পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে ডেল্টা রূপ, জেনে নিন চিন সহ একাধিক দেশের সফর নিষেধাজ্ঞা
পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে ডেল্টা রূপ
তৃতীয় ওয়েভের আশঙ্কার মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চোখ রাঙাচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। যার জেরে অনেক দেশই ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যাতে এই সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। চিন সাম্প্রতিক দেশগুলির মধ্যে রয়েছে যা ব্যাপকভাবে আভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সমস্ত আন্ত–শহর কোচ, ট্যাক্সি ও অনলাইন গাড়িগুলিকে মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন এলাকায় পরিষেবা বাতিল করে দিয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট
ভারতে প্রথম সনাক্ত হয় এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট, এই ভ্যারিয়ান্ট আগের মিউটেশন, স্ট্রেইনের তুলনায় আরও বেশি মারাত্মক, তীব্র সংক্রমণযুক্ত ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের এই মারাত্মক রূপ গোটা বিশ্বে সতর্কতা জারি করে দেয় যার কারণে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এই ভ্যারিয়ান্টের তীব্রতা প্রতিরোধ করার জন্য।
চিন জারি করেছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা
করোনার ডেল্টা প্রজাতিকে রোখার জন্য সেদেশের বহু শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার আরও একধাপ এগিয়ে চিন তার নাগরিরদের জন্য সফরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। চিনের ভেতরেই আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হল নাগরিকদের ওপর। স্থানীয় পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দেশের বেশ কিছু শহরে বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে যেতে ও চিনের সীমান্তের মধ্যে থাকতে বলার আদেশ জারি হয়েছে। এর আগে এই দেশে মারাত্মক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দমন হয়েছিল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের গোড়াতেই কড়া লকডাউন জারি করে এবং এর সঙ্গে ছিল সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু গণ করোনা টেস্টের ফলে চিনজুড়ে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের প্রকোপ সামনে এসেছে। চিনের সব শহরজুড়ে করোনার টেস্ট করিয়েছে সরকার এবং লক্ষাধিক মানুষকে লকডাউনের আওতায় ফেলেছে। বুধবারই দেশে মোট ৭১ জনের শরীরে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সংখ্যা জানুয়ারির থেকে কিছুটা বেশি হলেও একাধিক শহরে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও এখনও এর কেসের বোঝা কিছুটা কম রয়েছে। এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ প্রথম ছড়ায় মস্কো থেকে আসা একটি বিমানের যাত্রীদের মাধ্যমে, যা নানজিং বিমানবন্দরের সাফাই কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
আমেরিকার সফর নিষেধাজ্ঞা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা ভাইরাস মহামারির তীব্র ও মারাত্মক ডেল্টা প্রজাতির কারণে ইজরায়ের ও একাধিক ইউরোপের দেশগুলির ওপর সফর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিশেষ করে টিকাকরণ নেই এমন নাগরিকদের ক্ষেত্রে। আমেরিকার প্রশাসন ও রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ইজরায়েল, সাইপ্রাস, পর্তুগাল ও স্পেন সহ কিরগিজস্তানে নতুনভাবে সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ এই পাঁচ দেশে সোমবার ডেল্টা কেস বৃদ্ধি পেয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে ব্রিটেন, শেনজেন দেশ ও ব্রাজিল, চিন, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা পর্যটকদের ওপর থেকে সপ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার এখনই কোনও ইচ্ছা নেই। যদিও স্পেন ও পর্তুগাল ইতিমধ্যেই আমেরিকার পর্যটকদের তাদের দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে এবং কানাডা ঘোষণা করেছে যে শুধুমাত্র টিকাকরণ হয়েছে এমন মার্কিন নারিকদের প্রবেশে অনুমতি আছে আগামী মাস থেকে।
ফিলিপাইনের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি
ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ফিলিপাইন ভারত ও অন্য ন'টি দেশের পর্যটকদের ওপর সফর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ অগাস্ট করে দিয়েছে। ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ওমান, আরব, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের পর্যটকদের ওপর ৩১ জুলাই পর্যন্ত সফর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখানে উল্লেখ্য, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশে ১৫.৭ লক্ষ কোভিড-১৯ কেস, যার মধ্যে ২১৬টি ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের কেস সনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭,৫৭৭ জনের। তবে ১০ কোটি ৯০ লক্ষ জনসংখ্যার দেশে ৭২ লক্ষ ৭০ হাজার বা ৬.৬৬৬ শতাংশের পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে।
ইতালির নিষেধাজ্ঞা
দেশের উপস্বাস্থ্য মন্ত্রী পারপাওলো সিলারির মতে, ইতালি আগামী সপ্তাহে তার স্বাস্থ্য পাসের জন্য নিয়ম পরিবর্তন করতে চলেছে। তিনি জানিয়েছেন যে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট তাদের বাধ্য করেছে গ্রিন পাস পুর্ননির্মাণ করতে। তবে তিনি জানিয়েছেন যে এত তাড়াতাড়ি এখনই এটা নিয়ে কিছু বলা ঠিক নয়। কারণ তারা আরও দু'সপ্তাহের তথ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় আছেন। প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুন ইতালি সফর স্বাস্থ্য শংসাপত্রের সূচনা করেছিল, যা দেশের বাইরে ও দেশের ভেতরে সফর করা অনেক সহজ করে দেবে। দেশের নাগরিকরা বৈদ্যুতিন ডিজিটাল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র পাবেন, যেখানে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের কথা, করোনা টেস্ট নেগেটিভ বা কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার কথা উল্লেখ থাকবে। ৫ কোটিরও বেশি কোভিড-১৯ টিকাকরণের পর সোমবার ইতালিকে কম-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তকমা দেওয়া হয় এবং বাড়ির বাইরে মাস্ক পরার নিষেধাজ্ঞাও কিছুটা শিথিল করা হয়।
ফ্রান্সের সফর নিষেধাজ্ঞা
ফ্রান্স বৃহস্পতিবারই স্পেন বা পর্তুগালে ছুটি কাটানোর নিয়ে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কারণ ডেল্টার কারণে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সম্পূর্ণ টিকাকরণ বা করোনা টেস্ট নেগেটিভের পর ফ্রান্সের নাগরিকরা ইউরোপের যে কোনও দেশে সফর করতে পারছেন তবে ফিরে আসার পর অ্যান্টিজেন টেস্ট বাধ্যতামূলক।