For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে মরতে বসেন যে ডেলিভারি ড্রাইভারেরা

অ্যাপসের মাধ্যমে এখন অর্ডার করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে খাবার চলে আসে দোরগোড়ায়। কিন্তু এই খাবার নিয়ে হাজির হন যে ডেলিভারি ড্রাইভার, কত বিপদ পেরিয়ে আসেন তিনি, তা কি জানে সবাই?

  • By Bbc Bengali

দোকানে গিয়ে খাবার কিনে আনার পরিবর্তে এখন জীবন আরো সহজ হয়ে উঠেছে, প্রায় ডজনখানেক অ্যাপস আছে বাজারে যার মাধ্যমে গরম গরম খাবার কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে আসে দোরগোড়ায়।

সেই সাথে পথে পথে দেখা মেলে হাজারো খাবার সরবরাহকারী বা ডেলিভারি ড্রাইভার, যারা আমাদের জন্যে খাবার নিয়ে আনতে গিয়ে প্রায়শই ভয়-ভীতি, গুরুতর আঘাত বা এমনকি মৃত্যুরও মুখোমুখি হয়ে থাকে।

গত বছর ৫ই মে ছিল সরকারি ছুটির দিন, যেসব দিন সাধারণত কাটে ব্যস্ততায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের শহর আটলান্টায় সোনিয়া কিং তার 'ডোরড্যাশ' অ্যাকাউন্ট লগ ইন করে একটি মাত্র অর্ডার পায়।

মুসলিম নারী সোনিয়া যখন তার প্রথম অর্ডারটি ডেলিভারি দিতে যান তখন তার গ্রাহক তাকে হামলা করে বসে।

রিক পেইন্টার নামের সেই ব্যক্তি পেছন দিক থেকে সোনিয়ার চুল এবং নেকাব জড়িয়ে ধরে ও গলা টিপে ধরে হত্যা করার চেষ্টা চালায়।

চার সন্তানের জননী সোনিয়া কোনোরকমে তার গাড়ির চাবি দিয়ে হামলাকারীর মুখে বারবার আঘাত করেন আর তার হাত থেকে রেহাই পান।

"আমি প্রায় মরতে বসেছিলাম," বলছিলেন মিজ সোনিয়া।

সাজেদুর রহমান
BBC
সাজেদুর রহমান

"আমি কখনোই কাউকে আঘাত করতে চাই নি, কিন্তু তখন সেটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। যখন আমার চোখের সামনে আমার সন্তান এবং আমার স্বামীর চেহারা ভেসে উঠলো। তখন ভাবলাম, যেভাবেই হোক এই বাড়ি থেকে আমাকে বের হয়ে আসতে হবে এবং পরিবারের কাছে ফিরে যেতে হবে।"

অপকর্মের দায়ে ৫৪ বছর বয়সী মি. পেইন্টারকে দুই বছরের কারাবাস দেয়া হয়েছিল।

সেদিন আঘাত এবং ক্ষত নিয়ে সোনিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তী সময়েও ঘটনাটি তাকে মানসিকভাবে ভারাক্রান্ত করে তুলতো।

সোনিয়া বলেন, "আমি এখন মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতেই ভালোবাসি। কাউকে এখন আর বিশ্বাস করতে পারিনা। কেবল খারাপটাই আশা করি।"

তিনি বিশ্বের সেইসব অল্প কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খাদ্য সরবরাহকারী ড্রাইভারদের একজন, যারা এমন কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত বা আহত হয়েছেন।

এমন ধরনের সমস্যার মাত্রা নিরূপণ করা কঠিন, কেননা পুলিশের কাছে এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আবার খাবার সরবরাহকারী সংস্থাগুলোও এসব প্রকাশ করে না।

উবার ইটস কর্মী
Getty Images
উবার ইটস কর্মী

কিন্তু প্রায় পুরো বিশ্ব জুড়েই, সিডনী থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত ফুড ডেলিভারিম্যানদের ওপর এমন হামলার ঘটনা ঘটছে।

লন্ডনে বেশিরভাগক্ষেত্রে দেখা গেছে যে অপরাধী চক্রগুলোর লক্ষ্য থাকে ডেলিভারিম্যানদের পরিবহন বা মোটর বাইকের ওপর।

এমন কাজে সহিংসতা বা হুমকি প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা- কেউ কেউ এমনটিও বলেন।

"প্রায় আট থেকে দশজন দুর্বৃত্ত অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে। একজন উড়ে এসে লাথি মেরে আমাকে ফেলে দেয় বাইক থেকে। এরপর সবাই মিলে আমাকে মারতে শুরু করে," বলছিলেন 'উবার ইটস' এর সাজেদুর রহমান।

পূর্ব লন্ডনে এমন হামলার শিকার হন তিনি।

দলটি তার মোপেড জাতীয় মোটর বাইক এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ৩১ বছর বয়সী মি. সাজেদুরের কাঁধ এবং পা ভেঙে দিয়ে যায়।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বলতে পারে না সঠিক কতজন ডেলিভারিম্যান এমন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন।

