মোদী আমাকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে বলেছে!ট্রাম্পের উটকো দাবি মুহূর্তে তছনছ করল কূটনীতির দুনিয়াকে
সালটা ২০০০। নাইন ইলেভেন হতে তখনও বছর দেড়েক দেরি। আমেরিকার বুকে আছড়ে পড়া সেই সন্ত্রাসের ঘটনা এবং তার পরে আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে পরিবর্তিত সমীকরণের জটিলতা তখনও পৃথিবীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেনি।
সালটা ২০০০। নাইন ইলেভেন হতে তখনও বছর দেড়েক দেরি। আমেরিকার বুকে আছড়ে পড়া সেই সন্ত্রাসের ঘটনা এবং তার পরে আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে পরিবর্তিত সমীকরণের জটিলতা তখনও পৃথিবীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেনি। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টন দক্ষিণ এশিয়া সফরে এসে ভারত ও পাকিস্তান দু'দেশেই যান। কিন্তু ভারতে তিনি যতটা খোলামেলা মনে সফর করেন, পাকিস্তানে করেন তার উল্টোটা। ইসলামাবাদে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক জেনারেল মুশারফকে কড়া করে শুনিয়ে দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনওভাবেই কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করবে না। ওয়াশিংটন মধ্যস্থতা করতে অপারগ এবং করতে চায়ও না। কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে।
নাইন ইলেভেনের পরে মার্কিন বিদেশনীতিতে ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে
প্রায় দু'দশক আগে ডেমোক্র্যাট রাষ্ট্রপতি ক্লিনটনের সেই কথাগুলি শুনে অনেকেই বলতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা ভারতের পক্ষেই কথা বলতেন। কিন্তু ৯/১১-র পর কিন্তু দেখা গিয়েছে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি জর্জ ডাব্লিউ বুশও ভারতের পক্ষে বেশি সমর্থন প্রদান করেছেন। এমনকি, বর্তমান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনিও রিপাবলিকান শিবিরের লোক, অদূর অতীতে পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ করেছেন আফগানিস্তান ইস্যুতে। ৯/১১-র ঘটনার পরে মার্কিন বিদেশনীতিতে একটি ধারাবাহিকতা চলে আসে এবং সেটি পুরোপুরিই সন্ত্রাস-বিরোধী। এবং পাশাপাশি, চিনের উত্তরোত্তর গুরুত্ববৃদ্ধির ফলেও ভারতের প্রতি আমেরিকার একটি কৌশলগত সমর্থনের প্রয়োজনও সৃষ্ট হয়েছে।
ট্রাম্পের আজব কাণ্ড কূটনীতিবিদদের নাড়িয়ে দিয়েছে
কিন্তু রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প সোমবার, ২২ জুলাই, হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতে যে কাণ্ডটি করলেন, তাতে ওয়াশিংটনের মুখ তো পুড়েছেই, পাশাপাশি মার্কিন-ভারত সুসম্পর্কেও বেশ বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইমরানের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন যে সপ্তাহ খানেক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর যখন সাক্ষাৎ হয়, তখন নাকি মোদী তাঁকে অনুরোধ করেন কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে। তাঁর এই বক্তব্যে সোৎসাহে ইমরান বলেন তিনি যদি তা করে দেখিয়ে দিতে পারেন, তাহলে পাকিস্তানের আপামর জনগণের আশীর্বাদধন্য তিনি হবেন।
মার্কিন আইনপ্রণেতা, এমনকি ভারতে বিরোধীরাও ক্ষিপ্ত
ট্রাম্পের বক্তব্য চাউড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় এমন অনুরোধ তারা কখনই করেনি। মার্কিন আইনপ্রণেতারাও ভারতের কাছে লজ্জাস্বীকার করেন তাঁদের রাষ্ট্রপতির এহেন উক্তিতে। এমনকি, মার্কিন মুলুকে এক প্রাক্তন পাকিস্তানি দূতও বলেন যে দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ইস্যু আর রিয়েল এস্টেটের বাড়ি খাড়া করা এক জিনিস নয়। ভারতে বিরোধীরাও ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংসদ শশী থারুরও।
ট্রাম্প এর আগেও ভারত-পাকিস্তানের সুসম্পর্কের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে মধ্যস্থ করার অনুরোধ এসেছে বলে যে দাবি তিনি জানিয়েছেন, তাতে তাঁর নিজের প্রশাসনের বিদেশনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয় তিনি ইতিহাস জানেন না, আর নয়তো সব জেনেও স্রেফ নিজের মহানতা ফলাতে গিয়ে নাক খুইয়েছেন।
ধাক্কা খেতে পারে মার্কিন-ভারত সুসম্পর্ক?
মার্কিন বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন যে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ফলে ধাক্কা খেতে পারে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। একে তো ইরানের প্রসঙ্গে বা রাশিয়ার থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার ব্যাপারে ভারতের উপরে চাপ রেখে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার উপরে রয়েছে বাণিজ্য ক্ষেত্রে টানাপোড়েন। আফগানিস্তান প্রসঙ্গেও শান্তি আলোচনায় ভারত জায়গা পায়নি মার্কিন প্রভাব থাকা সত্ত্বেও। খোদ ট্রাম্প যেখানে অতীতে আফগানিস্তানে ভারতের আরও বড় ভূমিকা পালনের কথা বলেছিলেন, সেখানে কাবুলে নয়াদিল্লির গুরুত্বহ্রাসে ভারতের ক্ষোভ বাড়লে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর এবারে ভারতের ঘরের কাশ্মীর নিয়ে বেয়াড়া দাবি করে ট্রাম্প বাড়তে থাকা ব্যবধানকে না ঘুচিয়ে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করলেন।
সেপ্টেম্বরেই মার্কিন সফরে যাওয়ার কথা মোদীর। কূটনীতির দুনিয়া এখন তাকিয়ে রয়েছে কী হয় সেখানে জানতে।