Ukraine-Russia war: কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধ, অপরিশোধিত তেলের দাম ঠেকল ১১৭ ডলারে, প্রমাদ গুনছে ভারত
Ukraine-Russia war: কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধ, অপরিশোধিত তেলের দাম ঠেকল ১১৭ ডলারে, প্রমাদ গুনছে ভারত
যুদ্ধের আবহে বেড়েই চলেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। বুধবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ১১০ ডলার ছিল। আজ বৃহস্পতিবার তা ১১৬ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার অপরিশোধিত তেলের দাম হয়ে গিয়েছে ১১৭.২৫ ডলার। এর জন্য বিশ্বজুড়ে আশঙ্কার সৃষ্টি করছে। ভারতও চাপের মধ্যে আছে। শুধু ভোটের জন্য দাম আটকে আছে। দ্রুত তা অন্তত ৯ টাকা বেড়ে যেতে পারে প্রত্যেক রাজ্যে।
গোল্ডম্যান স্যাক্স নামে একটি সংস্থা সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছে। তারা দাবি করেছে যে, অপরিশোধিত তেলের দর এপ্রিলে ১১৫ ডলার ও মে মাসে ১২৫ ডলার ছুঁতে পারে। কিন্তু বাস্তব আরও ভয়াবহ কথা বলছে। বলা হচ্ছে অত সময় লাগবে না মার্চের শুরুতেই ১১৫ থাকার কথা ছিল এখন তা ১১৭ পার করে গিয়েছে। ১২০ এর ঘর পৌঁছানো সময়ের অপেক্ষা।
ভারতের চাপ কোথায়? ভারতে শেষ দাম পরিবর্তন হয়েছিল পেট্রোল ডিজেলের ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে। এরপর থেকে জ্বালানির দামে অপরিবর্তন রয়েছে। অনেক রাজ্যগুলি ভ্যাট কেই ট্যাক্স ছেড়ে দেওয়ায় দাম অনেক নেমে গিয়েছে।ঝাড়খণ্ডে এর দাম ৭৭ টাকা হয়ে গিয়েছে। এগুলি নিজস্ব উদ্যোগে নেওয়া সিদ্ধান্ত ছিল। আদতে তেল সংস্থাগুলি তাদের দামে কোনও পরিবর্তন করেনি। গত বছর নভেম্বরে মাসে যখন ভারতে শেষবার তেলের দাম পরিবর্তন হয়েছিল তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ছিল ৮০ ডলার। সেটা লাফিয়ে বেড়ে এখন ১২০ ছুঁই ছুঁই। সোজা অনেকে ব্যাপক দাম বৃদ্ধি। এখনও এর প্রভাব দেশে পড়েনি। ১২০ দিন ধরে কলকাতায় জ্বালানির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে, মানে প্রায় চার মাস।
Ukraine-Russia war: আদানিদের কাছে রয়েছে প্রচুর তেল, সমস্যা হবে না, দাবি অংশু মালিকের
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, পাঁচ রাজ্যের ভোটের দিকে নজর রেখেই এখনই কেন্দ্র জ্বালানির দাম বৃদ্ধির রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না। কিন্তু ভোট পর্ব সাঙ্গ হলে জ্বালানির দাম যে কতটা বাড়বে তা ভাবলেই ঘুম উড়ছে সাধারণ মানুষের। একটি সমীক্ষা ইতিমধ্যেই দাবি করেছে প্রায় ৯ টাকার কাছাকাছি লিটার প্রতি দাম বৃদ্ধি হতে পারে।
এদিন আজ বৃহস্পতিবার কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে ১০৪.৬৭ টাকা। পাশাপাশি ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৯.৭৯ টাকা। বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে ১০৯.৯৮ টাকা। লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ৯৪.১৪ টাকা। রাজধানী দিল্লিতে পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি দাঁড়িয়েছে ৯৫.৪১ টাকা। পাশাপাশি ডিজেলের দাম লিটার প্রতি দাঁড়িয়েছে ৮৬.৬৭ টাকা। চেন্নাইয়ে পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি দাঁড়িয়েছে ১০১.৪০ টাকা। পাশাপাশি ডিজেলের দাম লিটার প্রতি দাঁড়িয়েছে ৯১.৪৩ টাকা।
