পুলিশকেই দেখাতে হচ্ছে লাইসেন্স! পঞ্চম দিনেও ঢাকার রাস্তা শিক্ষার্থীদের দখলে
পঞ্চম দিনে পড়ল ঢাকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। তারা পথ নিরাপত্তা জন্য ৯ দফা পদক্ষেপের দাবি করছে। গত রবিবার এয়ারপোর্ট রোডে দুটি বাসের রেষারেষির জেরে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
গত রবিবার দুপুরে ঢাকার বিমানবন্দরে যাওয়ার রাস্তায় র্যাডিসন হোটেলের সামনে দুটি বেসরকারির বাসের রেষারেষিতে এক মর্মান্তি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম সজীব নামে দুই শিক্ষার্থী। আরও ১৪ জন গুরুতরভাবে আহত হন। হতাহতরা প্রত্যেকেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রছাত্রী।
কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। সেসময়ই তাদের পিষে দেয় জাবালে নুর পরিবহনের একটি বাস। সেই থেকে ঢাকার রাস্তার দখল নিয়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। রাস্তায় নেমে বাংলাদেশের রাজধানীকে অচল করে দিয়েছে তারা। তাদের দাবি ট্রাফিক আইন কড়া করতে হবে, পরিবহন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। পুলিশের ঘুষ খাওয়া, ঘুষ নিয়ে বাসের লাইসেন্স প্রদান, যেখানে সেখানে বেআইনিভাবে রাস্তা দখল করা বন্ধ করতে হবে।
ঢাকার দখল নিয়েছে শিক্ষার্থীরা
বৃহস্পতিবার পঞ্চমদিনে পড়েছে ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শাহবাগ-সহ বাংলাদেশের রাজধানীর একাধিক এলাকায় পথ অবরোধ করে রেখেছে তারা। রামপুরা ব্রিজ, মহাখালী, উত্তরা, দনিয়া কলেজ, নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় অবস্থান করছে তারা। এর ফলে ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ যাওয়ার রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
আন্দোলনে সামিল ঢাকার সব স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা
বৃস্পতিবার ঢাকার মহাখালি মোড়ে বিশাল জমায়েত-অবস্থানের কর্মসূচী চলছে শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পথে নেমেছেন ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও। কয়েকশ' শিক্ষার্থী ইউনিফর্ম পড়েই অংশ নেন অবস্থান বিক্ষোভে। যান চলাচলল বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই এলাকায়। ছাত্রছাত্রীদের মাইক হাতে পুলিশ সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছে, কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। উত্তরা এলাকাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সামিল শিক্ষকরাও
বৃহস্পতিবার ঢাকার জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পথ অবরোধে সামিল হতে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকজন শিক্ষককেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয় পাঁচশ'রও বেশি শিক্ষার্থীর এক মিছিল। সেই মিছিলে শিক্ষকরাও ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলিতে তাঁরাও সংহতি জানাচ্ছেন। অমর একুশে ভাস্কর্য পার হওয়ার পর সেই মিছিলে যোগ দেয় আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়
নিরাপদ সড়ক চাই, পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয় - এই স্লোগান এখন বাংলাদেশের রাজধানী পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে নোয়াখালি, রাজশাহির মতো জেলাগুলিতেও। নোয়াখালির বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বৃহস্পতিবার মাইজদী সহরের প্রধান রাস্তার উপর মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানান। রাজশাহিরও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ব্য়স্ত রাস্তা আটকে ক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।
আতঙ্কে বাস মালিক ও চালক-কর্মীরা
পথ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাস্তায় রীতিমতো আইনরক্ষায় নেমে পড়েছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রত্যেকটি গাড়ি আটকে তাঁরা চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন। থাকলে ভাল, নাহলে নিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে গাড়ির চাবি। অনেক বেসরকারি বাস ও গাড়িতে ভাঙচুরও চালিয়েছে ছাত্ররা। এই আতঙ্কে অনেক বাস মালিক ও চালক-কর্মীই রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের গাড়ি বাস চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
লাইসেন্স দেখাচ্ছেন পুলিশরাই
সাধারণত চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে পুলিশ। কিন্তু ছাত্রদের লাইসেন্স পরীক্ষার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশকর্মীরাও। তারাও শিক্ষার্থীদের সামনে লাইসেন্স দেখাতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে ছাত্রদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। কাউকে কাউকে তো সতঃস্ফুর্তভাবে লাইসেন্স দেখাতে দেখা গিয়েছে।
আক্রান্ত পুলিশকর্মী
কখনও কখনও হিংসাত্মকও হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন। বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকারই এক জায়গায় ধস্তাধস্তিতে আহত হন পুলিশের এক এসআই। তিনি লাইসেন্স চাড়া ভ্রমণ করায় ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁকে আটকায়। কথা কাটাকাটির মধ্যে পুলিশকর্মী পালাতে গেলে ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। তিনি মাথায় আঘাত পান। সাময়িকভাবে একটি এটিএম বুথে আশ্রয় নেন। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। এর আগে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোয় আরেক পুলিশকর্মীকে নিজের নামেই মামলা করতে বাধ্য করান ছাত্রছাত্রীরা।
মন্ত্রীর আশ্বাস
এদিন ছাত্রদের সব দাবি মিটে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এরপরই এক সাংবাদিক বৈঠকে কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সবকটিরই সমাধান হয়ে যাবে। তাঁরা সংসদে একটি পরিবহন আইনের প্রস্তাব আনবেন। তার খসড়া আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হবে। এরপর সংসদে তাকে পাস করানো হবে। সেই আইন বাস্তবায়িত হলেই সব সমস্যা মিটবে বলে দাবি করেছেন তিনি।