ডোনাল্ড ট্রাম্পের এলোপাথাড়ি নির্বাচনী প্রচার কি রিপাবলিকানদের তরী তীরের অদূরেই ডোবাবে?
রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কি তবে তীরে এসে তরী ডুবতে চলেছে? গত সোমবার নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম বিতর্কসভায় ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে হতাশাজনক পারফরম্যান্স তো বটেই, অতঃপর প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী এলিসিয়া মাশাদোকে ঘিরে তৈরী হওয়া বিতর্ককে মধ্যরাত্রে টুইট করে আরও বাড়িয়ে ট্রাম্প এখন তাঁর নিজের দলের মধ্যেই এখন ধোয়াঁশা সৃষ্টি করেছেন। এভাবে চললে আগামী 8ই নভেম্বরের লড়াইতে হিলারিই যে ইতিহাস গড়ার ব্যাপারে এগিয়ে থাকবেন, তাতে কোনও দ্বিমত নেই।
'দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট'-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিপাবলিকান পার্টির আধিকারিকরা ট্রাম্পের এহেন আচরণে লজ্জিত এবং বিরক্ত। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প গত আট বছরের ডেমোক্র্যাট শাসনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি সামনে এনে রিপাবলিকানদের পক্ষে হওয়া ঘোরাতে ব্যর্থ বলেও তাঁরা মনে করছেন।
প্রতিবেদনটিতে এও বলা হয়েছে যে মার্কিন আইনসভার দু'কক্ষের প্রতিনিধিরাই এখন ট্রাম্পের প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলছেন। কয়েকজন নেতা অবশ্য এখনও ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছেন নির্বাচনী প্রচারের এই শেষ পর্যায়ে যাতে তিনি বড় ধরনের ভুল না করে বসেন যাতে রাষ্ট্রপতি পদ তো হাতছাড়া হয়ই, দীর্ঘ মেয়াদে রিপাবলিকান পার্টির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলেরও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
ট্রাম্প এমনিতেই এবার মহিলাদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে বিষোদ্গার করে দুর্নাম কুড়িয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রতিপক্ষ হিলারিও। আর নিউ ইয়র্কের বিতর্কসভায় সেই সুযোগটাই নেন ধূর্ত রাজনীতিবিদ হিলারি। ট্রাম্পকে কোনঠাসা করতে উত্থাপন করেন মাশাদোর প্রসঙ্গ। বলেন 1996 সালে বিশ্বখেতাব জেতা ভেনিজুয়েলার ওই সুন্দরীকে ট্রাম্প অতীতে সবার সামনে তাঁর ওজন নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। মাশাদো পরে স্বীকার করেন যে ট্রাম্পের জন্যে সেইসময়ে তাঁকে যথেষ্ট অসম্মানিত হতে হয়েছিল।
ঘটনার রেশ এখানেই শেষ হয় না। গত শুক্রবার (সেপ্টেম্বর ৩০) মাঝরাত্তিরে ট্রাম্প ফের একপ্রস্থ টুইট করেন এই প্রসঙ্গে । হিলারি এবং মাশাদোকে ফের আক্রমণ করে বসেন। এমনকী মাশাদোর কোনও এক "সেক্স টেপ"-এর প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন তাতে। এর পাশাপাশি, ট্রাম্প হিলারির স্বামী এবং প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কেও তাঁর প্রচারের হাতিয়ার বানান। হিলারিকে তাঁর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে খোঁটা দেন, এমনকী বর্তমান রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়েও প্রবল হইচই বাঁধান। পরে অবশ্য বেগ পেয়ে ওবামা-প্রসঙ্গটি ঘুরিয়ে হিলারির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেন, বলেন ওবামার জন্ম-বিষয়ক বিতর্ক হিলারিই ২০০৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারের সময়ে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্পের এই এলোপাথাড়ি নির্বাচনী প্রচার তাঁর নিজের দলের নেতাদেরই শঙ্কিত করছে। ওহায়ো প্রদেশের রিপাবলিকান চেয়ারম্যান ম্যাট বর্গস তো ট্রাম্পের কান্ডকারখানা দেখে বলেই ফেলেছেন: "এবার সব থামান দয়া করে," 'ওয়াশিংটন পোস্ট'-এর প্রতিবেদনটি জানিয়েছে।