ইরান-ইরাকে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৩০০, আহত অন্তত ৪ হাজার
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ইরাক-ইরান। এই দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যত সময় গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
ইরাক-ইরান সীমান্তে ভয়ানক ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৩৩০। রবিবার রাতে হওয়া এই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইরান। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল পূর্ব ইরাকের হালাবজা শহরের ৩১ কিলোমিটার দূরে সুলাইমানিয়া প্রদেশের পেনজউইন। ইরাকি মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৫। যদিও, মার্কিন মেট্রোলজিক্যাল দফতর ইউএসজিএস-এর হিসাবে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৩।
বেহনাম সইদি বলে ইরানের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন ভূমিকম্পে তাঁদের দেশেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩২৩ জনের। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৬০০ জন। বহুস্থানে ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে আছেন বহু মানুষ।
ভূমিকম্পের সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের সারপোল-এ-জাহাব শহর। এখান থেকে শতাধিক লোকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যেখানে ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্রস্থল সেই পেনজউইন থেকে ইরানের সারপোল-এ-জাহাব শহরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।
সারপোল শহরের একমাত্র হাসপাতাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। এর ফলে আহতদের চিকিৎসায় ইরাক সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।
More
— Diyar Kurda (@diyarkurda) November 12, 2017
Footage shows moments when magnitude 7.2 #earthquake rocked #Kurdistan region of #Iraq, #Sharbazher district in #Sulaymaniyah Governorate pic.twitter.com/91JLSwlzzJ
এদিকে, ইরাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হলেও সেখানে এখনও পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। জখম অন্তত ৫৫ জন।
ভূমিকম্পের পর থেকেই ইরাক ও ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বহু স্থানে রাস্তায় ফাটল ধরায় সড়কপথে উদ্ধারকারী দল ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ঢুকতে পারছে না। ইরানের এক সরকারি আধিকারিকের মতে, গ্রামাঞ্চলের অবস্থা কী হয়ে রয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, সেখানে পৌঁছতে এখন ভরসা শুধু হেলিকপ্টার। ইরানের যে এলাকাটি ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে সেটি মূলত ছোট পাহাড়ি এলাকা। এখানকার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ লোকেরই জীবিকা কৃষিকাজ। পাহাড়ের ধাপে ধাপে থাকা ঘর-বাড়িতে বসবাস করেন মানুষ। সুতরাং, ভূমিকম্পে এই সব গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতিটা সহজেই অনুমান করা যায়।
ভূমিকম্পের পরই শীতের মধ্যে বহু মানুষ রাতের অন্ধকারে রাস্তায় বেরিয়ে এসে আতঙ্কে আশ্রয় নেন। জানা গিয়েছে ভূমিকম্পের পর একাধিক আফটার শক সাধারণ মানুষদের মধ্যে আরও আতঙ্ক ছড়ায় ।
Massive #Earthquake of magnitude 7.2 hits #MiddleEast and #Iraq , took about 20 seconds.
— Zhigger Abozaid (@JegirKH) November 12, 2017
A video not away from home in #Duhok pic.twitter.com/ZhUgduXcTY
যত বেলা গড়িয়েছে উদ্ধার কাজে গতি আসার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে ভূমিকম্পে ভয়ানটক ধ্বংসলীলার ছবিটা। ইরানের সাপোলি শহরের কিছু মানুষ জানিয়েছেন, আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসার সময় ঘর থেকে নূন্যতম জিনিসটুকুও নিয়ে বের হতে পারেননি। পরে অনেকে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজের বাড়ি-ঘর চেনাটাই কঠিন ছিল।
ইরান ও ইরাকের এই অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ। যার জন্য এখানে অধিকাংশ বাড়িতেই কাদা-মাটির হালকা ইট নির্মাণকাজে ব্যবহার করার নিয়ম চালু করেছে ইরান। গত বছর ডিসেম্বরে ইরানের বাম-এ ভুমিকম্পে ৩১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এবারও বছর শেষের মুহূর্তে ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ইরানে।
While the center of tonight's #earthquake is reported to be #Iran Kurdistan, this is a footage from Kelar town in #Iraq Kurdistan. #ErdhejKurdistan #Kurdistan #زلزله pic.twitter.com/D7MyBqn1uh
— Herbert Maddison (@Herb_Maddison) November 12, 2017
ইরাক সরকার ইতিমধ্যেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ সাহায্য এবং উদ্ধার কাজে জোর আনতে নির্দেশ দিয়েছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তুরস্কও। বিশেষ বিমানে তাঁদের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ইতিমধ্যেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় কাজ শুরু করেছে।