ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কড়া অবস্থান: ২০২০ নির্বাচনের আগে মার্কিন রাষ্ট্রপতির স্টান্ট?
নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে পরেই সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এল দুঃসংবাদ। অন্যতম ঘনিষ্ঠ দেশ ভারতের থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প
নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে পরেই সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এল দুঃসংবাদ। অন্যতম ঘনিষ্ঠ দেশ ভারতের থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তাঁদের বক্তব্য, নয়াদিল্লির ওয়াশিংটনকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে যতটা সুবিধা দেওয়ার কথা, তা তারা দিচ্ছে না। এর পরে ভারতের 'উন্নয়নশীল দেশ'-এর তকমাও সরিয়ে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন যার ফলে ভারত এখন আর আগের মতো তার প্রায় ২,০০০ দ্রব্য শুল্কহীনভাবে আমেরিকার মাটিতে রফতানি করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই এই ঝঞ্ঝাট যে উদ্বিগ্ন করবে বিভিন্ন মন্ত্রককে, তা সহজেই বোঝা যায়। পাঁচ বছর আগে যখন মোদী প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখন মার্কিন মুলুকে একটি অনুকূল প্রশাসন ছিল বারাক ওবামার নেতৃত্বে। কিন্তু এবারে পরিস্থিতি ততটা অনুকূল নয়। ভারতের প্রতি আমেরিকার এই অবস্থানে গড়পড়তা আমদানি-রফতানির ক্ষেত্র ছাড়া কি আর কোনওভাবে প্রভাব দেখা যেতে পারে?
কড়া পদক্ষেপ মানে এই নয় যে আমেরিকা ভারতের প্রতি ঘোরতর অপ্রসন্ন
এই পরিস্থিতিটিকে দুইভাবে দেখা যেতে পারে। এক, ট্রাম্প প্রশাসনের এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার অর্থ এই নয় যে ভারতের প্রতি আমেরিকা এখন অপ্রসন্ন। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ এবং 'আমেরিকা ফার্স্ট' মতাদর্শের ফলে শুধু ভারত নয়, নিশানায় রয়েছে চিন এবং তুরস্কের মতো দেশও। এবং আগামী বছর যেহেতু মার্কিন মুলুকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তাই আশানুরূপভাবেই যে ট্রাম্প জাতীয়তাবাদী দামামা বাজানো শুরু করে দেবেন নিজের ভোটব্যাঙ্ককে সংঘবদ্ধ ও উজ্জীবিত করতে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। সেদিক থেকে ভারতের বিশেষ চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
ভারতকে আমেরিকার অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন
আর তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমান মার্কিন দেশের সঙ্গে চিনের মত বিরাট কিছু নয়। অতএব, ট্রাম্পের গোঁসা হলেও তা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে বলেই ধারণা। কারণ নিজেদের মধ্যেকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছাড়াও ভারত ও আমেরিকার অনেক বড় ইস্যুতে গাঁটছড়া বেঁধে লড়ার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। ট্রাম্প একদিকে অর্থনৈতিক বিষয়ে ভারতের বিরোধিতা করে কথা বললেও আফগানিস্তান বা চিন ইস্যুতে মার্কিন স্বার্থের জন্যে ভারতকে কতটা প্রয়োজন তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। অতএব, এই মনোমালিন্যের ভবিষ্যৎ খুব উদ্বেগজনক কিছু নয়। আর ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুনে ভারতের তরফ থেকে শুধুমাত্র "দুর্ভাগ্যজনক" প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যায় যে নয়াদিল্লি খুব একটা বিচলিত হয়তো নয় কারণ তারা জানে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন নয় এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও আলাপ-আলোচনা চালালে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ট্রাম্পের এই অবস্থানে কি কাছাকাছি আসতে পারে ভারত ও চিন?
অন্যদিকে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন এই ভারত-বিরোধী পদক্ষেপটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে এবং আগামী বছরের ভোটেই যদি এর তাৎপর্য সীমিত না থাকে, তাহলে ভারতের বিদেশনীতি ঝুঁকবে চিনের দিকে। যেহেতু ট্রাম্পের আমেরিকা এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লড়াইতে লিপ্ত, তাই "তোমার দুশমন আমারও দুশমন" তত্ত্ব মেনে বেইজিং এবং নয়াদিল্লির মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় হওয়াটাই স্বাভাবিক। সম্প্রতি পাকিস্তান-স্থিত জঙ্গি সর্দার মাসুদ আজহারের উপরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আটকানোর ব্যাপারে চিন হাত তুলে দিয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের ফলেও যে মোদী এবং শি জিনপিং প্রশাসন নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা বাড়াবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এই সহযোগিতার মানে যে ভারত এক লাফে চিনের 'বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এর নৌকোয় উঠে পরে বৈঠা বাইতে শুরু করবে, এমনটিও নয়। আর সেদিক থেকে বলতে গেলে যতক্ষণ ভারত ও চিনের মধ্যে ফারাক থাকছে, শেষ বিজয়ী বলা চলে ট্রাম্পকেই।