এদিকে বিশ্বে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিঘ্ন ঘটছে অনেক কিছুতেই, ভারতের উপরেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রান্নার তেল দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে কারণ ভারত সূর্যমুখী তেলের প্রায় ৭০% ইউক্রেন থেকে আমদানি করে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি কোনও তেল সরবরাহের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। তবে অংশু মালিক অন্য কথা বলছেন। তিনি বলছেন দেশে প্রায় ৪৫ দিনের স্টক রয়েছে। তিনি বলছেন আদানি উইলমারের কাছে যে পরিমাণ এই ইতেলের স্টক রয়েছে তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হতে সভকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাই এটা কোনও সমস্যা তৈরি করবে না।
অংশু মালিক বলছেন, 'সাধারণত, এমন পরিস্থিতিতে, পাম তেল এবং সয়াবিন তেলের দিকে প্রায় ৫০% চাহিদা স্থানান্তরিত হয়। সুতরাং, মূল সূর্যমুখী ভোক্তারা ভারতে মোট ভোজ্য তেল খরচের প্রায় ৫% থাকবে। আমাদের কাছে সেই সরবরাহ শৃঙ্খলটি পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত তেল রয়েছে যতক্ষণ না স্বাভাবিকতা ফিরে আসে যা আমরা মনে করি শীঘ্রই ঘটবে এবং ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সরবরাহ ভারতে ওই তেলের স্টক পৌঁছে যাবে।'
তিনি এও বলছেন, 'আমরা খুব একটা আতঙ্কিত নই। আন্তর্জাতিকভাবে এক ধরনের তেলের দাম বাড়লে তেলের ওপর প্রভাব পড়ে, অন্য ধরনের তেলের ওপরও প্রভাব পড়ে। পাম তেল এবং সয়াবিনে, আমরা বিদেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা দেখেছি যখন ভারতে দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল।'
সূর্যমুখী তেলের দুই শীর্ষ উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক - রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের ফলে ভারতে রান্নার তেলের দাম বাড়তে পারে৷ দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাজারে সরবরাহের সংকট তৈরি করবে, যার ফলে দাম আরও বেশি হবে। ভারত অন্যদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ দেশের সূর্যমুখী তেল আমদানির ৯০ শতাংশই রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ভারত বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টন সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করে।উৎপাদন করে মাত্র ৫০ হাজার টন সূর্যমুখী তেল এবং বাকিটা আমদানি করে।
সমস্ত ভোজ্যতেল আমদানির ১৪ শতাংশ সূর্যমুখী তেল। পাম (৮-৮.৫ মেট্রিক টন), সয়াবিন (৪.৫ মেট্রিক টন) এবং সরিষা/রেপসিড (৩ মেট্রিক টন) এর পরে এটি চতুর্থ সর্বাধিক ব্যবহৃত ভোজ্য তেল। সূর্যমুখী তেলের দাম ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ৯৮ ডলার থেকে বেড়ে ১৬১ হয়ে গিয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ। ভারতের সূর্যমুখী তেলের আমদানি ২০১৯.২০ (এপ্রিল-মার্চ) ২.৫ মিলিয়ন টন এবং ২০২০-২১ সালে ২.২ মিলিয়ন টন, যার মূল্য যথাক্রমে ১.৮৯ বিলিয়ন এবং ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার। ইউক্রেন থেকে ভারত ২০১৯-২০ সালে ১.৯৩ মিলিয়ন টন (১.৪৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের) এবং ২০২০-২১ সালে ১.৭৪ মিলিয়ন টন (১.৬ বিলিয়ন ডলার) সূর্যমুখী তেল আমদানি করে, রাশিয়ার থেকে এটি প্রায় ০.৩৮ মিলিয়ন টন এবং ০.২৮ মিলিয়ন টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করে।