সাইবার ক্রাইম: নয় ধাপে ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করতো চক্রটি
বাংলাদেশের ঢাকা থেকে চারজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে যে, এরা একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রযুক্তিতে পরিবর্তন করে অভিনব পদ্ধতিতে আড়াই কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে।
ঢাকা থেকে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে যে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রযুক্তিতে পরিবর্তন করে এরা অভিনব পদ্ধতিতে আড়াই কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধভাবে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৬৩৭টি একাউন্টে ১৩৬৩টি লেনদেন করিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এই প্রতারণার বিস্তারিত তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ. কে. এম. হাফিজ আক্তার।
যে পদ্ধতিতে টাকা আত্মসাৎ
পুলিশ জানিয়েছে, টাকা আত্মসাৎ করা হতো মূলত নয়টি ধাপ অবলম্বন করে। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন ব্যাংকের আইটি শাখার একজন সিনিয়র অফিসার।
১.প্রথমে ডাচ বাংলা ব্যাংকের কোন অনুমোদিত এজেন্টের মাধ্যমে অনেক শ্রমিক রয়েছে, এমন একটি ব্যাংকে যোগাযোগ করে স্যালারি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
২. এরপর হিসাব তৈরি হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংক ওই অ্যাকাউন্টগুলোর এটিএম কার্ড এজেন্টের কাছে হস্তান্তর করে বিতরণ করার জন্য। কয়েকজন এজেন্ট সেই এটিএম কার্ডগুলো টাকার বিনিময়ে এই অপরাধী চক্রের কাছে হস্তান্তর করে।
৩. অপরাধী চক্রের সদস্যরা ওই একাউন্টে প্রথমে ১০ বা ২০ হাজার করে টাকা জমা করতো।
৪. অপরাধী চক্রের সদস্যরা এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় প্রথমে ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা বা আইটি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। তিনি ব্যাংকের সফটওয়্যারে পরিবর্তন করার ফলে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিলেও সেটা ব্যাংকের সার্ভারে নথিভুক্ত হতো না। কারণ আইটি অফিসার সার্ভারে যাওয়ার আগেই সেই তথ্য পরিবর্তন করে দিতেন।
৫. টাকা উত্তোলনের ঠিক আগে ব্যাংকের যে সংরক্ষণ সার্ভারের সঙ্গে থার্ড পার্টি সফটওয়্যারের মাধ্যমে এটিএম বুথ পরিচালিত হয়, আইটি অফিসার সেটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতেন।
৬. যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়া হলেও ব্যাংকের প্রধান সার্ভারে টাকার লেনদেনের তথ্য যোগ হতো না। টাকা ক্রেডিট হলেও সেই তথ্য সার্ভারে থাকত না। আইটি অফিসার জার্নালে বিভিন্ন পরিবর্তন করার ফলে টাকা তোলা হওয়ার পরেও সাকসেসফুল মেসেজকে আনসাকসেসফুল মেসেজে রূপান্তরিত হয়ে যেতো।
৭. এরপর টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করতেন যে, তার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হলেও তিনি কোন টাকা পাননি।
৮. পরবর্তীতে ব্যাংকের আইটি অফিসার সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। প্রাথমিকভাবে আইটি অফিসার যাচাই করে দেখেন যে, বুথে এটিএম কার্ড প্রবেশ করানো হয়েছিল কিনা এবং লেনদেনটি সফল হয়েছিল কিনা। যখন তিনি আনসাকসেসফুল ম্যাসেজ দেখতে পান, তখন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবার ওই অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স সমন্বয় করে দেন।
৯. তখন প্রতারকরা আবার সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাটি তুলে নেয়।
- সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইনে উপহারের প্রলোভন, সতর্ক থাকবেন যেভাবে
- বাংলাদেশে আর্থিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান টার্গেট করে সাইবার হামলার হুমকি
- আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম ঠেকানো যাচ্ছেনা কেন?
- অনলাইনে অর্থ চুরির আন্তর্জাতিক চক্র পাকড়াও
এইভাবে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৬৩৭টি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ১৩৬৩টি লেনদেনের মাধ্যমে দুই কোটি ৫৭ লাখ এক হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে অভিযোগ করেন। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম তদন্ত করে এই অপরাধ উদঘাটন করে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা এই অপরাধী চক্রের সদস্য। প্রতারণায় তাদের একেকজন একেকরকম কাজ করতেন।
তবে মূল অভিযুক্ত আইটি অফিসার মীর মোঃ শাহারুজ্জামান ওরফে রনি বিদেশে পালিয়ে থাকায় তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্তের স্ত্রী রয়েছেন, যার হিসাবের মাধ্যমেও আত্মসাৎ করা অর্থের লেনদেন হয়েছে। এছাড়া একজন ব্যাংকিং এজেন্ট রয়েছেন, যিনি এটিএম কার্ড সরবরাহ করতেন। তার কাছ থেকে যে ব্যক্তি এটিএম কার্ড নিয়ে প্রতারণায় ব্যবহার করতেন এবং যিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতেন, তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
- কোভিড রোগীর জীবন রক্ষাকারী নতুন চিকিৎসা উদ্ভাবন
- স্থানীয় কর্মকর্তাদের লকডাউনের ক্ষমতা দিয়ে বিধিনিষেধ বাড়ল আরও একমাস
- বঙ্গভ্যাক্সসহ তিন টিকার ট্রায়ালের অনুমতির জন্য যে শর্ত পূরণ করতে হবে
- গাযায় আবারো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল