করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নিয়ে চিন গোটা বিশ্বকে কীভাবে বিভ্রান্ত করেছে জানেন
করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নিয়ে চিন গোটা বিশ্বকে কীভাবে বিভ্রান্ত করেছে জানেন
করোনাভাইরাস বা কোভিড -১৯ নামটা গোটা বিশ্বকে কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছে। চিনের হুবেই প্রদেশে উদ্ভূত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটির জেরে এখনো পর্যন্ত গোটা বিশ্বে প্রায় ২০,০০০ মানুষ প্রান হারিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ১৫০ টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাস থাবা বসিয়েছে।
প্রথমে অসতর্কতাই কি তবে বিপদে কারণ হল?
তবে, শুরুতে চিন এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ হয়ে থাকলে এই ভাইরাসের প্রভাব হ্রাস পেতে পারত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কোভিড -১৯র প্রথম সূত্রপাত হয় হুবেইয়ের উহান প্রদেশে গত বছরের ডিসেম্বরে এবং এর জেরে চিনে এখনও অবধি ৫০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ইউরোপে এই ভাইরাসের ফলে প্রায় ১০,০০০ জন মারা যাওয়ায় ইউরোপও এখন এই মারাত্মক ভাইরাসটির প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
সামুদ্রিক বাজার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাস, আড়াল করা হয়েছে তথ্য
সম্প্রতি আমেরিকান ম্যাগাজিন 'ন্যাশনাল রিভিউ'-এর একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, চিন কীভাবে করোনা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় তথ্য আড়াল করে। এই ভাইরাসের ক্ষতির মাত্রা জেনেও প্রথমে তা লুকিয়ে যায় চিন। এই ভাইরাসের উদ্ভব স্থল চিনের সামুদ্রিক মাছের বাজার বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।
জেনে নিন কীভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল করোনা
ডিসেম্বর ১
চিহ্নিত প্রথম রোগীর লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর ৫দিন পর তার ৫৩ বছর বয়সী স্ত্রী ও নিউমোনিয়া সহ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, যদিও দ্বিতীয় ব্যক্তির বাজারে যাওয়ার কোনো নজির ছিল না। ফলত দ্বিতীয় সপ্তাহের আগেই, উহান চিকিৎসকরা এমন কেস খুঁজে পেয়েছিলেন যা ইঙ্গিত করে ভাইরাসটি মানুষের দ্বারাই সংক্রামিত হয়।
ডিসেম্বর ২৫
উহানের দুটি হাসপাতালে চিনা চিকিৎসক ও কর্মীদের একচেটিয়া নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। এছাড়াও তাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে থাকে।
ডিসেম্বর ৩১
উহান পৌরসভা স্বাস্থ্য কমিশন জানায় তাদের কাছে মানবিক সংক্রমণের কোনোও প্রমান নেই। চিকিৎসকরা কেসগুলি লক্ষ্য করার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তখনও অবধি চিনে এই ভাইরাসকে গুজব হিসেবেই নেওয়া হয়েছিল।
জানুয়ারি ৮
চিনের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসক কর্তৃপক্ষ ভাইরাসটি শনাক্ত করার দাবি করে পুনরায় উল্লেখ করে যে এটি এখনও "মানবিক সংক্রমণের কোনোও সুস্পষ্ট প্রমাণ" খুঁজে পায়নি।
জানুয়ারি ১৩
ওই দিন থাইল্যান্ডের একজন ৬১ বছরের মহিলা উহান শহরে এসে আক্রান্ত হন। তার সাথেও সামুদ্রিক বাজারে যাওয়ার কোনোও সম্পর্ক ছিল না। যা জেনে কার্যত বিস্মিত হয়ে যায় স্থানীয় প্রশাসন।
জানুয়ারি ১৯
চিন জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ভাইরাসটিকে "এখনও প্রতিরোধযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য" হিসাবে ঘোষণা করে।
জানুয়ারি ২১
এরপর সিডিসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস প্রথম কেস ঘোষণা করে। রোগী ছয় দিন আগে চিন থেকে ফিরে এসেছিল।
জানুয়ারি ২২
ডব্লুএইচওর একজন প্রতিনিধি উউহানের একটি মাঠ পরিদর্শন করে নতুনভাবে টেস্ট কিট মোতায়েনের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয় এই ভাইরাসের মানবিক সংক্রমণ চলছে।
প্রায় দুমাস পরে উহানকে পৃথকীকরণের সিদ্ধান্ত নেয় চিনা প্রশাসন
এভাবেই, ভাইরাসের প্রথম ঘটনাটি প্রকাশের প্রায় দুই মাস পরে চিন সরকার উহানকে পৃথকীকরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ততদিনে জল অনেকদূর গড়িয়ে যায়, এবং অনেক দেশেই এই ভাইরাসের একজন করে বাহক পৌঁছে গেছে।