জলবায়ু পরিবর্তনের জের, ২০৫০ সালের মধ্যেই ভিটেমাটি হারাতে পারেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৬ কোটি মানুষ
একে করোনা, তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব। ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া (ক্যানসা)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রতলের বিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা ও শস্যফলনে গরমিলের মত নানা ক্রমবর্ধমান সমস্যার কারণে আগামী ২০২৫০ সালের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৬.২ কোটি মানুষকে হারাতে হতে পারে হয়তো ভিটেমাটি। জোরালো হচ্ছে দেশান্তরের সম্ভাবনাও।

৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা
ক্যানসা-র রিপোর্ট বলছে, জলবায়ুর ধীর পরিবর্তন ক্রমশ চরমভাবাপন্নের দিকে যাওয়ার ফলে এই বছরেই ১.৪ কোটি ভারতীয় ভিন জায়গায় পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত দূষিত গ্যাসের পরিমাণ না কমলে আগামী কিছুদিনেই আবহাওয়ার গড় উষ্ণতা বাড়তে পারে প্রায় ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। যার জেরে বাড়বে শরণার্থী সমস্যাও। বিশ্বব্যাঙ্কের আধিকারিক ব্রায়ান জোন্স এই রিপোর্টের তদারকি করেছেন বলেও জানা যাচ্ছে।

ভয় ধরাচ্ছে ভারতের সামগ্রিক অবস্থাও
যদিও এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্রায়ান জোন্স জানান, "রিপোর্ট প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশান্তরে আসা মানুষদের হিসাবের আওতায় আনা হয়নি। তা হলে সামগ্রিক চেহারা আরও ভয়াবহ হতো।" ক্যানসা-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ৬০% কৃষিকাজ বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল, তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার ৯৯.৩% কৃষিকর্মী অসংগঠিত ক্ষেত্রের। ফলে জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তনে মারাত্মক আঘাত পেতে পারে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াই।

জলবায়ুর পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দাতে জেরবার বিশ্ব
শুক্রবার প্রকাশিত ক্যানসা-র রিপোর্টে ফুটে উঠেছে ভবিষ্যত পৃথিবীর আরও ভয়ঙ্কর চেহারা। রিপোর্ট বলছে ২০৫০-এ দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি কমতে পারে প্রায় ২%, ২১০০ সাল নাগাদ সংখ্যাটা হতে পারে প্রায় ৯%! আশঙ্কার কথা, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে জলের অতলে চলে যেতে পারে সুন্দরবন ও মহানদী বদ্বীপের বড় অংশ। সাধারণত দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলোর গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে থাকে কৃষির উপর। জলবায়ুর পরিবর্তন সেক্ষেত্রে ভয়ানক সমস্যা ডেকে আনবে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। তাছাড়া বড় শহরগুলিতে শরণার্থী সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে, এমনটাই মত ক্যানসা-র।

প্যারিস চুক্তির ব্যর্থতায় মাথাচাড়া দিচ্ছে নতুন সমস্যা
এদিকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় বিশ্ব উষ্ণায়নের লাগামছাড়া বাড়বাড়ন্তেও এখনও লাগাম পরানো সম্ভব হয়নি। এমতবস্থায় ক্যানসা-র মতে ২০২০-তে যে পরিমাণ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, আগামীতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। রিপোর্ট বলছে, ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও শুধুমাত্র জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সমস্যায় পড়বে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া। বিশ্ব উষ্ণায়ন সংক্রান্ত ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক কর্মী হরজিৎ সিংয়ের মতে, অন্যান্য দেশের মত উন্নত না হওয়া সত্ত্বেও ভারত সরকার এখনও এই সমস্যা মোকাবিলায় বড়সড় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি, তাই স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যতে স্থান সঙ্কুলানে জেরবার হবে ভারতও।

তৃণমূলের হেভিওয়েট বিধায়ককে নিয়ে গুঞ্জন! রাজ্যপালের টুইট বার্তা উসকে দিল জল্পনা