For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

করোনাভাইরাস: মহামারির শুরু থেকে কোভিড রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তেরেসা

২০২০ সালের শুরুতে বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় তখন থেকেই আক্রান্তদের সেবা দিতে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেছেন তেরেসা বাড়ই।

  • By Bbc Bengali

তেরেসা বাড়ই।
BBC
তেরেসা বাড়ই।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি দেখা দেয়ার শুরু থেকে যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নার্সরা।

২০২০ সালের শুরুতে বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় তখন থেকেই আক্রান্তদের সেবা দিতে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেছেন তেরেসা বাড়ই।

তিনি বর্তমানে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালের নার্স সুপারিন্টেনডেন্টের দায়িত্বে আছেন।

আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন কোভিড রোগীদের সরাসরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা রকম সামাজিক বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।

তার পরিবারের সদস্য একমাত্র ছেলেকে এই পুরোটা সময় একা একা এক ধরনের চাপা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে। কিন্তু মায়ের জন্য তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় সাপোর্ট।

আরও পড়তে পারেন:

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা নিলেন যে নার্স

নার্সদের করোনা পরীক্ষায় অগ্রাধিকার না দেবার অভিযোগ

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন তেরেসা বাড়ই।
BBC
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন তেরেসা বাড়ই।

"৪০ বছরে এতো ভীতিকর পরিস্থিতি দেখিনি"

তেরেসা বাড়ই নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সম্প্রতি সুস্থ হয়ে পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছেন ।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তার দেখা হওয়ার পর তিনি আমাকে করোনা ইউনিট ঘুরিয়ে দেখান।

কোভিড রোগীদের সামাল দিতে এখন সব কিছু সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো গোছানো হলেও, গত বছরের প্রথম কয়েক মাস পরিস্থিতি মোটেও এমন ছিল না।

মিসেস বাড়ই বলছিলেন, তার ৪০ বছরের নার্সিং ক্যারিয়ারে এতো ভীতিকর পরিস্থিতি তিনি কখনও দেখেননি। তবে সেই ভয় তার ওপর ভর করতে পারেনি।

তিনি বলেন, "প্রথম দিকের ধাক্কায় এমন অনেক হয়েছে যে আত্মীয় স্বজনরা রোগীকে দিয়ে ভয়ে পালিয়ে যেতো, আর খোঁজ নিতো না, ফোন ধরতো না। আমরা নার্সরাই তাদেরকে সেবা দিতাম। অনেক রোগী প্রিয়জনকে না দেখে অসহায়ভাবেই মারা গেছে। কিন্তু আমার ভয় লাগেনি। দিন রাত কাজ করেও ক্লান্ত হইনি। সেবা করাটা আমার ভেতরেই ছিল।"

মিসেস বাড়ই জানতেন, সব ধরনের সুরক্ষা নিয়ে রোগীর সামনে গেলে আক্রান্ত হওয়ার তেমন আশঙ্কাই থাকে না।

এ কারণে তিনি সঠিকভাবে পিপিই পরার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন।

"আমার জন্য লিফটে ওঠা নিষেধ ছিল"

একজন ফ্রন্টলাইনার হিসেবে মানুষের সেবায় কাজ করা সত্ত্বেও সামাজিকভাবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে মিসেস বাড়ইকে।

তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেখানকার লিফটে তার ওঠা নিষেধ ছিল।

দিন রাত ওভার টাইম করে সাত তলা সিঁড়ি বাইতে হয়েছে তাকে।

"আমি যে বাসায় থাকি সেখানে লিফটে ওঠা নিষেধ ছিল। কারণ আমি কোভিড রোগীদের সেবা দেই। আমাকে যে অ্যাম্বুলেন্স আনতে যেতো সেটাকেও সবাই ভয় পেতো। মনে করতো যেন এটাতেই কোভিড আছে। কিন্তু ওই গাড়িতে রোগী ওঠানো হতো না। "