বুয়েন্স এইরেসে দুর্ঘটনার শিকার একজন ডেলিভারিম্যান
Getty Images
বুয়েন্স এইরেসে দুর্ঘটনার শিকার একজন ডেলিভারিম্যান

তবে মি. সাজেদুরের মতো হামলা ও ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয় বলে তাদের ধারনা।

এখন হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে তারা এমন কাজে নিয়োজিতদের সতর্ক করে থাকে বা কেউ বিপদে পড়লে সহায়তা করার চেষ্টা করে।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিগত বছরে মোপেড বা স্কুটার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা আগের তুলনায় কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে- প্রায় ৯ হাজারের কম, যেটি কিনা প্রতি ঘণ্টায় একটির মতো।

ডেলিভারি ড্রাইভাররা বলছেন, তাদের সুরক্ষার জন্যে সংস্থাগুলির আরো করার সুযোগ রয়েছে।

যেমন সাজেদুর রহমান উবার ইটস-এর কর্মচারী ছিলেন না, খন্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করতেন।

ফলে অসুস্থতাজনিত কারণে কোনো সুবিধা পাবার সুযোগ তার না থাকলেও তাকে বলা হয়েছিল উবার ইটস-এর বীমার আওতায় সে একমাসের আয়ের সুরক্ষা পাবে।

"আমার পরিবার ছিল আমার উপর নির্ভরশীল, এখন আমি তাদের ওপর নির্ভর করছি- জানি না কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবো," বলছিলেন সাজেদুর।

আটলান্টা শহর
Getty Images
আটলান্টা শহর

তিনি একইসাথে উবার ইটস সফটওয়্যারটিরও সমালোচনা করে বলেন যে, অর্ডার গ্রহণ না করা পর্যন্ত জানা সম্ভব নয় যে সেটি কোথায় পৌঁছে দিতে হবে।

ফলে অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সবসময়।

সংস্থাটি এই নির্দিষ্ট সমস্যার বিষয়ে কোনো জবাব না দিলেও তারা জানিয়েছে যে, 'এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে যারা কুরিয়ার পৌঁছানোর কাজ করেন তাদের সুরক্ষায় তারা কাজ করে যাচ্ছে।'

এ ধরনের হামলা হয়তো সংবাদের শিরোনাম হতে পারে কিন্তু এমন কাজে নিয়োজিতদের জন্যে আরেকটি বড় ঝুঁকি হলো ট্রাফিক দুর্ঘটনা।

কেননা এসমস্ত ডেলিভারি ড্রাইভাররা উপার্জন বাড়াতে দ্রুত তাদের খাবার পৌঁছে দেবার চেষ্টা করে থাকেন।

এ বছরের শুরুর দিকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ারসে এমন খাবার সরবরাহের অ্যাপসগুলোকে নিষিদ্ধ করেন একজন বিচারক।

তার মতে এ ধরনের কোম্পানিগুলো শ্রম ও পরিবহন আইন যথাযথভাবে মেনে চলছিল না।

আরো পড়ুন:

ভারতের সাথে চুক্তি: প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবে বিএনপি

দিল্লির বায়ুদূষণের মধ্যে কেমন খেলবে বাংলাদেশ?

বেঁটে পুরুষদের কী যৌনসঙ্গী পেতে সমস্যা হয়?

তবে সংস্থাগুলো এ অভিযোগ অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে আপিল করে।

বিচারক রবার্তো গ্যালার্ডোর এই সিদ্ধান্তটি কিছুটা সহায়তা করেছিল ৬৩ বছর বয়স্ক আর্নেস্তো ফ্লোরিডাকে। যিনি আর্জেন্টিনার অন্যতম বৃহত্তম টেকঅ্যাওয়ে প্লাটফর্ম গ্লোভোর হয়ে পিৎসার অর্ডার পৌঁছে দিতে গিয়ে একটি গাড়ির সাথে দুর্ঘটনায় পরেন।

দুর্ঘটনা ঘটার পরপরই মি. আর্নেস্তো তার কোম্পানিকে জানান যে তিনি আহত হয়েছেন, চলাফেরা করতে পারছেন না। কিন্তু গ্লোভোর একজন কর্মচারী সে মুহূর্তে খাবারটির একটি ছবি তুলে পাঠাতে বলেন যাতে করে অর্ডারটি ক্যান্সেল করা যায়।

গ্লোভো পরবর্তীতে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সেই কর্মচারীকে এমন অমানবিক আচরণের জন্যে বরখাস্ত করে।

এখন আর্নেস্তো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার গ্লোভোর কাজে ফিরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার মিজ সোনিয়ার দাবি ছিল ডোরড্যাশের উচিৎ তাদের ৪ লক্ষ কুরিয়ারকে সুরক্ষিত করতে আরো ব্যবস্থা গ্রহণের।

কেননা তার ক্ষেত্রে রিক পেইন্টার আগে থেকেই সহিসংতার জন্যে কারাভোগ করে তখন জামিনে ছিল।

সুতরাং গ্রাহকের অপরাধমূলক রেকর্ড চেক করার তাগিদ দেন সোনিয়া।

English summary
Delivery boys that sit to die while delivering food
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X