পাকিস্তানের বিধ্বংসী বন্যা, ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে ৩০ লক্ষের বেশি শিশু, উদ্বেগে ইউনিসেফ
পাকিস্তানের বিধ্বংসী বন্যায় ৩০ লক্ষের বেশি শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। বুধবার এই তথ্য এক বিবৃতির মাধ্যমে তুলে ধরেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের চিলড্রেনস ফান্ড, যা ইউনিসেফ নামে পরিচিত। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যার কারণে তিরিশ লক্ষের বেশি শিশুর জলবাহিত রোগ, ডুবে যাওয়া ও অপুষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।'
৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
এ বছরের জুলাইয়ের মধ্য সময় থেকে শুরু হওয়া বর্ষার ভারী বৃষ্টির কঠোর প্রভাব পড়েছে গোটা দেশজুড়ে। এই বৃষ্টির কারণে দেশের ১১৬টি জেলার ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৬৬টি জেলা অত্যন্ত খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইউনিসেফ সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিবার ও শিশুদের জরুরি প্রযোজনীয়তা মেটানোর জন্য সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের।' গত সপ্তাহেই পাকিস্তান জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্র রয়েছে বলে ঘোষণা করে এবং ব্যাপক এই বন্যায় সহয়তা প্রদানের জন্য অন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছে।
বৃষ্টিতে প্রভাবিত একাধিক এলাকা
ইউনিসেফ জানিয়েছে পাকিস্তানে বছরের ভারী বর্ষার বৃষ্টি, ভয়াবহ এই বন্যা ও ভূমিধ্বসের সৃষ্টি করেছে, সেখানে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৬০ লক্ষ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, '১,১০০ জন মানুষের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৩৫০ জনের বেশি শিশু এবং আরও ১৬০০ জন আহত। ২৮৭,০০০-এর বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬৬২,০০০ টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি বড় নদীর তীর ভেঙে গিয়েছে এবং বাঁধের জল উপচে পড়ছে, যার জেরে বাড়িঘর ক্ষতির পাশাপাশি কৃষি, রাস্তা, ব্রিজ, স্কুল, হাসপাতাল ও সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।'
বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে শিশুদের মধ্যে
ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে যে বন্যার কারণে এলাকার ৩০ শতাংশ জল প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডায়েরিয়া ও জলবাহিত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও শ্বাসযন্ত্রের রোগ ও ত্বকের সমস্যাও দেখা দিতে শুরু করেছে। ইউনিসেফের বিবৃতি বলছে, 'বন্যার আগেই শিশুদের মধ্যে গুরুতর অপুষ্টি দেখা দিতে শুরু করে এবং বন্যা জনসংখ্যার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ৪০ শতাংশ শিশুকে প্রভাবিত করেছে।' ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে যে বিপদজ্জনক এই মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ দিনভর ও সপ্তাহজুড়ে এই ভারী বৃষ্টি অনবরত হতে থাকলে কিছু অঞ্চল একেবারে জলের তলায় চলে যাবে। প্রসঙ্গত, গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে এত ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছে পাকিস্তান সরকার।
হু–এর উদ্বেগ
আগামী দিনগুলিতে বন্যা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে এই পূর্বাভাসের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বন্যা কবলিত এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর বেশি নজর দিতে বলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকেও বন্যার কারণে মাথাচাড়া দেওয়া বিভিন্ন রোগের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং রোগ সম্প্রসারণ রোধ করার ওপর নজর দিতে বলা হচ্ছে। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি যে ক্রমশ আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে তা বলাইবাহুল্য।