পেরিয়ে যেতে পারে। স্থানীয় তালিবান কমান্ডারদে সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। মাজার-ই-শরিফে তালেবান কমান্ডারের মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিফ ওয়াজেরি বলেছেন, "একটি শিয়া মসজিদের ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটেছে, এতে ২০ জনের বেশি নিহত ও আহত হয়েছে।"

আফগান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জিয়া জেন্দানি বলেছেন, বিস্ফোরণে প্রায় পাঁচজন নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে শিয়া অধ্যুষিত হাজারা এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিস্ফোরণের দুই দিন পর এই বিস্ফোরণ ঘটে, অন্তত ছয়জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয় সেই ঘটনায়। শিয়া সম্প্রদায়, আফগানিস্তানের একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রায়ই ইসলামিক স্টেট সহ সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর টার্গেট হয়ে যায়।
মাজার-ই-শরীফের একজন বাসিন্দা জানান, তিনি তার বোনের সাথে কাছাকাছি একটি বাজারে কেনাকাটা করছিলেন যখন তিনি একটি বড় বিস্ফোরণ শুনতে পান এবং মসজিদের আশেপাশের এলাকা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা বলেন, "দোকানের কাঁচ ভেঙে যায় এবং খুব ভিড় ছিল এবং সবাই দৌড়াতে শুরু করে।" আফগানিস্তানের তালিবান শাসকরা বলেছে যে তারা আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটিকে সুরক্ষিত করেছে, তবে আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকরা বলছেন যে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের ঝুঁকি রয়ে গিয়েছে এবং ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত , চলতি সপ্তাহে মঙ্গলবার আফগানিস্তানের রাজধানীতে শিয়া হাজারা এলাকার একটি ছেলেদের স্কুলে তিন তিনটি বিস্ফোরণ ঘটল। ঘটনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাবুল পুলিশের মুখপাত্র খালিদ জাদরান টুইটারে বলেছেন, আব্দুল রহিম শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর ফলে ওই অঞ্চলে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। স্কুলটি রাজধানী কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা দাশত-ই-বার্চিতে অবস্থিত। এটি একটি এমন এলাকা যা প্রধানত হাজারা সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত এবং পূর্বে জিহাদি ইসলামিক স্টেট গ্রুপের অন্যতম টার্গেট ছিল। তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে, কারণ তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল আইএসআইও। তবে তাদের সেই চেষ্টা বিফলে যায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা তাদের সকালের ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় মঙ্গলবারের বিস্ফোরণ ঘটে।
গত বছর ২০ বছরের যুদ্ধের পর, তালিবানরা আফগানিস্তানে জয়লাভ করে নেয়। মূলত জঙ্গি গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত এই সংগঠন ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে সারা দেশে তাদের আশ্চর্যজনকভাবে দ্রুত অগ্রগতি সম্পন্ন করে।
২০০১ সালে মার্কিন বাহিনী জঙ্গিদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার দুই দশক পর মার্কিন এবং তালিবানের মধ্যে একটি চুক্তির পর আফগানিস্তান থেকে বিদেশী বাহিনী প্রত্যাহারের পর এই ঘটনা ঘটে। তার আগে সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হন এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। তালিবান বাহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে পরিণত হতে দেবে না যারা পশ্চিমাদের হুমকি দিতে পারে। কিন্তু দলটি কীভাবে দেশকে শাসন করবে এবং নারী, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য তাদের শাসনের অর্থ কী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেখানকার মানুষের অবস্থা এখন ভয়ংকর।