প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কিম জং আন: শত্রুতা ও বন্ধুত্বের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং আনের সম্পর্ক অনেকটা রোলার কোস্টারের মতো। কখনো উপরের দিকে উঠছে তো আবার হঠাৎই নামতে শুরু করে দিল এরকম।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং আনের সম্পর্ক অনেকটা রোলার কোস্টারের মতো। কখনো উপরের দিকে উঠছে তো আবার হঠাৎই নামতে শুরু করে দিল এরকম।
গত দু'বছরে এই সম্পর্ক নানান উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।
এই টানাপড়েনের মধ্যে কখনও ছিল একে অপরকে ক্রুদ্ধ ভাষায় অপমান করা, ব্যাঙ্গ করা, কখনও কখনও ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি আবার কখনও প্রেমে পড়ে যাওয়ার কথাও।
তাদের মধ্যে মুখোমুখি দেখা হয়েছে মোট তিনবার। প্রথমবার সিঙ্গাপুরে যেখানে তাদের 'প্রেম' হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল, তারপর ভিয়েতনামে যেখানে তাদের সাক্ষাৎ মধুর ছিল না, আর সবশেষে তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেখার করার জন্যে কিম জং আনের দেশেই চলে গেলেন।
তাদের এই সম্পর্ককে বলা যেতে পারে শন্ধু (শত্রু+বন্ধু)
তবে এই দুই নেতার সম্পর্কের বেশিরভাগটাই সীমাবদ্ধ ছিল টুইট আর বিবৃতির বাকযুদ্ধের ভেতরে।
মি. ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো জায়গায় আক্রমণ করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে।
কিন্তু ঠিক এক বছর পরেই, ২০১৮ সালে, সিঙ্গাপুরে দুই নেতার পর ঐতিহাসিক বৈঠকের পর মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, "আমরা প্রেমে পড়েছি।"
এর পর ভিয়েতনামেও তাদের দেখা হয়। কিন্তু আলোচনায় অগ্রগতি ছাড়াই সেটা ভেঙে যায় তড়িঘড়ি।
একসময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, "ক্রোধের আগুনে উত্তর কোরিয়া পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, যা এই পৃথিবী যা কখনো দেখেনি।"
মি. কিমকে "রকেট ম্যান" হিসেবে ব্যাঙ্গ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, "তিনি ও তার সরকার এক আত্মঘাতী মিশনে আছেন।"
এর জবাবে মি. কিম ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছিলেন "ডোটার্ড" যার অর্থ "নির্বোধ বুড়ো।"
এর পরপরই উত্তর কোরিয়া কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। জবাবে আরো কিছু নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি হুমকিও দেয়।
আরো পড়তে পারেন:
উত্তর কোরিয়ার ভেতরে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট
সংক্ষেপে জেনে নিন উত্তর কোরিয়া সংকট
কিভাবে সম্ভব হলো কিম-ট্রাম্প বৈঠকের উদ্যোগ ?
অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকটি টুইট করেন। মাত্র একদিনেই তিনি উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে করেন কয়েক গুচ্ছ টুইট। মি. কিমকে 'উন্মাদ' হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন যে "উত্তর কোরিয়ার নেতা নিজের লোকদের হত্যা করছে। এর পরিণতি তাকে ভোগ করতে হবে যা আর কখনো হয়নি।"
কিন্তু এরকম হুমকিতে পিছু হটেন নি কিম জং আন। বরং তিনি তখন তার ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি প্রদর্শন করেন।
তিনি বলেন 'উন্মাদ' মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণেই তিনি বুঝেছেন যে, তার দেশের জন্য পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ না করে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মি. কিম বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের পুরোটাই আমাদের পরমাণু অস্ত্রের পাল্লার মধ্যে রয়েছে। এবং আমার টেবিলে সবসময়ই ওই বোমা ফাটানোর জন্যে একটি বোতাম আছে।"
"আগুনের মাধ্যমে আমি নিশ্চিতভাবে এবং অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ভীমরতিগ্রস্ত এই বৃদ্ধকে আমার হাতের মুঠোয় আনবো," বলেন তিনি।
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত বেশ কিছু টুইট করেন এবং দাবী করেন তার পরমাণু বোমার সুইচ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের বোমার সুইচের চেয়ে "অনেক বড়" এবং "বেশি শক্তিশালী''।
পাল্টাপাল্টি এই হুমকি-ধামকির পর নাটকীয়ভাবে অনেক কিছু বদলে যেতে থাকে। দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক কথা চালাচালি হতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মাধ্যমে।
হঠাৎই ঘোষণা করা হলো যে এই 'চরম শত্রু' বৈঠকে মিলিত হবেন।
এর মধ্যে উত্তর কোরিয়ার 'চিরশত্রু' দক্ষিণ কোরিয়ার নেতার সাথেও মি. কিমের বৈঠক হলো। সীমান্ত এলাকায় গিয়ে তারা হাত মেলালেন। একে অপরের দেশের সীমান্ত পার হয় 'শত্রু-দেশের' মাটিতে পা-ও রাখলেন।
এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সমাবেশে বললেন, "জুন মাসের ১২ তারিখে আমরা সিঙ্গাপুরে দেখা করছি।"
তাদের সাক্ষাৎ হলো। একে অপরের প্রশংসা করলেন। তাদের উষ্ণ করমর্দনের ছবি ছড়িয়ে পড়লো সংবাদ মাধ্যমে ও সোশাল মিডিয়াতে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বললেন, "আমরা দারুণ কাজ করছি। আমি খুব কঠোর ছিলাম। তিনিও কঠোর ছিলেন। আমরা এদিকে ওদিকে গেলাম। এবং তারপর আমরা প্রেমে পড়ে গেছি। ঠিক আছে?"
"সত্যি আমরা প্রেমে পড়েছি!"
আর এবার তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সীমান্ত পার হয়ে চলে গেলেন উত্তর কোরিয়ার মাটিতে।
মি. ট্রাম্পই প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি উত্তর কোরিয়ায় পা রাখলেন।
আরো পড়তে পারেন:
বরগুনা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরো একজন গ্রেপ্তার
যে কারণে আজকের খেলা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
লন্ডনে এসে যেভাবে খুনি হয়ে উঠলো খুরাম বাট