এক পর্যায়ে বাড়ি বদলের সিদ্ধান্ত নিলে সেখানেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার কোভিড রোগীদের সেবা করার বিষয়টি।

"অনেক দেখেশুনে একটা বাসা ঠিক করলাম। ভাড়া ঠিকও হয়ে গেল। অ্যাডভানসের টাকাটা দিতে যাবো, তখন বাড়িওয়ালা প্রশ্ন করে যে আপনি কী করেন। আমি বললাম যে আমি চাকরি করি। - কী চাকরি করেন?, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এটা শোনার সাথে সাথে বাড়িওয়ালা বলেন যে, না, আপনি কুর্মিটোলায় কাজ করেন, আপনাকে বাসা ভাড়া দেবো না।"

বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
BBC
বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

"রোগীদের সব ক্ষোভ আমাদের ওপর"

আবার যে রোগীদের জন্য তার এতো পরিশ্রম সেই রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনদের দ্বারাও নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।

এরপরও দমে না গিয়ে রোগীদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন তেরেসা বাড়ই।

"আসলে কোভিড পেশেন্টদের মেন্টালিটি সবসময় ভালো থাকে না। তারা মৃত্যু ভয়ে থাকেন। আত্মীয় স্বজন কেউ দেখতে আসে না। সব মিলিয়ে রোগীদের সব ক্ষোভ আমাদের ওপর এসে পড়ে। "

অন্যান্য হাসপাতালে নার্সদের স্টেশন জেনারেল ওয়ার্ডের ভেতরে হলেও করোনা ইউনিটে নার্সদের স্টেশন থাকে বাইরে। এবং দুজন করে নার্স পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এতে করে সব রোগীদের কাছে যেতে কিছুটা সময় লেগে যায়।

রোগীদের সেই দেরি নেয়ার মতো ধৈর্য থাকে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

"এখন একজন নার্স রোগীকে ইনজেকশন দিচ্ছেন। সেটা শেষ করেই তো পাশের জনের কাছে যাবেন। কিন্তু একবার এমন হয়েছে যে নার্সকে ডাক দেয়ার সাথে সাথে কেন আসেনি, সেজন্য বকাবকি করেছে এমনকি আঘাতও করেছে। আমরা পরে রোগীর মানসিক অবস্থা চিন্তা করে বিষয়টাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেছি।"

তেরেসা বাড়ই।
BBC
তেরেসা বাড়ই।

"মা'কে নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকি"

সব ধরনের সুরক্ষা নিয়ে রোগীদের সেবা দিলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মিসেস বাড়ইকে ছাড়েনি। গত মাসে তিনিও আক্রান্ত হয়ে ৮দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

আর তার পাশে ছিলেন পরিবারের একমাত্র সদস্য, একমাত্র ছেলে ডেভিড ব্রতী বাড়ই।

স্বামীর মৃত্যুর পর তার ছেলেই এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করে যেতে সমর্থন দিয়ে গেছেন। এজন্য একাকী বোধ করলেও মায়ের কাজের প্রতি গর্বিত বলে জানান মি. ডেভিড।

"মা এফেক্টেড হবে কিনা এটা নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকি। মা'কে বলি যে, মা সাবধানে থাকো। মাস্ক পরো, স্যানিটাইজ করো। খারাপ লাগে যে সারাদিন একা একা থাকি। একা একা খাই, রান্না করি, বাসার সব কাজ করি। কিন্তু মা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। তাই কিছু মনে করি না।"

তেরেসা বাড়ই নাম রাখা হয়েছে মাদার তেরেসার নাম থেকে যিনি অবহেলিতদের সেবা দিতেন। তার অফিসে আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের ছবিও টানানো। এইসব কিছু থেকেই প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা নেন বলে জানান তেরেসা।

সেই অনুপ্রেরণা থেকেই কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর পর পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। এ কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকেও পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা।

English summary
Coronavirus: Teresa has been caring for Kovid patients since the beginning of the epidemic in Bangladesh
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X