ফুচকা উৎসবে ঢাকার খাদ্য রসিকদের ভিড়
কাবলি চানা, আলু, পেয়াজ, ধনে পাতা, তেঁতুল -- টক-ঝালের সমাহার মুচমুচে ফুচকায়। আর তাই নিয়ে ঢাকায় চলছে ফুচকা উৎসব। ২০ রকমের ফুচকায় আনা হয়েছে ফিউশন।
বাংলাদেশের স্ন্যাক্সের যদি তালিকা করা হয়, তাহলে নি:সন্দেহে ফুচকার নাম থাকবে সবার ওপরে। নানা স্বাদের সংমিশ্রণই এর কারণ।
মানুষের পছন্দের এই খাবারটি নিয়ে ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে ফুচকা ফেস্টের।
যেখানে রয়েছে নানা নামের ২০ রকমের ফুচকা। ফুচকায় আনা হয়েছে ফিউশন।
গোলাকার মচমচে ফুচকার ভেতরে মসলাদার বুট, আলু, পেয়াজ কুচি, ধনে পাতা আর তার ভেতর তেঁতুলের রস। মুখে দিতেই ফুচকা ভেঙ্গে যেন জিহ্বায় স্বাদের ঝড় তোলে।
এই স্বাদের বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশের স্ট্রিট ফুডের মধ্যে ফুচকার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।
আর এই ফুচকা নিয়ে যদি উৎসবের আয়োজন হয় তাহলে তো কথাই নেই।
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাই নাটক শেষ হয় যেভাবে
শান্তি পুরষ্কারের জন্য ইয়াজিদি নারী আর রেপ সার্জনকে কেন বেছে নিল নোবেল কমিটি?
ফেসবুকে এমনই এক উৎসবের ইভেন্ট দেখে ছুটির দিনে সদলবলে হাজির হয়েছেন আইটি ব্যবসায়ী নুসরাত আক্তার টুম্পা।
"আমি এরকম ফেস্টের কথা এই প্রথম শুনেছি। এজন্য ফ্রেন্ডদের নিয়ে আসলাম। আসলে ফুচকা তো সবার পছন্দের খাবার। এর যে টক ঝাল মিষ্টি, এটা সবার পছন্দ। ফুচকার ভ্যারাইটি আছে অনেক এখানে। এসির মধ্যে খাচ্ছি, গরম লাগছেনা।"
বারিধারা ডিওএইচএস কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে এই ফুচকা উৎসবের।
মেলাটি মূলত নারী উদ্যোক্তাদের কেন্দ্র করে আয়োজিত হলেও, এখানে ভিড় করা বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মেলার মাঝখানের বড় ফুচকা স্টলটিকে ঘিরে।
ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা রাকিবা সুলতানা এসেছেন তার ছেলেকে নিয়ে।
"আমার ছেলের ভীষণ আগ্রহ, শুক্রবার দেখে চলে এলাম। আসলে ওরা তো সারাদিন এই বার্গার, পিৎজা -- এসব ফাস্টফুড খায়। ফুচকা আমাদের দেশী খাবারের অংশ। তাই এখানে এলাম যেন ওর মধ্যেও এই আগ্রহ জন্মায়।"
ফুচকা কেন পছন্দ? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাদের ব্যাখ্যা দিয়ে দিলেন মিসেস রাকিবার ছেলে আরিব শারাফ।
"আমার ফুচকা অনেক ভাল লাগে। অনেক মজার। এজন্য আমি এখানে খেতে এসেছি। আমার সবচেয়ে প্রিয় দই ফুচকা। এটা একটু মিষ্টি, আবার ক্রাঞ্চি, ওটা আমার সস দিয়ে খেতে খুব ভাল লাগে।"
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে এই মুখরোচক খাবারটি বিভিন্ন নামে তাদের জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কোথাও এটি গোলগাপ্পা কোথাও বা পানিপুরি আবার কোথাও ওয়াটার বোলস।
তবে বাংলাদেশে ফুচকা ছাড়া এর আর কোন নাম নেই।
তবে রাস্তাঘাটে যে ফুচকা বিক্রি হয় সেটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বা তৈরি প্রণালী নিয়ে বারবারই প্রশ্ন ওঠে।
সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যকর ফুচকার নিশ্চয়তা দিয়ে এই স্টল সাজানোর কথা জানিয়েছেন, আয়োজক মিরাজ হোসেইন।
"স্ট্রিট ফুডটা যে অস্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি করে আমরা তেমন নই। আমরা ঘরে প্রতিটা আইটেম তৈরি করেছি। ফুচকা যেটা আছে, ওইটাও আমরা নিজেরা ভেজে নিয়েছি। অনেকের ভেতরে অনেক প্রশ্ন থাকে যে এটা কি দিয়ে বানানো? বাইরে থেকে আনা কিনা? কি তেল দিয়ে ভাজা। আমাদের এখানে এ ধরণের প্রশ্ন বা সন্দেহের অবকাশ নাই।"
মেলায় আয়োজন করা হয়েছে প্রায় ২০ ধরণের ফুচকার।
দাম ধরা হয়েছে ৫০টাকা থেকে ২০০ টাকার ভেতরে।
বেশ কয়েকটি ফুচকায় ফিউশন এনে নানা রকম নাম দিয়েছেন তারা।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করাই যার মূল উদ্দেশ্য। বলছিলেন আয়োজক নূর ই আজমা।
"আমরা সব বয়সীদের কথা ভেবে অনেক ধরণের আইটেম তৈরি করেছি। যেটার একেকটার স্বাদ একেক রকম। যেমন বেবি ফুচকা, এইটিন প্লাস ফুচকা, ইলিশ ফুচকা, বিফ ফুচকা, হট এন্ড স্পাইসি ফুচকা। বেবি ফুচকায় আমরা রাখি বাদাম, দুধ, কিসমিস, সেমাই। এক কথায় বাচ্চাদের টেস্ট আর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে।"
জিভে পানি আসা সুস্বাদু ফুচকার তুলনা আর অন্য খাবারে নেই।
তাই বিপুল জনপ্রিয়তায় এখন ফুচকা হয়ে পড়েছে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।