ক্যামেরার সামনে বসে অবিরাম খাওয়া: অনলাইনে এত জনপ্রিয় কেন?
এক ধরণের লোক আছেন - যারা ক্যামেরার সামনে বিপুল পরিমাণ খাবার খান এবং সে দৃশ্য ইন্টারনেটে দেখান। এটা একই সাথে বিনোদন, উপার্জন এবং এক বিরাট ব্যবসা। এদের বলে মুকব্যাঙ্গার।
'মুকব্যাং' কথাটা শুনেছেন কি? এটা এখন অনলাইনে যাকে বলে এক বিরাট 'ক্রেজ' বা হুজুগে পরিণত হয়েছে।
ব্যাপারটা কিছুই না। একজন লোক ক্যামেরার সামনে বসে, তার সামনে রাখা প্রচুর খাবার। লোকটির কাজ একা সেই বিপুল পরিমাণ খাবার খেয়ে শেষ করা।
এই দৃশ্য অনলাইনে দেখবেন লক্ষ লক্ষ লোক। এটাই তাদের বিনোদন, আর এই মহা-খাদক এ থেকে অর্থও উপাজন করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এটা এখন এক বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় খাওয়া হচ্ছে একটা সামাজিক ব্যাপার, যখন সবাই মিলে একসাথে খেতে বসেন তখন তারা সারাদিনের পরিশ্রমের কথা ভুলে যান। একা একা বসে খাওয়াটাকে সেখানে ভালো চোখে দেখা হয় না।
এখন এই মুকব্যাঙ্গার যদিও একা বসে খাবেন, কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে তিনি অনেক লোকের সাহচর্য পাবেন - এটাই হচ্ছে মূল ভাবনা।
আফ্রিকাটিভি নামে এক ওয়েবসাইটে ২০১০ সালে এটি প্রথম শুরু হয়েছিল। সেখানে খাদক এবং দর্শকের মধ্যে যোগাযোগের পথ রাখা হয়েছিল।
কোরিয়ান ভাষায় মুক-দা মানে খাওয়া, আর ব্যাংক সং মানে সম্প্রচার । দুইয়ে মিলে তৈরি হয়েছেএই মুকব্যাং শব্দটি।
এখানে একজন লোকে এত খাবার খান - যা মোটামুটি একটা গোটা পরিবারের খাবার। খেতে খেতে মুকব্যাঙ্গার নানা রকম মজার মজার গল্প বলেন।
কোরিয়ান তারকা মুকব্যাঙ্গার ব্যানজ্-এর প্রতিটি ভিডিও দেখেন গড়ে ১৫ লাখ লোক। তার ফলোয়ার আছেন ৩৩ লাখ।
একেকটি ভিডিওতে তিনি এত খাবার খান যে তাকে এই ক্যালরি খরচ করতে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে ব্যায়াম করতে হয়।
কিন্তু এই অদ্ভূত জিনিসটা এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে কেন?
মানুষ খেতে ভালোবাসে
মানুষ খাদ্য ভালোবাসে, খেতে ভালোবাসে - এটা সার্বজনীন।
কিন্তু কোরিয়ান সংস্কৃতির ক্ষেত্রে খাবারের অবস্থান একেবারে কেন্দ্রস্থলে । খাবারের নানা দিক নিয়ে কোরিয়ান ভাষায় হাজার হাজার শব্দ আছে।
ইন্টারনেটের যুগে কোরিয়ানদের এই খাদ্যপ্রীতি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এটা এখন এক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এবং একজন বি জে বা 'ব্রডকাস্ট জকি' মাসে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেন। তা ছাড়াওআছে স্পন্সরশিপ থেকে আয়। মুকব্যাঙ্গাররা দর্শকদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে অর্থ পান - যা স্টারবেলুন নামে এক ধরণের ইন্টারনেট কারেন্সিতে দেয়া হয়।
এটা এখন শুধু দক্ষিণ কোরিয়া নয়, ইউটিউবের কারণে আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
একাকীত্ব কি এর কারণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু খাদ্যের প্রতি ভালোবাসা নয়, একাকীত্ব দূর করতেও এটা কাজে লাগছে।
গবেষণায় দেখা যায় : কোরিয়ায় একা থাকার পরিমাণ বাড়ছে।
এক হিসেবে বলা হয় দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৬ লক্ষ বাড়ি আছে - যেখানে মাত্র একজন লোক বাস করেন। ৯০ ভাগ লোকই বলেছেন তারা কোন না কোন সময় একাকীত্ব বোধ করেছেন।
তা ছাড়া অনেকে বলেন, যারা খাদ্য নিয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বা খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছেন -এমন অনেকে মুকব্যাঙ্গার দেখে আবার খাওয়াদাওয়ার প্রতি আকর্ষণ ফিরে পেয়েছেন।
সুন্দরী মেয়েদের নানা রকম শব্দ করে খেতে দেখার আকর্ষণ
অনেকে সুন্দরী মেয়েদের খাওয়ার দৃশ্য দেখাটাকে খুব আকর্ষণীয় বলে মনে করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় মনে করা হয়, মেয়েরা হবে ছোটখাটো, ভদ্র, নম্র, সংযত।
তাই একজন সুন্দরী মুকব্যাঙ্গার নানা রকম শব্দ করে বিপুল পরিমাণ খাবার খাচ্ছেন - এটা স্বাভাবিক নয় বলেই অনেকের কাছে তা এক অদ্ভূত আকর্ষণীয় বা উত্তেজক ব্যাপার বলে মনে হয়। তাই অনলাইনে পুরুষ মুকব্যাঙ্গারদের চাইতেও তাদের কদর বেশি।
অনেকের কাছে খাওয়ার সময় এই সুন্দরীরা যত বেশি শব্দ করেন ততই ভালো। তাই খাওয়ার সময় শব্দ হওয়া যাদের পছন্দ নয়, তারা মুকব্যাং দেখতে আসবেন না।
এসব ভিডিওর সমালোচকরা বলেন, এতে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়াকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তাদের মতে, কোরিয়ায় গত প্রায় দু'দশকে স্থূলতার পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।
মুকব্যাং ভক্তরা অবশ্য এসব সমালোচনাকে গায়ে মাখেন না। দক্ষিণ কোরিয়ায় এসব ভিডিওর জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে।