চিনের গলার কাঁটা সেই জিনজিয়াং! উইঘুরদের প্রদেশে করোনা সংক্রমণের পিছনে কি বেজিংয়েরই হাত?
চিনে ফের ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। উইঘুর মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য জিনজিয়াংয়ে আবারও করোসা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চিনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ব জুড়ে এরই মধ্যে প্রাণ গেছে প্রায় ৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি।
চিনে নতুন করে করোনা সংক্রমণ
এদিকে ফের চিনে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোয় আতঙ্ক বেড়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকির। এছাড়া পূর্বাঞ্চল রাজ্য জেজিয়াং থেকে ভ্রমণ করে আসা একজনের শরীরেও কভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর জেরে উরুমকিতে করোনা আক্রান্তের খবরে সেখানকার বিমানবন্দরে ৮৯ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। শহরের যান চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
বেজিংয়ের পর করোনা সংক্রমণ জিনজিয়াংয়ে
জিনজিয়াংয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর। এই প্রদেশের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ জনগণের অর্ধেকই উইঘুর মুসলিম ও তুর্কি মুসলিম সম্প্রদায়ের। এদিকে এর আগে বেজিংয়ে ‘ক্লাস্টার' সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। সেখানে নতুন করে ৩৩০ জনের শরীরে করোনায় আক্রান্ত হন। তবে সেখানে নতুন সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ।
জিনজিয়াংয়ে চিনা অত্যাচার
এদিকে চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের কাহিনী বহু পুরোনো। জিনজিয়াং কাগজে কলমে স্বায়ত্তশাসিত হলেও, চিনের সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এই অঞ্চলের শহরগুলোর ভেতর দিয়েই গেছে সিল্ক রোড, তাই শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে জিনজিয়াং এর অর্থনীতি কৃষি ও বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। জন্ম নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে ধর্ম পালন করায় বাধা সহ একাধিক নির্যাতনের সম্মুখীন এখানকার মানুষরা। এর জেরে আন্তর্জাতিক মহলের মনে আশঙ্কা, চিন হয়ত এই প্রদেশের করোনা ঠেকাতে অতটা সচেষ্ট হবে না।
উইঘুরদের মরতে দেবে চিন?
উইঘুরদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এক মূল মন্ত্র হল তাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা। আর এই বিষয়ে চিনে সরকার বেশ কঠোর। দুইয়ের বেশি সন্তান থাকলে গরিব উইঘুরদের থেকে বড় পরিমাণে জরিমনা নেওয়া হয়। এর জেরে ১৯৪৯ সালে জিনজিয়াং এ যেখানে উইঘুর মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৯৫ শতাংশ, ১৯৮০ সালের মধ্যেই তা ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। এছাড়া ২০১৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে চিনের 'সন্ত্রাসবাদ' কেন্দ্রগুলিতে আটক রাখা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণে সেখানে মানুষ মরলে কী চিনা সরকারের কিছু যায় আসবে? উঠছে প্রশ্ন।