মঙ্গলের লক্ষে মহাকাশে প্রাইভেট কার, সফল হল শক্তিশালী রকেটের উৎক্ষেপণ
৬ তারিখ ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় অনুযায়ী বেলা ১.৩০টায় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাসে উড়ে যায় 'ফ্যালকন হেভি' রকেট।
মহাকাশে এর আগে মানুষ ছাড়াও অনেক কিছুই পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, কোনও দিনই গাড়ি পাঠানো হয়নি। এবার আস্ত একটাই গাড়ি গিয়ে পৌঁছল মহাকাশের গায়ে। এবার সে পাড়ি জমিয়েছে লাল গ্রহ মঙ্গলের উদ্দেশে। ৬ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এই গাড়ি নিয়ে মহাকাশে পৌঁছয় 'ফ্যালকন হেভি' রকেট।
স্পেস এক্স-এর কর্ণধার এলন মাস্ক জানিয়েই দিয়েছিলেন মঙ্গলে গাড়ি পাঠানো আগামী দিনে মঙ্গলে জনবসতি স্থাপনের একটা ধাপ। মঙ্গলের গায়ে গাড়ি! এই নিয়ে হইচই-এর অভাব হয়নি। তবে, মার্কিন অ্যাভিয়েশন দফতর মহাকাশে গাড়ি পাঠানোর অনুমতির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখায় এলন মাস্কের উৎকন্ঠার শেষ ছিল না। শেষমেশ ৫ ফেব্রুয়ারি ফ্যালকন হেভি রকেটে ভরে গাড়ি পাঠানোর অনুমতি পান মাস্ক।
Going to be reliving this sight for days. #FalconHeavy pic.twitter.com/3Bo2dGoqxB
— Catherine Q. (@CatherineQ) February 6, 2018
৬ তারিখ ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় অনুযায়ী বেলা ১.৩০টায় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাসে উড়ে যায় 'ফ্যালকন হেভি' রকেট। ২০ তলা সমান উঁচু এই রকেটের একদম মাথার দিকে একটি স্পেস সাটলের সঙ্গে জুড়ে রাখা ছিল টেসলার 'রোডস্টার' গাড়িটি। মহাকাশে পৌঁছনোর পর 'ফ্যালকন হেভি' রকেটের ২৭টি ইঞ্জিন 'রোডস্টার' গাড়িটিকে নিয়ে মঙ্গলের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। অবশ্য 'ফ্যালকন হেভি' রকেটটিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পার করতে এরসঙ্গে 'ফ্যালকন ৯'-এর তিনটি রকেট জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। 'ফ্যালকন ৯' রকেট তিনটি মূলত 'বুস্টার' হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
I'm shook. Literally. It shook the ground. #FalconHeavy #SPACEX pic.twitter.com/Q77lcSUNNE
— Miriam Kramer (@mirikramer) February 6, 2018
উৎক্ষেপণের পর 'ফ্যালকন ৯'-এর প্রথম দু'টি রকেট কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাডে ফিরে আসে। তৃতীয় বুস্টার রকেটটিরও ফিরে আসার কথা ছিল পৃথিবীর বুকে এবং রকেটটি সমুদ্রের উপর ল্যান্ডিং প্যাডে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু, তৃতীয় রকেটটির কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় ঘণ্টা চার পরে স্পেসএক্স-এর কর্ণধার এলন মাস্ক জানান তৃতীয় বুস্টার রকেটটি অবতরণের সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
Live Views of Starman https://t.co/G335kvVsta
— SpaceX (@SpaceX) February 6, 2018
এদিকে, এই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ দেখতে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে ভিড় করেছিলেন বহু মানুষ। 'ফ্যালকন ৯'-এর বুস্টার রকেটগুলি মহাকাশ থেকে ফিরে আসতে চিৎকার করতে থাকেন মানুষজন। এর আগে এমনভাবে বুস্টার রকেট ফিরে আসেনি। এলন মাস্কের স্পেস এক্স সংস্থা তাঁদের মহাকাশ পর্যটনে রকেটকে রি-ইউজেবল করে ব্যবহারের পদ্ধতি বের করেছে। এর ফলে পর্যটন ব্যাবসায় খরচ অনেকটাই কমে আসবে। এই পরিকল্পনাকে এবার হাতে-নাতে প্রয়োগ করেছে স্পেস এক্স।
Currently over Australia 🇦🇺 pic.twitter.com/HAya3E6OEJ
— Elon Musk (@elonmusk) February 6, 2018
'ফ্যালকন হেভি' রকেট এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট-এর তকমা পেয়ে গেল। তবে, আকৃতি বা ক্ষমতায় মাস্কের 'ফ্যালকন হেভি' রকেট কোনওভাবেই নাসার 'স্যাটার্ন ফাইভ' রকেটকে পিছনে ফেলতে পারেনি। ১৯৬৯ সালে নাসা 'স্যাটার্ন ফাইভ' রকেটে তিন নভোশ্চরকে চাঁদে পাঠিয়েছিল। ওই রকেটি ১৩০ মেট্রিক টন বা ১০টি বাসকে বহনের ক্ষমতা ছিল। সেখানে মাস্কের স্পেস এক্স 'ফ্য়ালকন হেভি' রকেটের শুধুমাত্র পৃথিবীর লো-অরবিটে বহন ক্ষমতা ৫৭ মেট্রিক টন। যার অর্থ ৪টি বাসকে এই রকেট বহন করতে পারে। ১৯৭২ সালে 'স্যাটার্ন ফাইভ'-এ বারো জন নভোশ্চরকে মহাকাশে পাঠিয়েছিল। সেই রকেটটি আরও বেশি শক্তিশালী ছিল। এমনকী, উচ্চতায় মাস্কের 'ফ্যালকন হেভি' রকেটটি ২৩০ ফুট। সেখানে নাসার 'স্যাটার্ন ফাইভ'-এর উচ্চতা ৩৩৩ ফুট। একমাত্র খরচের দিক থেকে নাসাকে পিছনে ফেলেছেন মাস্ক। 'স্যাটান ফাইভ' রকেটটি তৈরিতে নাসার খরচ পড়েছিল প্রতিটি উৎক্ষেপণে এক বিলিয়ন ডলার। আর সেখানে মাস্কের 'ফ্যালকন হেভি' রকেট তৈরিতে খরচ হয়েছে ৯০ মিলিয়ন ডলার। মহাকাশ পর্যটনে অর্থের করম খরচ মাস্কের 'স্পেস এক্স' সংস্থাকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
'ফ্যালকন হেভি'- রকেটের উৎক্ষেপণের পরই নাসা টুইট করে মাস্ক ও তাঁর 'স্পেস এক্স' সংস্থাকে অভিনন্দন জানায়। মাস্ক জানিয়েছেন, মঙ্গলের গায়ে পৌঁছতে 'রোডস্টার' গাড়ির অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে।
Liftoff! We have liftoff on the #falconheavy Congratulations @SpaceX pic.twitter.com/wnEvXt425M
— Buzz Aldrin (@TheRealBuzz) February 6, 2018
Congratulations, @SpaceX! Amazing! pic.twitter.com/MvR3xNyh3r
— Bill Nelson (@SenBillNelson) February 6, 2018
Congratulations @SpaceX! Acting Administrator Lightfoot: "All of us in this business know the effort it takes to get to a first flight...and recognize the tremendous accomplishment we witnessed today" https://t.co/SvJG2157zA https://t.co/JJK1RKFtPC
— NASA (@NASA) February 6, 2018